প্রতিবেদন : বাংলার ১১৩টি জুটমিলের প্রায় আড়াই লক্ষ শ্রমিকের (Bengal Workers) জন্য এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। জুটমিলের মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ এবং সেই সংগঠনের বাইরে থাকা জুটমিলের প্রতিনিধি ও ২৩টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যের শ্রম দফতরের মধ্যস্থতায় এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শ্রমমন্ত্রী, মলয় ঘটক এই চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন। এই বৈঠকের আগে আরও ৯টি ত্রিপাক্ষিক ও একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে। অবশেষে বুধবার সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাতে আনুমানিক সর্বস্তরে শ্রমিকদের বেতন আর সুযোগ-সুবিধার রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে।
চুক্তির মূল বিষয় হল—
নতুন যেসব শ্রমিক (Bengal Workers) জুটমিলের কাজে যোগ দেবেন তাঁদের মোট বেতন হবে মাসিক ১৪,০৬৬ টাকা যা আগের নতুন যুক্ত-হওয়া শ্রমিক যা পেতেন তার থেকে প্রায় ৩,৫৬২ টাকা বেশি। এই চুক্তির ফলে নতুন শ্রমিকপিছু কোম্পানির খরচ (সিটিসি) বাড়বে ৪,৫৫০ টাকা। সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকদের বর্তমান মোট মাসিক বেতন ১৬,৭১৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭,২৭১ টাকা হবে।
অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৫৫৩ টাকা। ২০১৯ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট মাসিক বেতন ১৩,৫৪৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪,১৩২ টাকা হবে। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৫৮৬ টাকা। ২০০২ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট মাসিক বেতন ১৫,২১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৫,৮৩৭ টাকা। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৬২৭ টাকা।
বর্তমানে জুট মিলের কর্মরত সমস্ত শ্রমিকের অ্যাডহক ১৩০ টাকা অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে। সমস্ত ধরনের শ্রমিকদের বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে। আগে সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকরা দৈনিক ৫০ পয়সা এবং নতুন শ্রমিকেরা ১৫ টাকা করে হাজিরা ভাতা পেতেন। নতুন চুক্তির মাধ্যমে সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকেরা দৈনিক ১ টাকা এবং ন্যূনতম দৈনিক ৪৮৫ টাকা বেতনে নিযুক্ত শ্রমিকেরা দৈনিক ২০ টাকা হাজিরা ভাতা পাবেন।
এই প্রথম জুট মিলের শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী চার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে— আনস্কিলড, সেমিস্কিলড, স্কিলড এবং হাইলি স্কিলড। এই চার ভাগে সমস্ত শ্রমিককে কাজের ধরন অনুযায়ী ভাগ করে তাদের নির্দিষ্ট ফিটমেন্ট ভাতা দেওয়া হবে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্টেট প্রোডাক্টটিভিটি কাউন্সিলের পরামর্শ নিয়ে শ্রমিকদের কাজের বোঝা, গ্রেড ও স্কেল নির্ধারণ করা হবে।
এদিন এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর পর্বে হাজির ছিলেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক তথা তৃণমূল জুট ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোমনাথ শ্যাম। সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত। তিনি সরকারের তরফে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জুট শ্রমিক স্বার্থে এই ঐতিহাসিক চুক্তি। যেখানে ২৩টি ইউনিয়ন সই করেছে। বাম আমলে এই শ্রমিকরা প্রত্যেকেই বঞ্চিত ছিলেন। না পেয়েছেন ন্যায্য ডিএ, না পেয়েছেন নায্য বেতন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নেওয়ার পর সবদিক থেকে তাঁদের স্বার্থরক্ষা হয়েছে। মালিকরাও তাঁদের বঞ্চিত করতে পারবেন না। আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ধরনের বৃদ্ধি ইতিপূর্বে কোনও দিন হয়নি। বাম আমলে অনেক ক্ষেত্রে জুট শ্রমিকদের বেতন কমেও গিয়েছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে কাজ করতে বদ্ধপরিকর এই চুক্তি সেটাই আবার প্রমাণ করল। জুট শ্রমিকদের জন্য যে ঐতিহাসিক বেতন চুক্তি হয়েছে বৃহস্পতিবার নব মহাকরণে তা বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রী মলয় ঘটক।
আরও পড়ুন- বাংলার গর্ব একসঙ্গে ৫টি জিআই স্বীকৃতি
নতুন শ্রমিকদের ৩৫৬২ টাকা বৃদ্ধি হয়ে মোট বেতন হবে ১৪,০৬৬ টাকা
সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকদের মাসিক বৃদ্ধি ৫৫৩ টাকা
২০১৯ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মাসিক বৃদ্ধি ৫৮৬ টাকা
২০০২ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মাসিক বেতন বৃদ্ধি ৬২৭ টাকা
শ্রমিকদের অ্যাড হক ১৩০ টাকা অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে
শ্রমিকদের বাড়িভাড়ার ভাতা বেড়ে ৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ হল
শ্রমিকরা এবার পিএফ, গ্র্যাচুইটি পাবেন