আরেকটু গুছিয়ে নেব
লোপামুদ্রা মিত্র
শুধুমাত্র ২০২৩-এই নয়, গোটা জীবনে আমি কিছু কিছু ভুল করেছি। যেমন, নিজের শরীরের দিকে নজর দিইনি, নিজের জন্য ভাবিনি। ২০২৪ থেকে একটু একটু করে নিজের দিকে মন দেব। শরীরচর্চা করব। খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখব। নতুন বছরে বেশকিছু পরিবর্তন দেখতে চাই। প্রথমেই চাই, সবাই স্বার্থপরতা ভুলে যাক। টাকা-পয়সার সঠিক ব্যবহার হোক। তবেই দেখতে পাব গরিবমুক্ত দেশ। বন্ধ হোক যুদ্ধগুলো। আমার কোনও স্বপ্ন নেই। তবে পরিকল্পনা আছে। নতুন বছরের পরিকল্পনা এই, শুরুর দিকে যেভাবে গান বাজনা করতে চেয়েছিলাম, এবার থেকে শুধুমাত্র তেমন গানই গাইব। নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নেব। ছোটাছুটি না করে চলব কচ্ছপের মতো। আমার ফাউন্ডেশন ‘চারণ’-এর পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেই আমরা শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাটে প্লাস্টিক পরিষ্কার করে এসেছি। এইরকম আরও কিছু সামাজিক কাজ নতুন বছরে করার ইচ্ছে আছে। একদিন পরিষ্কার করলাম বলে আর কেউ প্লাস্টিক ফেলবে না, এমনটা কিন্তু নয়। তবে এখন অনেকেই ফেলার সময় ভাববে। কিছু মানুষ সচেতন হলে পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠবে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
পরিচালনা করতে চাই
খরাজ মুখোপাধ্যায়
২০২৩ আমার ভালই কেটেছে। মজার মজার বেশ কয়েকটা ছবি করেছি। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছি ‘বগলা মামা যুগ যুগ জিও’র মতো একটি ছবিতে। দুটো নতুন নাটক লিখেছি। তার মধ্যে একটি মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা আছে। হয়তো সামনের বছরই হবে। তবে তারপর আর কোনও নাটকে অভিনয় করব না। যতদিন শরীর পারমিট করে, ততদিন কাজ করাই ভাল। সেই ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত। তঞ্চকতা করতে চাই না দর্শক শ্রোতার সঙ্গে। ২০২৩-এ কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিনা জানি না। তবে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সেটা হল ছেলেকে মুম্বই পাঠানো। অবশ্যই কাজের জন্য। ছেলেটা চলে যাওয়ার পরে আমাদের মনে হয়েছে, সিদ্ধান্তটা ঠিকঠাক নিলাম কিনা। পরে মনে হয়েছে, ঠিকই আছে। একটি ছবি পরিচালনা করতে চাই। জানি না সেই স্বপ্ন নতুন বছর পূরণ হবে কিনা। ভাল প্রযোজক পেলেই সেটা সম্ভব। গল্প ভাবা আছে। দেখতে চাই বেশকিছু সামাজিক পরিবর্তন। বহু আলো ঝলমলে পার্টিতে প্রচুর খাবারদাবার নষ্ট হয়। সেই খাবারগুলো অভুক্ত মানুষদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। তাতে সমাজের মঙ্গল হবে।
বাবা চলে গেছেন
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়
২০২৩-এ আমার বিরাট ক্ষতি হয়েছে। আমার বাবা চলে গেছেন। তিনি ছিলেন আমার আইডল। এই ক্ষতি অপূরণীয়। পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের বেশ কিছু কাজ সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছি। কলকাতা এবং জেলায়। পাশাপাশি কিছু কাজ করা সম্ভব হয়নি। কারণ কয়েকজন মেয়ে ফাইট করতে চাননি, জাস্টিস চাননি। পারিবারিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করেছেন। এটা একটা দুঃখের জায়গা। পেশাগত ক্ষেত্রে বড় সাফল্য, মুম্বাইয়ে পার্মানেন্টলি কাজ করছি। এতদিন কনসালটেন্ট হিসেবে ছিলাম। এবারে কাজ করছি নিজেরাই। সাফল্য ব্যর্থতা, কিছু পারা, কিছু না-পারা নিয়েই কেটেছে ২০২৩। কমিশনের ক্ষেত্রে কিছু আইন সংশোধনের স্বপ্ন দেখি। সেটার রেকমেন্ডেশন নতুন বছর আমাদের তরফ থেকে থাকবে। ২০২৪-এ একটি হিন্দি ছবি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজেরও প্রস্তাব রয়েছে। সবমিলিয়ে নতুন বছর ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই কাটবে।
ম্যাজিকের অপেক্ষায় আছি
সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়
২০২৩ সালে জ্ঞানত কোনও ভুল করেছি বলে মনে হয় না। তবে কাজের ক্ষেত্রে পরে অনেক সময় মনে হয়েছে, এটা এইভাবে না করলেও চলত। অন্যরকম কিছু ভাবতে পারতাম। এটা সারা জীবন ধরেই চলে। এই বছর নানা রকম কাজের মধ্যে ব্যস্ত ছিলাম। সেটা নতুন বছরেও থাকতে চাই। ২০২৩-এ বেশ কিছু বাংলা ছবি দারুণ সাফল্য পেয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটা ছবিতে আমার গানও ছিল। ফলে আশা করা যেতেই পারে, ২০২৪-এ আরও অনেক ভাল ভাল বাংলা ছবি তৈরি হবে। প্রযোজকরা ইনভেস্ট করবেন। তৈরি হবে আরও অনেক সিনেমার গান এবং সিনেমার বাইরের গান। সেই ম্যাজিকের অপেক্ষায় আছি। নতুন করে স্বপ্ন সাজানো অথবা টার্গেট সেট করার মধ্যে আমি নেই। এমনিতেই আমার জীবনের প্রচুর স্বপ্ন সফল হয়েছে। হয়েই চলেছে। নতুন বছর সেটা কন্টিনিউ রাখতে চাই। থাকতে চাই কাজের মধ্যে। গান গেয়ে আনন্দ দিতে চাই শ্রোতাদের। মোটকথা, যে কাজ করছি, সেটা যেন আরও ভালভাবে করতে পারি। চালিয়ে যেতে চাই চর্চা। ২০২৪-এ ভাল কোথাও বেড়াতে যাবার ইচ্ছে আছে। সপরিবারে। মাসখানেকের জন্য। একটা-দুটো গিটার, বাঁশি কেনারও ইচ্ছে আছে। দেখা যাক, ইচ্ছেগুলো পূরণ হয় কিনা।
আরও পড়ুন: চাওয়া-পাওয়ার নতুন বছর
পরিবর্তন আনতে চাই নিজের মধ্যে
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
শুধু ২০২৩ সাল বলেই নয়, জীবনে নানা সময় আমরা অনেক রকম ভুল করে ফেলি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখি। মানুষের উপর বিশ্বাস করে ভুল করেছি হয়তো। তাও বিশ্বাসটা করতে চাই। কারণ এটা না করলে মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাবে। শিখছি, জানছি, বুঝছি। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু করতে হবে। নিজের ভিতরের আত্মার ক্ষতি হোক, এমন কিছু করব না। পরিবর্তন আনতে চাই নিজের মধ্যে। এই পরিবর্তন না আনতে পারলে খুব সমস্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলাই জীবন। জীবন মানে একটা জার্নি। বছর বছর ১ জানুয়ারি এলেই যে সেটা বদলে যাবে, তা কিন্তু নয়। নতুন বছরেই যে মিরাকেল ঘটবে আমার জীবনে, সেটাও নয়। তবে স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন আমাকে বাঁচিয়ে রাখে এবং এগোতে সাহায্য করে। স্বপ্নের শেষ নেই। একটা পূরণ হলে নতুন একটা স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। আর একটা কথা, নতুন বছরের পরিকল্পনা বলে এখন কিন্তু কিছু হয় না। আজ আমি কী করব, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদি বদলাতে হয়, আজ বদলাব, যদি স্বপ্ন দেখতে হয়, আজ দেখব। কারণ, ওই যে, জীবন চলমান।
যোগ্য মানুষরা যেন সুযোগ পান
রাঘব চট্টোপাধ্যায়
২০২৩ সালে জ্ঞানত কিছু ভুল করিনি। তবে কোনও কোনও সময় গানবাজনার জগতে অনেককে বিশ্বাস করেছি। তারপরে দেখেছি, যেরকমটা ভেবেছিলাম, সেরকমটা নয়। নিজেকে শুধরানোর জায়গা সব সময় থাকে। প্রতিমুহূর্তে চাই আরও ভাল কিছু করতে। নতুন বছর গানবাজনার আরও প্রসার হোক। অনেক অযোগ্য মানুষকে দেখি, নানা উপায়ে এগিয়ে গেছেন। পিছিয়ে পড়ছেন যোগ্য মানুষরা। আমার প্রত্যাশা, সমস্ত ক্ষেত্রের যোগ্য এবং শিক্ষিত মানুষরা যেন কাজের সুযোগ পান। আমার দুই মেয়ে আনন্দী এবং আহিরী গান করছে। পাশাপাশি আমাদের মিউজিক মাইন্ডস অ্যাকাডেমিও পঁচিশ বছর হতে চলল। প্রচুর ছাত্রছাত্রী। তারা যেন সুস্থ গানবাজনার চর্চা করে এগিয়ে যায়। এটাই আমার স্বপ্ন। পাশাপাশি নতুন বছর বেশকিছু ভাল গান তৈরি করতে চাই। হাত দিতে চাই নতুন প্রোজেক্টে। বেশ কিছু ভাল সিনেমায় গায়ক এবং সুরকার হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।
জীবনের গাছগুলোতে জল দিতে চাই
সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়
২০২৩-এ আলাদা করে কোনও ভুল হয়েছে বলে মনে হয় না। বরং নতুন করে অনেক কিছু শিখেছি। যেমন, অনেক কিছুকে এবং অনেককে মাঝে মাঝে ছেড়ে আসতে হয়। এটা ২০২৩ আমায় শিখিয়েছে। নতুন বছরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলে ভাল লাগবে। ব্যক্তিগত হয়ত নয়, সার্বিক। যুদ্ধ দেখতে চাই না। মানুষের স্বভাবের একটু উন্নতি হলে ভাল লাগবে। সবাই সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে, ভাল ভাবে কথা বলবে। এটুকুই। আমার মনে হয় এখন আমরা বড় বেশি ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে যাচ্ছি। একটু যদি বাস্তবে ফিরে আসা যায়, ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবের এই পরিবর্তনটা সত্যিই চাই। আমার নতুন কিছু গল্প আছে, সেইগুলো পর্দার জন্য বলতে চাই। তবে সব গল্প তো নতুন বছরে হবে না। এ ছাড়া আরও ভাল করে সংসার করতে চাই। জীবনের গাছগুলোতে জল দিতে চাই। দৈনন্দিনকে উদযাপন করতে চাই আরও নিবিড়ভাবে। এ ছাড়া আমার আর কোনও বড় স্বপ্ন নেই। ওহ হ্যাঁ, গ্রিস যেতে চাই একবার, ওপেন এয়ার থিয়েটারটা সামনে থেকে দেখব বলে। সেটা ২০২৪-এ হবে বলে মনে হয় বা। তবে নতুন বছরে দুটি বই হচ্ছে। সিগনেট থেকে বেরোচ্ছে কবিতার বই ‘ঈক্ষা’ এবং ধানসিড়ি থেকে প্রথম গল্পের বই ‘সা’। নতুন বছরে আমার পরিকল্পনাও ওই ‘সা’-ই, মানে নিজের কাছে ফেরা।
শরীরের দিকে নজর দেব
নাইজেল আকারা
২০২৩ সালে কী কী ভুল করেছি, জানি না। যদি কোনও ভুল করে থাকি সেটা অজান্তে। আরেকটু সচেতন হব। যাতে অজান্তেও কোনও ভুল না হয়ে যায়। নতুন বছর নিজের শরীরের দিকে নজর দেব। ঝরিয়ে ফেলব অতিরিক্ত মেদ। আমি একটা ব্যবসা করি। সেখান থেকে বেশ কিছু মানুষের অন্ন সংস্থান হয়। নতুন বছর ব্যবসাটা নিয়ে আরো বেশি ভাবনা চিন্তা করব। যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। কাজ করতে চাই সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। পাশাপাশি চাই, আরও ভাল বাংলা সিনেমা তৈরি হোক। প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়। আমি জীবনে শর্ট টার্ম গোল সেট করি। এই মুহূর্তে তেমন কোনও স্বপ্ন নেই, যেটা এক বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে। তবে নতুন বছর ট্রান্স জেন্ডারের চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে আছে। সিনেমা নয়, স্টেজের জন্য। এ ছাড়াও চাই দুর্ধর্ষ খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে। সেটা সিনেমার জন্য। আর তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। সময় যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাব।