চন্দন মুখোপাধ্যায় কাটোয়া : গ্রামবাংলায় প্রায় সব বাড়িতেই থাকত ঢেঁকি। ঢেঁকি নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু প্রবাদ–প্রবচন। ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে’, ‘লাথির ঢেঁকি লাথি ছাড়া চলে না’ ইত্যাদি। কাউকে ‘কাজের ঢেঁকি’ বলেও ছোট করার চেষ্টা চলত। বাড়ির মেয়েরাই ঢেঁকিতে পাড় দিত, মানে ধান ভানত। সেই ঢেঁকিছাটা চাল স্বাদে–গুণে কলে ছাঁটা চালের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
আরও পড়ুন-দুয়ারে হাজির সাগরবারি, মুখ্যমন্ত্রীর অভিনব ভাবনা
কারণ যন্ত্র চালের ছালচামড়া তুলে ফেলে। ঢেঁকিতে শুধু ধানের খোসাটাই ওঠে। চালের ওপরের স্তরের উপকারী অংশ রয়ে যায়। তাতে চালের স্বাদও ভাল হয়। তাই পৌষপার্বণে পিঠে–পুলির স্বাদ নিতে ঢেঁকিছাঁটা চাল ছিল অপরিহার্য। ঢেঁকিছাঁটা চালের গুণমান বেশি, দামও। কাটোয়ার একাইহাট, বিকিহাট–সহ বিভিন্ন এলাকার বহু বাসিন্দাই দেশভাগের পর বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকের ঘরে ঢেঁকি ছিল।
আরও পড়ুন-বাংলার পটশিল্প এবার চলল রাজধানী জয়ে
পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে চাল গুঁড়ো করানোর জন্য লাইন পড়ে যেত। কেউ টাকা, কেউ চালের বিনিময়ে আতপ ও সিদ্ধ চাল গুঁড়িয়ে নিতেন। রাতভর মহিলারা ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করতেন। এখন সব গ্রামেই বসেছে চালকল। তাই ঢেঁকির চল উঠেই গিয়েছে। কেউ কাঠ হিসেবে বেচে দিয়েছেন, কেউ মাচায় তুলে রেখেছেন। কারও ঢেঁকি উইয়ে কাটছে। অনেকেই পিঠে–পুলির জন্য মেশিনে চাল গুঁড়িয়ে নেন। দোকানেও প্যাকেটে চালের গুঁড়ো মেলে। তাই দিন গিয়েছে ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা চালের।