সংবাদদাতা, তমলুক : বর্তমানে মাশরুম অন্যতম এক জনপ্রিয় খাদ্যবস্তু। এর পুষ্টিগুণ অপরিসীম। আবার নিরামিষ খাদ্য তালিকায় থাকলেও আমিষ ও নিরামিষ দুই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের মানুষই মাশরুম পছন্দ করেন। তাই সারা বছরই মাশরুমের চাহিদা রয়েছে বাজারে। আর মাশরুম চাষের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতী, এমনকী গৃহবধূরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আর এই কাজে গ্রামের গৃহবধূ ও বেকার যুবক-যুবতীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এর জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। সরকারি প্রশিক্ষণ পেয়ে মাশরুম চাষ করে গ্রামের মহিলারা সংসারের আর্থিক হাল ফেরাচ্ছেন।
আরও পড়ুন-প্রশাসনিক বৈঠক করতে ৩১শে মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এর জন্য কোনও উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। ঘরের পাশের অব্যবহৃত জায়গা বা বাড়ির মধ্যেও মাশরুম উৎপাদন করা যায় সহজেই। তাই বেকার যুবক-যুবতী ও গৃহবধূরা সংসারের সমস্ত কাজের পাশাপাশি বাড়িতেই মাশরুম চাষ করে নিজেদের স্বনির্ভর করছেন। তমলুক ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছু গৃহবধূ প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করছেন। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এঁরা। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে মাশরুম চাষ করছেন। মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন ধানের খড়। খড় দিয়েই তৈরি হয় মাশরুম চাষের বেড। খড়ের সঙ্গে প্রতিটি স্তরে দেওয়া হয় মাশরুমের বীজ। এক একটি বেড তৈরি করতে খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর প্রতিটি বেড থেকে মাশরুম পাওয়া যায় গড়ে তিন থেকে চার কেজি। যার বাজার মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ফলে মাশরুম চাষ করে ভালই মুনাফা করছেন মহিলারা। সিএডিসি প্রো০জেক্ট ডিরেক্টর উত্তমকুমার লাহা জানান, মাশরুম চাষ বেকার যুবক-যুবর্তী ও গৃহবধূদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে। তাঁদের বিকল্প কাজের দিশা দেখাতে পারবে। মাশরুম চাষের মধ্য দিয়ে একজন বেকার যুবক বা যুবতী মাসে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবেন। গৃহবধূরা বাড়িতে বসে না থেকে এই কাজ করলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন।
আরও পড়ুন-মঙ্গলপুরে ২২০ কেভি নয়া বিদ্যুৎ স্টেশনের উদ্বোধন
তমলুকের এক মহিলা জানান, মাশরুম চাষ অনেকটাই সহজ। সারা বছর মাশরুম চাষ হলেও শীতের সময় সবথেকে বেশি চাষ হয়। মাশরুম চাষের জন্য প্রথমে ধানের খড়কে ছোট ছোট করে কেটে চুনমিশ্রিত জলে ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর জল থেকে হেঁকে ছায়া ঘেরা জায়গায় শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর সেই খড়গুলোকে প্লাস্টিক বেডে ভরা হয়। ওই বেডের চারটি স্তরে মাশরুম বীজ ফেলে দেওয়া হয়। ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে মাশরুম ফুটতে শুরু করে। এভাবেই মাশরুম চাষ বাংলার গ্রামগুলির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলছে।