চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের উপরে তুলে ঝাঁকিয়ে নিলেন আন্তনিও লোপেজ হাবাস। সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে তাঁর দল ওড়িশা এফসি-কে ৩-২ গোলে হারিয়ে আইএসএল ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছে। শনিবার যুবভারতীতেই ফাইনালে মুম্বই অথবা গোয়া। তাঁর ফুটবলাররা মাঠেই একে অপরকে জড়িয়ে সেলিব্রেশনে মেতে উঠেছেন। দুই গোলদাতা জেসন কামিন্স ও সুপার সাব সাহাল আব্দুল সামাদ সতীর্থদের নিয়ে গ্যালারির সামনে গিয়ে দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার অসহনীয় গরম উপেক্ষা করে যুবভারতীর ৬২ হাজার দর্শক তখন মোবাইলের আলো জ্বেলে কামিন্স, সাহালদের অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত। গ্যালারিতে সবুজ-মেরুন আবির, আতশবাজি, গান আর শব্দব্রহ্মে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে যুবভারতী আবার মোহনভারতী। গ্যালারির শব্দব্রহ্মের কাছেই যেন ধরাশায়ী ওড়িশা। আগের ম্যাচের ভিলেন হেক্টর আটকে দিলেন রয় কৃষ্ণকে। দুর্দান্ত খেলে সাহালের গোলের পাস বাড়িয়ে ম্যাচের সেরা হলেন মনবীর সিং। অপর গোলদাতা কামিন্স ম্যাচের শেষে বললেন, ‘‘আমাদের সমর্থকরাই ম্যাচের সেরা। ওরাই উজ্জীবিত করে ম্যাচ জিততে।’’
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
আইএসএলের ‘লাকি’ কোচ হাবাসের হাত ধরে প্রথমবার লিগ-শিল্ড জয়ের ১৩ দিন পর আরও এক খেতাবের সামনে মোহনবাগান। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের সামনে আইএসএল খেতাব ধরে রেখে ত্রিমুকুট জয়ের হাতছানি। ফাইনালে ওঠার জন্য মোহনবাগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
খেলা শুরুর আগে যুবভারতীর একটি বিশাল টিফোতে লেখা, ‘টার্ন এভরি সেটব্যাক ইন টু কামব্যাক’। প্রত্যাবর্তনই বটে! কোনও অতিরিক্ত সময় বা টাইব্রেকার নয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ওড়িশাকে পরিষ্কার ২-০ গোলে হারিয়ে ভুবনেশ্বরে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে হারের প্রতিশোধ নিয়েই ফাইনালে চলে গেল মোহনবাগান। প্রথম লেগে ১-২ হারায় গোলের গড়ে সবুজ-মেরুনের পক্ষে খেলার ফল ৩-২।
কৃষ্ণকে আটকাতে চার ব্যাকে যে ফিরবেন না, ম্যাচের আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন হাবাস। ফর্মেশন না বদলেই শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলে বাজিমাত করার চেষ্টা করেন স্প্যানিশ কোচ। লাল কার্ডের নির্বাসন থাকা আর্মান্দো সাদিকুর জায়গায় জেসন কামিন্সকে প্রথম একাদশে ফেরান মোহনবাগান কোচ। শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গোলের লকগেট খুলে ফেলে সবুজ-মেরুন। কিন্তু কামিন্স ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন বল। কয়েক মিনিটের মধ্যে সুযোগ নষ্ট করেন অনিরুদ্ধ থাপাও।
আরও পড়ুন-বড় জয় চেন্নাইয়ের
অপেক্ষা অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়নি মোহনবাগানের। ২২ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় তারা। বক্সের বাইরে থেকে দিমিত্রির জোরালো শট অমরিন্দর বাঁচালে ফিরতি বল বাঁ-পায়ের শটে জালে জড়িয়ে দেন কামিন্স। মরশুমের শুরুতে গোল পাচ্ছিলেন না বলে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। আইএসএলে এগারো নম্বর গোল করে জবাব দিলেন অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার। সেমিফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে তখন গোলের গড় ২-২।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া হয় মোহনবাগান। ৫৪ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে ফাঁকায় দাঁড়ানো কামিন্সকে মাইনাস না করে নিজেই গোল করতে গিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন মনবীর। মিনিট তিনেক পর মনবীরের সেন্টার থেকে থাপার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বিতীয় গোলের খোঁজে আক্রমণে তেজ বাড়াতে ৭০ মিনিটে থাপাকে তুলে ফিট সাহালকে নামান বাগান সারথি। অফ কালার লিস্টনের পরিবর্তে কিয়ান নাসিরি ও আনোয়ারের জায়গায় দীপেন্দুকে নামান হাবাস। ওড়িশা তখন বারবার প্রতি আক্রমণে উঠে সবুজ-মেরুন রক্ষণকে চাপে ফেলছিল। হেক্টরের নেতৃত্বে মোহনবাগান রক্ষণ এদিন তেমন ভুল করেনি। সংযুক্ত সময়ে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৯১ মিনিটে সুপার সাব সাহালের গোল। মনবীরের বাড়ানো বল মনবীরের মাথা ছুঁয়ে জালে জড়িয়ে যায়। প্রখর গরমের মধ্যে সংযুক্ত সময়ের বাকি সাত মিনিটে গোলশোধ করার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছিল লোবেরার ছেলেরা।