বালিগঞ্জ উপনির্বাচনের আগে থানায় গিয়ে কার্যত পুলিশ অফিসারদের হুমকি ও হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা দলবদলু বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বালিগঞ্জে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী কেয়া ঘোষকে পাশে বসিয়ে থানার আধিকারিকদের কার্যত চমকাচ্ছেন “লোডশেডিং”-এ জেতা বিধায়ক। এমনই একটি ভিডিও প্রকাশ্যে চলে আসায় রাজনৈতিক মহলে কার্যত আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারী বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত একটি থানায় বসে পুলিশ আধিকারিকদের কার্যত শাসাচ্ছেন। তিনি হুমকির সুরে বলছেন, “বালিগঞ্জকে ঠিক না রাখলে ইলেকশন কমিশন কাউকে ছাড়বে না। কারণ, ন্যাশনাল লেভেলে রামপুরহাটের পরে ওয়েস্টবেঙ্গল এখন ফোকাসড। ১৩৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। আরও দেওয়া হবে। কোনও বুথ প্রিমিসেস ও কিউআরটি-তে সেন্ট্রাল ফোর্স ছাড়া অন্য কিছু থাকবে না।”
আরও পড়ুন – সংখ্যাগরিষ্ঠতাই বুঝি গণতন্ত্রের শেষ কথা !
এরপরই শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, “মাথায় রাখবেন, এটা কলকাতা কর্পোরেশন ভোট নয়।” শুভেন্দুর এমন মন্তব্যের পর সেখানে উপস্থিত এক পুলিশের আকাধিকারিককে বলতে শোনা যায়, “কলকাতা কর্পোরেশনের ভোট যথেষ্ট শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। কাউকে কোনও ঝামেলা করতে দেওয়া হয়নি। এখনও আমরা করতে দেবো না।”
পুলিশ আধিকারিকের এই বক্তব্যের পর শুভেন্দু বলতে শুরু করেন, “কলকাতা কর্পোরেশন ভোট নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো। আমাদের এখন এতো দুর্দিন হয়ে যায়নি যে মাত্র তিনটে সিট পাবো। ৮% ভোট পাবো। তাই কর্পোরেশনের ভোট নিয়ে বেশি কথা বলবেন না। ওটা বাদ দিয়ে বলুন। এখন আপনারা সবাই কিন্তু ইলেকশন কমিশনের আন্ডারে।”
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দলীয় প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে কি থানায় অন ডিউটি কোনও পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশকর্মীদের উদ্দেশ্যে এমন হুঁশিয়ারির সুরে কথা বলতে পারেন? যদিও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, থানায় থাকা কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari), বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ এবং তাঁদের সঙ্গে থানার চেয়ার জুড়ে বসে থাকা বিজেপির সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে যথেষ্ট সৌজন্য রেখে বাক্যালাপ করছেন।
প্রশ্ন আরও উঠছে, জাতীয়স্তরে বাংলার নাম বদনাম করার জন্য শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) যে উঠেপড়ে লেগেছেন, এদিনের তাঁর বক্তব্য থেকেই সেটা স্পষ্ট। জাতীয় নির্বাচন কমিশন কী ভাবছে বা নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে কমিশন, সেটা আগেভাগেই বলে দিচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন হবে বা কত বাহিনী আসবে সবকিছুই শুভেন্দুরা ঠিক করে দিচ্ছেন না তো? কলকাতা পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার এই ভাইরাল ভিডিও উপনির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে আসতেই খুব স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দু অধিকারী বা বিজেপির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের আঁতাত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।