প্রতিবেদন : এতদিন প্রিয় দলকে সমর্থন করতে মাঠে যেতেন, চোখের কোনে জল নিয়ে বাড়ি ফিরতেন সমর্থকরা। অবশেষে চল্লিশ বছরের শাপমুক্তি। মহমেডানের মরা গাঙে বান এল। দীর্ঘ চার দশক পর কলকাতা লিগের রং সাদা-কালো। সৌজন্যে ত্রিনিদাদ টোবাগোর স্ট্রাইকার মার্কাস জোসেফ। বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকারের করা একমাত্র গোলে রেলওয়ে এফসি-কে হারাল মহমেডান। এই নিয়ে ১২ বার কলকাতা লিগ ঢুকল মহমেডান তাঁবুতে। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ ফাইনালে অবশ্য সাদা-কালো শিবিরের ঘুম ছুটিয়ে দিল রেল। ম্যাচের তিন মিনিটেই মার্কসের গোলে এগিয়ে যায় মহমেডান। এরপর গোল শোধের মরিয়া চেষ্টায় ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত দুর্দান্ত লড়াকু ফুটবল উপহার দিলেন এলভিন, সুকুরাম সর্দার, তন্ময় দাস, শুভেন্দু মান্ডিরা। গোলের সুযোগও হারাল। বিক্ষিপ্ত আক্রমণে গোলের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল মহমেডানও। ব্রেন্ডন, ফৈয়াজরা কাজে লাগাতে পারেননি। ট্রফি না জিতলেও রেলের এই হার অগৌরবের নয়। মনে রাখার মতো লড়াই করল তারা। এদিন ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে যুবভারতী ভরিয়েছিলেন মহমেডান সমর্থকরা। এতদিনের শাপমুক্তি ঘটিয়ে উৎসবে মাতলেন তাঁরা। শেষ বাঁশি বাজার পরই গ্যালারির ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়লেন সমর্থকরা। মার্কাস, নিকোলা, ফৈয়াজ, আজহাররা সমর্থকদের সঙ্গেই উৎসবে মাতলেন। ক্লাব কর্তারাও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ট্রফিহীন ক্লাবে অবশেষে এল ট্রফি। তা-ও আবার চার দশক পর।
আরও পড়ুন : দ্রাবিড় কোচ হওয়ায় অবাক পন্টিং
উৎসবের মধ্যে খেলোয়াড়দের জন্য পাঁচ লাখ টাকা ইনসেনটিভ ঘোষণা করলেন কর্তারা। এর আগে মাঠেই লিগ চ্যাম্পিয়নের ট্রফি ও মেডেল কোচ, ফুটবলারদের হাতে তুলে দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। লিগ জিতে পুরস্কারমূল্য হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকা পেল মহমেডান। লিগের সেরা ফুটবলার হলেন মহমেডান অধিনায়ক শেখ ফৈয়াজ। লিগের সেরা গোলকিপার মহমেডানেরই মিঠুন সামন্ত। সন্ধ্যার মুখে যুবভারতী থেকে হুড খোলা বাসে ট্রফি নিয়ে ময়দানে ক্লাব তাঁবুতে এল চ্যাম্পিয়নরা। সমর্থকদের সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠেন ফুটবলাররা। ৪০ বছর আগের ইতিহাস উজ্জ্বল। সে বার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, মানস ভট্টাচার্য, অলোক মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে কলকাতা ফুটবলে বিপ্লব এনেছিল শতাব্দী প্রাচীন মহমেডান। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে পিছনে ফেলে সে বার কলকাতা লিগ জয়ের ইতিহাস আজও চিরস্মরণীয়। কিন্তু দুই প্রধানের চাপে ক্রমশই যেন আঁধার নেমেছিল ১৩০ বছরের প্রাচীন ক্লাবে। তৃতীয় প্রধানের তকমাও যেন সরে যেতে বসেছিল। অবশেষে ‘৮১-র স্মৃতি ফিরিয়ে মুঠোয় কলকাতা লিগ। ময়দানে নয়া ইতিহাস।