অবাঙালি হয়েও যাঁরা বাঙালি

অবাঙালি হয়েও তাঁরা কিন্তু আদ্যোপান্ত বাঙালি। অনেককে ছাপিয়ে যান বাঙালিয়ানাতে। অভিনয়-গুণেও ঠিক যেন পাশের বাড়ির মানুষ। ছোটপর্দার সেইসব তারকা যাঁরা অন্যভাষী হয়েও দাপিয়ে কাজ করে চলেছেন জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিকগুলোয়। তাঁদের কথা লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বাংলা টেলিভিশনের একের পর এক নতুন নতুন ধারাবাহিক। সুন্দর গল্প, বাস্তব ঘেঁষা প্লটে দাপুটে অভিনয়। টিআরপি-র লড়াইতে কে কাকে পিছনে ফেলে সামনে এগোবে সেই প্রতিযোগিতা। এইসব ধারাবাহিকের অনেক পরিচিত মুখ যাঁরা বাংলা দর্শকের আইকন তাদের অনেকেই কিন্তু আদৌও বাঙালি নন। অথচ ঝরঝরে বাংলা সংলাপে বাজিমাত করে চলেছেন। যেন বাঙালিয়ানার প্রতীক। রীতিমতো ঘামছুটিয়ে রপ্ত করেছেন বাংলা ভাষা। অবাঙালি হয়েও বাংলা সিরিয়াল, সিনেমায় অসাধারণ জনপ্রিয় তাঁরা। অভিনয় গুণে হয়ে উঠেছেন সবার প্রিয় চরিত্র।

আরও পড়ুন-নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

অ্যানমেরি টম
গ্রাম-বাংলার নির্ভীক প্রতিবাদী মিষ্টি মেয়ে বীণাপাণি। তাকে দেখা গিয়েছিল ‘গ্রামের রাণী বীণাপাণি’তে। ঝরঝরে বাংলা-বলা বীণাপাণি যে দর্শকের মন কেড়ে নিয়েছিল তাঁর অভিনয় দিয়ে তিনি আসলে বাঙালি নন বা বলা ভাল অর্ধেক বাঙালি, অর্ধেক মালয়লি। কেরালাতেই জন্ম অভিনেত্রী অ্যানমেরি টমের। কিন্তু বড় হয়েছেন ব্যারাকপুরের তাঁর মামাবাড়িতে। এখানকার সেন্ট ক্ল্যারেট স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। এরপর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে তারপর ওই কলেজ থেকেই ২০১৮ সালে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তাঁর মা বাঙালি। দীর্ঘদিন মডেলিং করেছেন। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী অ্যানমেরি। নাচ তাঁর প্রথম ভালবাসা। এরপর ‘গ্রামের রাণী বীণাপাণি’তে ছোটপর্দায় হাতেখড়ি। সিরিয়ালে এসেই দর্শকদের মন জিতে নিয়েছিলেন। এখনও চুটিয়ে করছেন অভিনয়।

আরও পড়ুন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সত্যজিৎ রায়, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য

অভিষেক বীর শর্মা
‘সরস্বতীর প্রেম’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে বাংলা টেলিভিশনে ডেবিউ করেছিলেন অভিষেক বীর শর্মা। ছোট পর্দার সুঠাম, সুপুরুষ, বুদ্ধিদীপ্ত এই হিরোটি এখন বাঙালি দর্শকের ক্রাশ। দেখতে বাঙালি হলেও অভিষেক আসলে অবাঙালি। বিহারের পাটনার ছেলে। তাঁর পরিবার থাকেন শিলিগুড়িতে। অভিষেক ছিলেন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। কিন্তু পরবর্তীতে পড়া ছেড়ে মুম্বই চলে যান সেখানে অভিনয় নিয়ে স্ট্রাগল করছিলেন কিন্তু করোনা শুরু হয়। ফলে লকডাউনের সময় ফিরে আসেন বাড়ি। অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হন ‘সরস্বতীর প্রেম’ ধারাবাহিকটির জন্য। তখন ভাল করে বাংলাই বলতে পারতেন না অভিষেক।
‘মৌয়ের বাড়ি’ সিরিয়ালের জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এরপর সোহাগ চাঁদ ধারাবাহিকটিও তাকে প্রচুর জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুন-সিউড়িতে শাহি মিথ্যাচারের জবাব দিতে, ফিরহাদের সভা কাল

নেহা আমনদীপ
গত দুবছরে ধরে বাংলা টেলিভিশন থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছিলেন অভিনেত্রী নেহা আমনদীপ সোনকার। যিনি আজও দর্শকদের কাছে ‘স্ত্রী’ সিরিয়ালের নিরুপমা নামেই জনপ্রিয়। স্ত্রীর পরে তিনি কালার্সে ‘কনে বউ’ নামের একটি সিরিয়ালও করেন। দুটো ধারাবাহিকই বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। নিজের অভিনয় প্রতিভার জোরে বেশ কিছু বাংলা ছবিতেও তাঁকে দেখা গেছে। অনেকেই জানেন না ঝরঝরে বাংলা বলা নেহা কিন্তু অবাঙালি। পাঞ্জাবি পরিবারের মেয়ে তিনি। মা খুব স্ট্রাগল করে একাই বড় করেছিলেন নেহা এবং তাঁর বোনকে। এরপর বিজ্ঞাপন জগতে মডেলিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন। সাহারা ওয়ান টেলিভিশনে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ‘স্ত্রী’ ধারাবাহিকটি করার সময় নেহা ভাল বাংলা পড়তে পারতেন না। ইংরেজি হরফে স্ক্রিপ্ট লিখে সংলাপ মুখস্থ করতেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ নির্বাসনে চলে যান কোনও এক ব্যক্তিগত কারণে। যদিও চলতি বছরেই আবার তাঁকে দেখতে পাওয়া যাবে নামকরা কোনও প্রডাকশনের তৈরি ধারাবাহিকে। ইতিমধ্যে বসে থাকেননি নেহা একটা ব্যবসা শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন-বাঙালির এত প্রেম, বাংলায় প্রেমপত্র কোথায়?

হানি বাফনা
‘বকুল কথা’ সিরিয়ালের নায়ক ঋষিকে মনে আছে। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল জি বাংলার এই ধারাবাহিকটি। ঋষি ওরফে অভিনেতা হানি বাফনা বাংলা টেলিভিশনের খুব জনপ্রিয় এবং পরিচিত একটি মুখ। ‘প্রথমা কাদম্বিনী’র দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ‘গ্রামের রাণী বীণাপাণি’র শতদ্রু হিসেবেও তার বেশ পরিচিতি। বাঙালি নায়কসুলভ হানি বাফনা কিন্তু মোটেও বাঙালি নন। তিনি আধা মাড়োয়ারি আধা জৈন। আশুতোষ কলেজ থেকে স্মাতক হবার পর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করতেন। এরপর বাংলা ধারাবাহিকে কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ হল স্টার জলসার ‘তুমি আসবে বলেই’। আর পিছন ফিরে তাকাননি।

আরও পড়ুন-রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা ফেরত দিন, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব: শাহকে বিঁধে অভিষেক 

পল্লবী শর্মা
এই মুহূর্তে আলাদা করে চিনিয়ে দিতে হবে না জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী শর্মাকে। তিনি আর কেউ নয় ‘নিম ফুলের মধু’র পর্ণা। এত সুন্দর বাংলা বলা পল্লবী মোটেও বাঙালি নন। জীবনে বহু চড়াই উতরাই পেরিয়েছেন পল্লবী। তাঁর জন্ম হয় এই রাজ্যের বাইরে। ক্লাস টু-তে পড়ার সময় মাকে হারান তিনি। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন পল্লবীর মা। বাবা ও দাদা যখন মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাতায়াত করতেন তখন পিসির কাছেই থাকতেন তিনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বাবা মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। ২০১৬-তে কলেজ পড়ার সময় ‘কে আপন কে পর’ সিরিয়ালের জন্য ডাক পান। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকেন পল্লবী।

আরও পড়ুন-বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

ঋষি কৌশিক
অবাঙালি নায়ক যাঁরা ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করছেন এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অভিনেতা ঋষি কৌশিক। রোমান্টিক হিরো হিসেবেই তাঁকে সকলের পছন্দ। ‘এখানে আকাশ নীল’ ধারাবাহিকের উজান চ্যাটার্জি, ‘ইষ্টিকুটুম’-এর অর্চিস্মান মুখোপাধ্যায় যেন বাঙালি দর্শকের মনের অনেক কাছের চরিত্র। ছোটপর্দায় বাঙালির হিরো ঋষি কৌশিক কিন্তু বাঙালি নন। তার জন্ম অসমের তেজপুরে। তাঁর আসল নাম হল কামাখ্যা কিঙ্কর কৌশিক। যদিও ছোট থেকেই ভাল বাংলা বলেন ঋষি। এই অসমীয়া অভিনেতা গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। এরপর কলকাতায় আসেন। তিনি মুম্বইয়ের বিখ্যাত গ্ল্যাডরাগস (gladrags) মেগামডেল হান্টের চূড়ান্ত প্রতিযোগী ছিলেন। প্রথম অভিনয় হাতেখড়ি অসমীয়া ছবিতে। এখন বাংলা সিরিয়াল এবং ওয়েব সিরিজে চুটিয়ে কাজ করছেন ঋষি।

আরও পড়ুন-রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা ফেরত দিন, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব: শাহকে বিঁধে অভিষেক 

শ্বেতা মিশ্র
বাংলা সিরিয়ালের নায়িকা নয়, খলনায়িকা হিসেবে সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন শ্বেতা। ‘ধুলোকণা’র চড়ুই এবং বর্তমানে ‘ইচ্ছে পুতুল’ সিরিয়ালের ময়ূরী চরিত্রের জন্য তিনি খুব জনপ্রিয় হয়েছেন। বড়পর্দার ‘প্রেম টেম’ ছবিতে তাঁকে দেখা গেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। জন্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশের মেয়ে শ্বেতা। বাবা উত্তরপ্রদেশের আর মা মাড়োয়ারি। শ্বেতা বড় হয়েছেন এই রাজ্যে। বাবার চাকরির সুবাদে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বহরমপুরেই তাঁর পড়াশুনো। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে বটানি নিয়ে পড়েন। দুটো কর্পোরেট অফিসে চাকরির পর মডেলিং শুরু করেন। থিয়েটার তাঁর প্রথম প্রেম তারপর বড়পর্দা ও ছোটপর্দায় অভিনয়। শ্বেতা নিজেকে বাঙালি ভাবতেই পছন্দ করেন।

আরও পড়ুন-পথ চলা শুরু সবুজ-মেরুন স্পোর্টস অ্যাকাডেমির

ক্রুশল আহুজা
‘রানু পেল লটারি’ ধারাবাহিকের হাত ধরে বাংলা ছোট পর্দায় হাতেখড়ি অভিনেতা ক্রুশল আহুজার। বাংলা টেলিভিশনের হার্টথ্রব ক্রুশল কিন্তু অবাঙালি। বিডিএম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে বেরিয়ে আশুতোষ কলেজ থেকে স্নাতক হন। ২০১৭-তে মিস্টার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় টপ এইটে ছিলেন তিনি। এরপর অভিনয় শুরু। ‘কী করে বলবো তোমায়’ সিরিয়ালে প্রথম অভিনয় করেন। এখন মুম্বইয়ে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করছেন এই অভিনেতা। সেখানকার সিরিয়ালে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

Latest article