নকিব উদ্দিন গাজি, জয়নগর: ভোজন রসিক বাঙালি শীতের মরশুমে জয়নগরের মোয়া নিয়ে বিশেষ আবেগপ্রবণ। শীতে মোয়া মুখে না-দিলে যেন মন ভরে না বাঙালির। এই মোয়ার জন্মস্থান নিয়ে বহুকাল ধরেই রয়েছে নানা বিতর্ক। মোয়া (Jaynagarer Moa) বলতেই বাঙালি বোঝে জয়নগর। কিন্তু সত্যিই কি তার উৎপত্তিস্থল সেখানে?
মিষ্টান্ন বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, মোয়ার নামের সঙ্গে জয়নগর (Jaynagarer Moa) জড়িয়ে থাকলেও, এর আসল জন্মভূমি বহড়ু। বলা যেতে পারে বহড়ু নামক গ্রামই হল জয়নগরের মোয়ার আঁতুড়ঘর। ‘রায়মঙ্গল’ কাব্যে যে ‘বড়ুক্ষ’র উল্লেখ লক্ষ্য করা যায়, তারই বর্তমান নাম বহড়ু। এই গ্রামেই শৈশব কেটেছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের। গণেশ দাস, বাবলু ঘোষ ও রঞ্জিত ঘোষদের মতো মিষ্টান্ন বিশেষজ্ঞরা বলেন, বহড়ু গ্রামের জনৈক যামিনীবুড়ো এই মোয়ার জনক। কথিত আছে, তিনি নিজের জমিতে কনকচূড় ধান ফলান। পরে সেই ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া তৈরি করে কোনও এক অনুষ্ঠানে তা পরিবেশন করেন। সেই অনুষ্ঠানে খোদ হাজির ছিলেন স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি সেই মোয়ার খুব সুখ্যাতি করেন। এরপরই লোকমুখে জনপ্রিয়তা লাভ করে বহড়ুর মোয়ার। এরপর থেকেই মোয়ার চাহিদা বাড়তে থাকে। ব্যবসায়িক উন্নতি ঘটতে থাকে মোয়া প্রস্তুতকারকদের। যামিনীবাবুর মোয়ায় খই ও নলেন গুড় ব্যতীত আর বিশেষ কিছু ছিল না। এই মোয়াকেই পরবর্তীকালে নতুন রূপে ও স্বাদে প্রস্তুত করেন জনৈক পূর্ণচন্দ্র ঘোষ (বুঁচকিবাবু) ও নিত্যগোপাল সরকার। ১৯২৯ সালে তাঁরা বহড়ুতে একটি মোয়া তৈরির দোকান স্থাপন করেন। এইভাবেই যাত্রা শুরু হয় মোয়ার। সেইসময় প্রাচীন জনপদ বহড়ুতে কোনও বাজার ছিল না। কাজেই মোয়া প্রস্তুতকারকদের তা বিক্রি করতে যেতে হত জয়নগরের হাটে। এর ফলেই ক্রেতাদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে জয়নগরের মোয়ার নাম।