দেবর্ষি মজুমদার রামপুরহাট: নলহাটির তেজহাটি মোড় থেকে কিছুটা গিয়ে ক্ষুদ্র জনপদ মেহেগ্রাম। আজ যখন দশমীতে দেশের সর্বত্র দুর্গার নিরঞ্জন চলবে তখনই এই গ্রামে শুরু হবে দেবীর বোধন। এক রাতেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পুজো হবে। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে চলে আসছে এই রেওয়াজ। এখানে দুর্গার অন্য নাম মেহচণ্ডী। গ্রামদেবী হিসেবেও তিনি সারা বছর পূজিতা হন। কথিত, মেহচণ্ডী থেকেই মেহেগ্রাম নামের উৎপত্তি। মেহেগ্রামের মিত্ররায় পরিবারের এই পুজো রায়জি বাড়ির পুজো নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন-সংশোধনাগারে রাজ্য পুলিশের মানবিক উদ্যোগের সুফল, অপরাধ অতীত, ওদের প্রতিমা বাঙ্ময়
এই পুজো হয় পাঁচ শরিকের ২২ জন মিলে গঠিত ট্রাস্টির মাধ্যমে। ট্রাস্টির প্রবীণ সদস্য রঞ্জিতকুমার মিত্র রায় শোনালেন চার পুরুষ আগের পুজোর এক ইতিহাস। জগবন্ধু রায় তখন ধরমপুর-বল্লা স্টেটের জমিদারের সেরেস্তায় কাজ করতেন। তখন পুজো হত মাটির ঘর, তালপাতার ছাউনির মন্দিরে। পুজো হত খুব অনাড়ম্বরে। তাঁর ছেলে বক্রেশ্বর মিত্ররায় পাকা মন্দির নির্মাণ করেন। বক্রেশ্বরের ছেলে ভবেশ মিত্ররায়ের আমলে পুজো হত ধুমধাম করে। পুজোয় জাঁক আসে রামময় মিত্ররায়ের আমলে। তিনি আজিমগঞ্জ সিটির রাজা বিজয় সিং দুধোরিয়ার নায়েব ছিলেন। অন্য চার শরিক ডাঃ সুরথ মিত্ররায়, অপুত্রক হরি মিত্ররায়, কোলিয়ারিতে কর্মরত দামু রায় বা তারক রায়ের আমলেও জাঁকের হেরফের ঘটেনি। সেই ধারা আজও চলে আসছে। বক্রেশ্বর মিত্ররায়ের আমলে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। বাড়ির দুর্গাপ্রতিমার নিরঞ্জনের দুঃখ সহ্য করতে না পেরে তিনি সংজ্ঞা হারান।
আরও পড়ুন-দলের স্বার্থে আবার বসতে রাজি : শামি
সেই অবস্থায় তিনি দেবীর নির্দেশ পান ফের তাঁর বোধনের আয়োজন করার। মূর্তির নিরঞ্জন হলেও ঘটের মধ্য তিনি সারা বছর বিরাজমান থাকবেন বলে বক্রেশ্বরকে জানান। প্রতি আষাঢ় নবমীতে এই ঘট পাল্টানো হয়। মেহচণ্ডী-সহ ৯টি প্রস্তরমূর্তি নিয়ে নববিগ্রহের পুজো যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। এই মেহচণ্ডী মন্দিরের মাটি নিয়েই গ্রামের বাকি তিন পারিবারিক পুজোর পত্তন হয়। মেহচণ্ডীর পুজো শুরু হয় বোধনের দিন ছাগবলি দিয়ে। চলে চণ্ডীপাঠ। নবমীতে গ্রামের মানুষকে লুচি, মিষ্টি, আট ভাজা দিয়ে ফলাহার সেবা করানো হয়। সেদিন অন্নভোগ হয় না। দশমীর দিন গ্রামের পাশে ব্রাহ্মণী নদীর শাখা নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর শুরু হয় এক রাতে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমীর মেহচণ্ডী দুর্গার পুজো।