প্রতিবেদন : কলকাতা পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। রাজ্যের হাতে থাকা পুলিশ বাহিনী দিয়েই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট করানো সম্ভব বলে রাজ্যপালকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার রাজ্য পুলিশের তরফে কলকাতা পুরভোটে বাহিনী নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টও রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরসভা ভোটের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে রাজভবনে তলব করেন। তবে কমিশনার নিজে রাজভবনে যাননি। তাঁর বদলে মুখ বন্ধ রিপোর্ট বেলা আড়াইটে নাগাদ রাজভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সেখানে জানানো হয়েছে এই মুহূর্তে পুরসভা ভোট পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে না। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আজ সিআইএসএফ-এর ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভোট করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন হলে কত সংখ্যক বাহিনী পাওয়া সম্ভব তা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যপালকে দেওয়া রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে মোট ৩২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা পুলিশ থাকবে ২৭ হাজার এবং রাজ্য পুলিশ থাকবে ৫ হাজার। শেষবার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে এই একই সংখ্যক বাহিনী ছিল বলে খবর রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে। তবে যেহেতু এবার বুথের সংখ্যা বেড়েছে তাই এবার পুলিশের সংখ্যাও বাড়বে। প্রতিটি বুথে একজন সাব-ইন্সপেক্টর এবং একজন অতিরিক্ত সাব-ইন্সপেক্টর থাকবেন। তার সঙ্গে দু’জন সশস্ত্র কনস্টেবল থাকবেন। লাইন সামলানোর জন্য লাঠিধারী কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে। প্রতিটি বরোতে একটি কুইক রেসপন্স টিম থাকবে যাতে তারা যেকোনও ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে। এই কিউ আর টি গুলি কলকাতা পুলিশের র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স দ্বারা পরিচালিত হবে। নির্বাচনে সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশ ব্যবহার করা হবে না।
আরও পড়ুন : বিএসএফ থেকে শিল্প, সব দিকে নিয়ে কড়া নজর মুখ্যমন্ত্রীর
এদিকেদ্রুত ভোট চাই। ভোট করাতে দেরি করা যাবে না। এবার এই দাবিতেই সরব হলেন হাওড়া শহরের বাসিন্দারা। দ্রুত ভোট চেয়ে এবার হাওড়া পুর এলাকায় গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত ওই দাবি নির্বাচন কমিশন ও প্রয়োজনে রাজ্যপালের কাছেও পেশ করা হবে। ইতিমধ্যেই হাওড়ায় ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা না হওয়ায় রাজ্যপালকেই দায়ী করেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘‘হাওড়া থেকে বালিকে পৃথক করার বিলে রাজ্যপাল সই না করাতেই ভোট করানো যাচ্ছে না।’’ এই ব্যাপারে সরব হয়েছেন হাওড়া জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বও। তৃণমূলের হাওড়া সদরের সভাপতি কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যপালের টালবাহানার জন্যই শহরের মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। আমরা অবিলম্বে হাওড়া কর্পোরেশন ভোট করার দাবি জানাচ্ছি।’’ যুব তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৈলাস মিশ্র বলেন, ‘‘হাওড়া ও বালির নাগরিক পরিষেবার মান আরও বাড়াতেই বালিকে হাওড়া কর্পোরেশন থেকে আলাদা করে পৃথক পুরসভা করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য রাজ্যপালকে পাঠানো সত্ত্বেও তিনি অজ্ঞাত কারণে এই বিলে সই করছেন না। তাঁর এই খামখেয়ালি আচরণের জন্যই হাওড়া ও বালির মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না।’’ মধ্য হাওড়া তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সুশোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপালের চেয়ারে বসে বিজেপি নেতাদের মতো আচরণ করে উনি আসলে ভোটটাই করতে দিতে চাইছেন না। ভোট হলে বিজেপি নিশ্চিত পর্যুদস্ত হবে বুঝতে পেরেই রাজ্যপাল বিলে এখনও সই না করে ভোট আটকে দিতে চাইছেন। মানুষই এই ঘটনার যোগ্য জবাব দিয়ে দেবেন।’’ এদিকে অবিলম্বে ভোট চেয়ে হাওড়ায় গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় চেয়ার-টেবিল পেতে হাওড়ায় দ্রুত পুরভোট করার দাবিতে ওই গণস্বাক্ষর অভিযান চলবে। হাওড়া শহরের সমস্ত স্তরের নাগরিকরাই দ্রুত ভোটের দাবিতে সরব হচ্ছেন। শহরবাসীর জিজ্ঞাসা, হাওড়াকে বালি থেকে পৃথক করার বিলে রাজ্যপাল সই না করে কেন এখানকার পুরভোট আটকে রাখছেন? শীঘ্রই হাওড়ায় পুরভোটের দিন ঘোষণা করতে হবে বলে নির্বাচন কমিশনের কাছেও দাবি জানাচ্ছেন শহরবাসী। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে হাওড়া কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপর লোকসভার ভোট এবং গত প্রায় দু’বছর কোভিডের কারণে পুরভোট করা যায়নি। এখন রাজ্য সরকার যখন কলকাতার সঙ্গে একই দিনে হাওড়াতেও পুরভোট করাতে উদ্যোগী হল তখন রাজ্যপালের কারণেই তা কার্যকর করা যাচ্ছে না বলে শহরবাসীর অভিযোগ। এবার রাজ্যপালের এই টালবাহানার প্রতিবাদে এবং দ্রুত হাওড়ায় পুরভোট করার দাবিতে গণস্বাক্ষর করে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছেন শহরবাসী। প্রয়োজনে এই দাবি রাষ্ট্রপতির কাছেও পেশ করা হবে বলে হাওড়া শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন।