অসীম চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: খনি ও শিল্প মিলিয়ে শুধু পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেই ২৬টি কেন্দ্রীয় সংস্থা বন্ধ করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার (Narendra Modi Government)। গত আট বছরে শিল্পসমৃদ্ধ এই জেলাকে প্রায় মরুভূমিতে পরিণত করার নীল নকশা ছকে ফেলেছে কেন্দ্রের এই সরকার। এ রাজ্যে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে এঁটে উঠতে না পেরে ভাতে মারার এই ঘৃণ্য পরিকল্পনা নিয়েছে বলে কেন্দ্রের নিন্দায় সরব সব মহল। গত আট বছরে শুধু এই জেলাতেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ হারিয়েছেন সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ মানুষ। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই ধারাবাহিকতা আগামী কয়েক বছর বজায় থাকলে আসানসোল-দুর্গাপুর খনি শিল্পাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে। গত আট বছরে নরেন্দ্র মোদির সরকার (Narendra Modi Government) রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবলস, বার্নপুরের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা, মেকন, হিন্দুস্তান স্টিল ওয়ার্কস কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ছাড়াও ইসিএল ও বিসিএল-এর প্রায় ১৪টি খনি বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় বন্ধের মুখে ঝুলে রয়েছে দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল কারখানা, কুলটির সেইল গ্রোথ ও চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস কারখানার ভাগ্য। এর আগে নয়ের দশকের শেষদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় বন্ধ হয়েছে এমএএমসি, বিওজিএল, এইচএফসি, জেশপ, সাইকেল কর্পোরেশনের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। ওই শিল্প কারখানাগুলি রুগ্ণ হয়ে পড়েছিল এই অজুহাতে সেগুলিকে পাঠানো হয়েছিল বোর্ড অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন (বিআইএফআর) নামক কেন্দ্রীয় সংস্থায় বন্ধ করার সুপারিশ জানিয়ে। এবং প্রয়াত বাজপেয়ীর জমানাতেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ শৌরির নেতৃত্বে ‘শিল্প বিলগ্নীকরণ’ নামক পৃথক একটি মন্ত্রকও খোলা হয়েছিল। এর পাশাপাশি বামেদের ভ্রান্ত শিল্প নীতির কারণে প্রায় শ্মশানে পরিণত হয়েছিল এই এলাকা। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের পাশাপাশি বেসরকারি ব্রিটিশ অক্সিজেন, স্যাঙ্কি হুইলস, হেইন লেম্যান, হিন্দ রিফ্র্যাক্ট্রিজ, পিলকিনটন গ্লাস কারখানা সহ অসংখ্য ছোট, বড় ও মাঝারি কারখানায় স্থায়ী ভাবে তালা পড়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে ইসিএল-এর বেশ কয়েকটি কয়লাখনিও। আটের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও রাজ্যের কোষাগারে কর বাবদ জমা পড়া মোট অর্থের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই আসত শুধুমাত্র অবিভক্ত বর্ধমান জেলা থেকে। সর্বনাশের সূচনা অবশ্য বাম জমানাতেই।