প্রতিবেদন : আক্ষরিক অর্থেই যাকে বলে বিশ্বমানের উদ্বোধন। ডায়মন্ড হারবারে এমপি কাপের জমকালো উদ্বোধনকে এ ছাড়া আর অন্য কোনও ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। একটা ফুটবল টুর্নামেন্টকে ঘিরে এ ধরনের উন্মাদনা শুধু এ রাজ্য কেন, এ দেশে আর হয়েছে বলে কষ্ট করেও কেউ মনে করতে পারলেন না। শুক্রবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘কিক অফ’ হল সেই এমপি কাপের। গোটা আয়োজনের নেপথ্য নায়ক ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনার জেরে বন্ধ থাকার পর এ বছর ফের শুরু হল এই ব্যতিক্রমী ফুটবল টুর্নামেন্ট। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের টুর্নামেন্ট। উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে সাংসদ বললেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার থেকে একটি দল গড়া হবে যারা কলকাতার প্রথম ডিভিশনে খেলবে। সাংসদ যখন এই ঘোষণা করছেন, তখন ডায়মন্ড হারবারের এসডিও মাঠে উদ্বেল হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী জনতা। ভাষণে স্থানীয় মানুষের কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন, যে ক’দিন ধরে খেলা হবে, এ ক’দিন ডায়মন্ড হারবারে কোনও রাজনীতি হবে না, শুধু ফুটবল খেলা হবে। রাজনীতি ভুলে, এ ক’দিন সবাই মাঠে আসুন। মাঠের লড়াই মাঠে থাকুক। হার-জিত থাকবে। ফুটবল তো বাঙালির প্রাণের খেলা। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রেখে ফুটবল উপভোগ করুন। সেই সঙ্গে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ফুটবলকে সামনে রেখে ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর বার্তাও দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন: মোদির রাজ্যের ‘আমিষ’ কীর্তি, কে কী খাবে আপনারা ঠিক করার কে? কোর্ট
ডায়মন্ড হারবারের সাতটি ব্লকের ১২৮টি ফুটবল টিমকে নিয়ে আগামী ২২ দিন ধরে চলবে এই টুর্নামেন্ট। খেলা হবে ১৭টি মাঠে। উদ্বোধনী ম্যাচে এদিন মুখোমুখি হয়েছিল ফলতা ও ডায়মন্ড হারবার। ফলতার অধিনায়কত্ব করেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার ও রাজ্যের মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। উল্টোদিকে ডায়মন্ড হারবারের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ ও গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। ফাইনালে দুটি টিমের নেতৃত্ব দেবেন বাইচুং ভুটিয়া এবং অ্যালভিটো ডি কুনহা।
এমপি কাপের উদ্বোধনকে ঘিরে এদিন দুপুর থেকেই কার্যত চাঁদের হাট বসেছিল মাঠে। রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ব্রাত্য বসু, ইন্দ্রনীল সেন, সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, ডাঃ শান্তনু সেন, বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, রাজ চক্রবর্তী, পান্নালাল হালদার, দিলীপ মণ্ডল, অশোক দেব, পার্থ ভৌমিক, রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষেরা। সেই সঙ্গে ছিলেন অ্যালভিটো ডি কুনহার মতো ফুটবল জগতের তারকারা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, দলের অভিষেক আমাদের প্রিয় সাংসদ, সবার আবেগের নেতা। ফুটবল খেলাকে নিয়ে এমন উদ্যোগ অভাবনীয়। একটা জাতি শারীরিক ভাবে কতটা সক্ষম সেটা ফুটবলের উন্নয়ন দেখলে বোঝা যায়। তাই এই উদ্যোগকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে সাধুবাদ জানাই। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার ভাইয়ের মতো। আমাদের নেতা। যেভাবে তিনি কাজ করছেন ও করাচ্ছেন, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। প্রতিবার এখানে আমি আসি। আমার বিশ্বাস এভাবেই বাংলা একদিন বিশ্ব বাংলায় পরিণত হবে। খেলার মধ্যে দিয়ে সবাইকে নিয়ে, সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে এমন আয়োজন সত্যি ভাবাই যায় না। আপনারা বছরের পর বছর যেন এমন সাংসদই পান। সুজিত বসুর গলাতেও আবেগের ছোঁয়া। বলেন, যুব সমাজের জন্য এমন আয়োজন দুর্দান্ত। প্রতি বছর এই টুর্নামেন্টের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। ডায়মন্ড হারবারের একটি টিম আগামী বছর কলকাতা লিগে খেলবে, সবার মতো আমিও সেই আশা করি। স্বামী বিবেকানন্দের কথা স্মরণ করে অরূপ বিশ্বাস বলেন, অভিষেক আমার থেকে বয়সে ছোট। কিন্তু ওকে দেখে শিখতে হয়। এমন নিঁখুত আয়োজন করা খুব সহজ কথা নয়। টুর্নামেন্টের সাফল্যও কামনা করেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ভারতবর্ষের এমপি কাপটা শুরু করে দিয়েছেন অভিষেক। ফাইনাল ২০২৪। ত্রিপুরায় পাঠিয়েছেন দলকে। দু’মাসে ২৪% ভোট। সামনে ক’টা মাস। দেখবেন ২০২৩ সালে ত্রিপুরাতেও তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার তৈরি হবে। আর আগামী দিনে দেশে যে নতুন সরকার আসবে তার ভরকেন্দ্র হবে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই খেলাটাও শুরু করে দিয়েছেন অভিষেক। অনুষ্ঠানের বাকি বক্তারাও এই উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এদিন ফুটবলে শট মেরে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতে গানে ময়দান মাতিয়ে দেন মিকা সিং।