নয়াদিল্লি : বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও যুক্তি অগ্রাহ্য করে সংখ্যার জোরে অপরাধী শনাক্তরণ বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ করিয়েছে মোদি সরকার। বিলটি নিয়ে বিরোধী শিবিরের সম্মিলিত সমালোচনা এবং উদ্বেগের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, ডিএমকে, বাম, এনসিপির মতো বিরোধী দল থেকে শুরু করে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বিএসপিও বিলটির পরিকল্পিত অপব্যবহারের আশঙ্কা করেছে। আরও আলোচনা চেয়ে বিলটি এখনই পাশ না করিয়ে আগে সংসদের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিলেন বিরোধী সাংসদরা। স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট এবং সুপারিশ খতিয়ে দেখে তবেই বিলটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলে দাবি করেন তাঁরা। যদিও বিরোধীদের দাবি ও যুক্তি উড়িয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় গায়ের জোরে বিতর্কিত বিলটি পাশ করায় সরকারপক্ষ।
আরও পড়ুন-আর জি করে প্রসূতিদের বিশেষ ব্যবস্থা
এখন একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই বিলে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব কী কী রয়েছে?
এই বিলটি পাশ হওয়ার পর আইনে পরিণত হলে যেকোনও অপরাধী, আটক বা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির শারীরিক নমুনা, চোখের মণি, হাত ও পায়ের আঙুলের ছাপ থেকে শুরু করে শারীরিক নমুনা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য ৭৫ বছর পর্যন্ত সংগ্রহ করে রাখতে পারবে সরকার।
সিআরপিসি থেকে পৃথক এটিই প্রথম বিল। সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অধিকারিক এফআইআর দায়ের করতে পারেন, অথচ এই বিলে নমুনা, মাপজোক নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে হেড কনস্টেবলকে।
এই বিলে উল্লিখিত প্রস্তাব অনুযায়ী ডিএনএ টেস্ট করে নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন-চলে গেলেন চিবুজোর, শোকার্ত চিমা-এমেকা
১৯২০ সালের পুরনো আইন অনুযায়ী, বিশেষ শ্রেণির বন্দিদের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, পায়ের ছাপ নেওয়া হত। নতুন বিলে যেকোনও অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আটক হওয়া ব্যক্তির চোখের মণি, পায়ের ছাপের মতো নানা শারীরিক নমুনা সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও তাদের হাতের লেখার নমুনা, স্বাক্ষরের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে পুলিশ। অর্থাৎ কেউ অপরাধী প্রমাণ হওয়ার আগেই তার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেবে সরকার। বিরোধীদের আশঙ্কা, এই বিলটিকে হাতিয়ার করে সরকারের সমালোচক এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করবে মোদি সরকার। গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে এটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে। হেনস্থার ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের দমন করার ক্ষেত্রে এই কালাকানুন ব্যবহার করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। ব্রিটিশ আমলের থেকেও মোদি সরকারের আনা বিলটি বেশি দমনপীড়নমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী সাংসদরা।
তাঁদের বক্তব্য, অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই কোনও অভিযুক্তের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায় বিজেপি সরকার। এই বিল সবরকমভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের পরিপন্থী ও দানবীয়। কেন্দ্রের সমালোচকদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতেই এই বিল। বিরোধীদের অভিযোগ, যেভাবে ইউএপিএ বিলের অপব্যবহার করা হচ্ছে, সেভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বিলেরও অপব্যবহার হতে পারে। একইসঙ্গে এই বিল মৌলিক অধিকার ভঙ্গকারী। এটি যেকোনও বিরোধিতা দমনের সরকারি অস্ত্র হয়ে উঠবে। বিলটিতে একাধিক বিষয়ে ব্যাখ্যাও খুবই অস্পষ্ট।