প্রতিবেদন : বৃহস্পতিবার রাজ্যবাসী সাক্ষী থাকল এক সার্বিক উন্নয়ন মডেলের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা-উদ্যোগে রাজ্যবাসীর জন্য একগুচ্ছ উদ্যোগ ও আর্থিক বরাদ্দ জানান দিল, গড়ে উঠছে নতুন বাংলা। যেখানে সমাজের সব শ্রেণির সব মানুষের জন্য থাকছে সমান অধিকার ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য। শত বঞ্চনা উড়িয়ে দিয়ে এই বাজেটে রয়েছে একের পর এক বড় চমক। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ হওয়া রাজ্য বাজেট আক্ষরিক অর্থেই মা মাটি মানুষের সার্থক বাজেট। কেন্দ্রের ভয়াবহ বঞ্চনা সত্ত্বেও রাজ্যবাসীর জন্য দু’হাত উপুড় করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভেবেছেন সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কথা। পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির আর্থিক অধিকার বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়-বরাদ্দ, বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি-সহ বাংলার মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার জন্য, তাঁদের সাহস জোগানোর জন্য, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই বাজেট তাই সবদিক থেকে আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছে। এত বছর পর রাজ্যবাসী দেখল মানুষের জন্য ভাবনা কাকে বলে, আমজনতার বাজেট কাকে বলে।
আরও পড়ুন-মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্রসাথী প্রকল্প
রাজনৈতিক অভিসন্ধি ও চক্রান্তের জন্য গোটা দেশের মধ্যে বাংলাকে ভয়াবহ বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্র দেয়নি। এত বঞ্চনার মধ্যেও নতুন বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার রয়েছে এই বাজেটে। বহু ভাষাভাষী সম্প্রীতির বাংলায় মানুষের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সময়ের দাবি মেনে আর্থিক অগ্রগতির কথা মাথায় রেখে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার, প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। ইকোনমিক করিডর থেকে নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি কর্মশ্রী প্রকল্প আনছে রাজ্য
এদিন বিকেল তিনটেয় বাজেট পড়তে শুরু করেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এক ঘণ্টা এই বাজেট বক্তৃতায় ছিল পরপর চমক। অভাবনীয় সব ঘোষণা। অর্থমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে এখন থেকে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১০০০ টাকা পাবেন মহিলারা। আর জনজাতি মহিলাদের জন্য ভাতা বাড়িয়ে করা হল ১২০০ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে এই বর্ধিত ভাতা চালু হবে। মে মাস থেকে হাতে পাবেন এই টাকা। এর জন্য রাজ্য সরকারের ১২০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ভাতা বেড়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও। তাঁরা এখন থেকে ১০০০ টাকা বাড়তি পাবেন। এর জন্য খরচ হবে ১৮০ কোটি টাকা। এখন থেকে ২০ শতাংশ সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এ-ছাড়াও তাঁদের অবসরকালীন সময়ের যে আর্থিক সুবিধা পেতেন তা বেড়ে হল ৫ লক্ষ টাকা। এমনকী তাঁরা এবার থেকে বোনাস পাবেন ৫৩০০ টাকা করে।
আরও পড়ুন-একশো দিনের কাজ বকেয়া মেটাতে বরাদ্দ ৩৭০০ কোটি
বাজেটে বলা হয়েছে, বাংলায় ১ কোটি ২৭ লক্ষ মানুষ দারিদ্রের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছন। রাজ্যে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ৪৯ শতাংশ কমেছে। মৎস্যজীবীদের জন্য নতুন প্রকল্প ‘সমুদ্রসাথী’ ঘোষণা হল এই বাজেটে। মে-জুনের দুটি মাস মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যেতে পারেন না নিষেধাজ্ঞার কারণে। এই দুটি মাস রাজ্য সরকারের তরফে নথিভুক্ত মৎস্যজীবীদের ৫ হাজার টাকা করে দেবে। এ-ছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হল। এতে ২৮ লক্ষের বেশি শ্রমিক উপকৃত হবেন। চুক্তিভিত্তিক সরকারি কর্মচারীদের নিরাশ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। বাজেটে তাঁদের জন্য আর্থিক বরাদ্দ রয়েছে। এখন থেকে চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন যথাক্রমে ৩০০০ ও ৩৫০০ টাকা বাড়ানো হল। এতে ৫০ হাজার কর্মী উপকৃত হবেন। একই সঙ্গে সার্বিকভাবে ফের ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা হল এই বাজেটে। হ্যান্ডলুম ও খাদি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাঁতশিল্পীদের জন্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হল। এতেও সরকারের কয়েকশো কোটি টাকা করচ হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০০ দিনের কাজে বঞ্চিতদের যে বকেয়া রাজ্য সরকার মেটাবে বলে ঘোষণা করেছে তাতে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ হবে। বাজেটে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এখন থেকে দরিদ্রদের ৫০ দিনের কাজ দেবে রাজ্য সরকার। যেখানে কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা আজও আটকে রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী গঙ্গাসাগরের উপর সেতু নির্মাণের জন্য কেন্দ্রকে বহুবার বলা হয়েছে। তাতেও কর্ণপাত করেনি তারা। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মুড়িগঙ্গার উপর সেতু (গঙ্গাসাগর) তৈরি করবে রাজ্য সরকার। এতে প্রাথমিকভাবে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ বেড়েছে মিড-ডে মিল রাঁধুনি ও তাঁদের সহায়কদেরও। ১০০০ টাকা থেকে তা হয়েছে ১৫০০ টাকা। রাজ্যের ৬টি নতুন ইকনমিক করিডর হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী দিনে সরকারের বিভিন্ন দফতরে অন্তত ৫ লক্ষ কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এ-ছাড়াও কৃষকদের জন্য, বিশেষ করে আলুচাষিদের জন্য নতুন ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পে আলুচাষিদের প্রিমিয়াম দেবে রাজ্য সরকারই। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত আর্থিক বছরের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ১০ শতাংশ। বিভিন্ন ধরনের কারিগর ও শিল্পীদের জন্যও বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ ও কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখেছে সরকার। এ-ছাড়াও রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নেরও ব্যাপক আর্থিক বরাদ্দ রেখেছে রাজ্য সরকার।