তিনি স্বপ্ন দেখেন, আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রাণপাত করেন। কী, নিশ্চয়ই ভাবছেন অতিরঞ্জিত! আরে না না… এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা আমার আপনার মতোই আদ্যোপান্ত এক বাঙালি।
এই মূহূর্তে বাংলা গানের জগতে একটি গবেষণার প্রাতিষ্ঠানিক নাম শুভেন্দু মাইতি। বাংলা নাগরিক এবং লোকায়ত গান— এই দুই ধারার সঙ্গেই তাঁর নামটি জড়িয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরে। শুভেন্দু মাইতির যে পরিব্রাজক জীবন অর্থাৎ তাঁর হেঁটে বেড়ানো, চলে বেড়ানো, তাকে লিপিবদ্ধ করা খুব মুশকিল।
আরও পড়ুন-মূল্যবৃদ্ধির জেরে পটাশের দাম বেড়েছে আড়াইগুণ, কেন্দ্রের নীতিতে সঙ্কটে চা-শিল্প
এই ৭৬ বছরের জীবনে অন্তত ৭৬ হাজার স্বপ্ন দেখে ফেলেছেন শুভেন্দু মাইতি। এই স্বপ্নের পথ ধরেই একে একে মুক্তধারা, কিশলয়, আলাপ, প্রবাহ, লালন অ্যাকাডেমি— এরকম কতশত সংগঠন গড়ে উঠেছে। এবার তাঁর স্বপ্নের নাম ‘পান্থপাদপ’।
আমাদের সামাজিক জীবনে একটা পরিবর্তন এসেছে ধীরে ধীরে। কিন্তু যখন আমরা এ পরিবর্তনকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম, তখন সত্যি অনেক দেরি হয়ে গেছে। অথচ বাঙালিসমাজ এমনটা ছিল না।
বাঙালির আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, ইতিহাস আর নিজস্ব পরিচিতি। কিন্তু এখন বেশ বুঝতে পারছি আমরা যেন কোথায় একটু ভুল করেছিলাম। একটু একটু করে আমাদের সেই চেনা ঐতিহ্য, ইতিহাস যেন পাল্টে গেছে। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নটাই আজ ঘুরেফিরে সামনে আসছে।
আরও পড়ুন-আগ্নেয়াস্ত্র-সহ নানুরে ধৃত দুই
আসলে সংস্কৃতি মানুষকে বিকশিত করে এবং মানুষের চলার পথকে মসৃণ করে। দুর্বল সংস্কৃতি সবল কোনও শক্তির ভেতর হারিয়ে গিয়ে অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে। যদিও বাঙালির সংস্কৃতি কখনও দুর্বল ছিল না। এর বিকাশের দীর্ঘ পটভূমি আছে। বাঙালি মননে ও দর্শনে তাই বহুকাল ধরেই শক্তিমান ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। তবে ধাক্কা খেয়েছে আজ সেই সংস্কৃতি।
পাড়া-সংস্কৃতির মানবিক বন্ধনেই ছিল শহুরে জীবনের মূল সমাজ। বহুতল অট্টালিকায় চাপা পড়ে গেল যেন আমাদের অতীত সংস্কৃতি-সামাজিকতা। সামষ্টিক সামাজিকতার বলয় যেন একটু একটু করে খসে পড়ল আমাদের চোখের সামনেই। একেবারে যেন ঘুরে গেল সামাজিক জীবনের ধারা। এ নির্মম ব্যবস্থা শুধু পাড়া-সংস্কৃতিই নির্মূল করেছে তা নয়, এটি নির্মূল করেছে পরিজনদের মধ্যকার সম্পর্ক-সম্প্রীতিকেও। সমাজ থেকে একে একে বিদায় নিয়েছে খেলাধুলা, নাটকচর্চা, কবিতা আবৃত্তির আসর, যাত্রা, পুতুলনাচ, কবিগান, জারিগান, নৌকাবাইচ, ফুটবল-ক্রিকেট— সবকিছু।
আরও পড়ুন-ছোট্ট মরিয়ম আজও খুঁজে বেড়ায় বাবাকে
বাঙালির স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য উদারভাবে তার নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সাহিত্য, ইতিহাস-এ সবকিছুর চর্চা করার অধিকার থাকতে হয়। কারণ এসবের মাধ্যমেই তার চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। চেতনার থেকে বড় শক্তি আর কিছুই হতে পারে না।
তাঁর মতে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় তেত্রিশ কোটি বাঙালির বাস। এই তেত্রিশ কোটি বাঙালি তারা তাদের মেধাশক্তি, মানবতা, সৃজনশীলতা, ঔদার্য— সবকিছু মিলিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু নানা কারণে তাঁরা হতোদ্যম। তাঁরা বিশ্বের সবথেকে নিকৃষ্ট দেশগুলিতে গিয়ে মেধা বেচে খায়। এটা শুভেন্দু মাইতির একান্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধি। বাঙালির কাছে তাঁর আত্মাভিমানের জায়গাটি ফিরিয়ে দেওয়া দরকার, সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য আছে, পরম্পরা আছে, সেটাকেও রক্ষা করা দরকার। শুধুমাত্র লোকায়ত সংস্কৃতি নয়, নাগরিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তার যে ঐতিহ্য আছে তাকেও রক্ষা করা দরকার। এই সব ভাবনা থেকেই ‘পান্থপাদপ’-এর জন্ম হয়েছে।
আরও পড়ুন-প্রধান শিক্ষককে ছাড়তে নারাজ পড়ুয়ারা
তিনি নিজে বলছেন, এই পান্থপাদপ একটা খুব বড় স্বপ্নের ভিত্তিভূমি। যা হয়তো দুই বাংলার মানুষেরই বুকের কথা। আমাদের দুই দিকের বাঙালির মাঝের যে কাঁটাতার সে তো মাটিতে। মহাশূন্যে কে আর কাঁটাতার দিতে পেরেছে কবে? সেই মহাশূন্যেই মিলিত হবে ৩৩ কোটি বাঙালি। ভার্চুয়ালি একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে বাঙালির কোনও সীমানা থাকবে না, বিদ্বেষ থাকবে না। কাজটা কঠিন কিন্তু অবাস্তব না, অসম্ভব তো নয়ই।
“একজন বাঙালি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তাঁর ইতিহাস এবং সংস্কৃতি তাঁকে বাকিদের থেকে পৃথক করে রাখে। আজ সারা পৃথিবীতে বাঙালিরা ছড়িয়ে পড়েছেন নিজেদের গুণেই। আর সর্বত্রই সৃজনশীল, সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী জাতি হিসাবে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত।” বলছিলেন শুভেন্দু মাইতি। তবে তাঁর মতে, “আজকের বিশ্বায়িত পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতিই নিজেদের মূল থেকে সরে যাচ্ছে। তাই বাঙালি সংস্কৃতিও আজ গভীর সংকটের মুখোমুখি। এই সংকট পেরিয়ে যেতে হবে সকলকে হাতে হাত রেখেই।” আর সেই উদ্দেশ্যেই বোলপুর শহরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের অদূরে তিনি তৈরি করতে চলেছেন আরেকটি তপোবন। যার নাম ‘পান্থপাদপ’।
আরও পড়ুন-ভাদু শেখ খুনে সিবিআইয়ের হেফাজতে চার
মহাশূন্যে মহামিলনের ভিত্তি শান্তিনিকেতনে গড়ে উঠছে ‘পান্থপাদপ’। আপাতত ১৬ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা বাঙালির সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। এই কাজে অর্থের জোগান দিচ্ছেন কে, এই প্রশ্নটাও অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে।
সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, সারা বিশ্বের আপামর বাঙালি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
কী এই ‘পান্থপাদপ’? আসলে ১৬ বিঘা জমির উপর তৈরি শুভেন্দু মাইতির এক স্বপ্নের নাম ‘পান্থপাদপ’। ৭৬ বছরের জীবনে তিনি কম স্বপ্ন দেখেননি। বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে তিনি তৈরি করেছেন একের পর এক সাংস্কৃতিক সংগঠন। তবে ‘পান্থপাদপ’ তাদের সবার থেকে আলাদা। বলা যায়, সব থেকে কঠিন একটি স্বপ্ন। কাঁটাতারের দু’পারের বাঙালিদের তো বটেই, পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের এক সুতোয় বেঁধে তোলার স্বপ্নের নাম ‘পান্থপাদপ’।
আরও পড়ুন-তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলা
নিশ্চয়ই ভাবছেন কী কী থাকবে এই পান্থপাদপে?
এই গোটা প্রকল্পটির রূপদান করছেন বিশিষ্ট ভাস্কর রূপচাঁদ কুণ্ডু। তিনিই এই প্রকল্পের রূপকার।
প্রকল্পের শিলান্যাসের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের বাস্তবায়নের সূচনা হয়েছে মাত্র।
এই পান্থপাদপ অলঙ্কৃত হবে :
১। চারটি মূল্যবান সংগ্রহশালা।
২। একটি উন্নতমানের স্টুডিও (সহজ মানুষ), শক্তিশালী ওয়েব পোর্টাল-এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
৩। একটি মুক্তমঞ্চ। ( ২০০-৩০০ আসন যুক্ত)
৪। গ্লাসহাউস (আড্ডা জোন ); ট্রি-কফি হাউস।
৫। শিশুদের বিনোদন পার্ক (আবোল তাবোল-এর দেশ)।
৬। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
সমগ্র প্রকল্পটি হবে পরিবেশবান্ধব।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা গ্রামীণ মানুষের জীবন। ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য— এই প্রবাদবাক্যটি গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছে যেন আরও একটু বেশিই প্রাসঙ্গিক। সংকট এবং প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও গ্রামে এখনও প্রতি মাসে ঘটা করে পালিত হয় নানা ধরনের উৎসব, আচার ও অনুষ্ঠান। সেগুলো কখনও ধর্মীয় লোকাচার, কখনও চিত্তবিনোদনের মাধ্যম আবার কখনও লোকসমাজের প্রাত্যহিক সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ হিসেবে আয়োজন করা হয়।
খোদ শুভেন্দু মাইতি বলছেন, আমরা ৩৩ কোটি বাঙালি সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রয়েছি। তাদের যদি একসূত্রে বাঁধা যায়, তা একমাত্র সম্ভব মহাকাশে। আর সেই স্বপ্ন নিয়ে শিলান্যাস হয়েছে পান্থপাদপ- এর। একটু সময় লাগবে। বড়জোর বছর তিনেক। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের লোকাচার, আমাদের কবিতা, গান, নাটক সবকিছু থেকে আমরা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি. কিন্তু পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি থাকুক না কেন তাদের মধ্যে কেউ না কেউ তো সৃষ্টি করছে? এই সবকিছুকেই এক সূত্রে বাঁধতে এই উদ্যোগ। অনেকদিনের ভাবনা থেকে বোলপুরের মাটিতে আজকের এই ‘পান্থপাদপ’-এর পথচলা শুরু।
আরও পড়ুন-পাওনা টাকা ফেরতের টোপ দিয়ে নৃশংস খুন দু’জনকে, ক্ষোভে উত্তাল মগরাহাট
তিনি বলেন, সংগ্রহশালাটি প্রয়াত সুশীল চট্টোপাধ্যায়ের। এখানে পাঁচটি সংগ্রহশালার মধ্যে অ্যান্টিক জিনিসের সংগ্রহশালা অত্যন্ত মূল্যবান। শিশিরকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর সারা জীবনের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার অ্যান্টিক কালেকশন আমাদের এই সংগ্রহশালায় দিচ্ছেন। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে ৮ হাজার গ্রামোফোন রেকর্ড, ৫-৬টি কলের গান, ৬ লক্ষ পিন। সবই থাকবে। লোকনাট্যের সংগ্রহশালা, আদিবাসী সমাজের ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহশালা, মহিলাদের সাজসজ্জার সংগ্রহশালা থাকবে। বাঙালির হারিয়ে যাওয়া সমস্ত সংস্কৃতিকে শুধুমাত্র সংগ্রহ করাই নয়, হারিয়ে যাওয়া লোকাচারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব আমরা। আমাদের গান, আমাদের সংস্কৃতি যাতে হারিয়ে না যায়। সবকিছুকে নতুন করে ফের চর্চায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়েই এই ‘পান্থপাদপ’।
আরও পড়ুন-চিটফান্ডের আদলে টাকা তোলা, বিমানবন্দরে গ্রেফতার প্রতারক
বাইরে থেকে দেখতে স্থানীয় আদিবাসীদের কুটির। প্রকৃতিকে কোনওভাবে বিরক্ত না করেই গড়ে উঠছে এই কটেজগুলি। অথচ তার মধ্যেই থাকছে সমস্ত ধরনের আধুনিক পরিষেবা। থাকা-খাওয়ার সু-বন্দোবস্তের পাশাপাশি থাকছে একটি স্টুডিও, একটি মুক্তমঞ্চ। সেখানে নিয়মিত বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা বহাল থাকবে।
শুভেন্দুবাবু বলছিলেন, “প্রত্যেক বাঙালিই তাঁর জীবদ্দশায় একবার না একবার তো এই তীর্থক্ষেত্রে আসেন। তাঁদের সঙ্গে বাকিদের যুক্ত করে তুলতে পারলেই একটা জাতির নিজস্ব সত্তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”
শিশুদের মনের মধ্যে বাঙালিয়ানাকে উসকে দিতে থাকছে একটি বিশেষ পার্ক। আর এই গোটাটার নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন শিল্পী রূপচাঁদ কুণ্ডু।
আরও পড়ুন-সোমবার থেকে খুলে যাচ্ছে জি ডি বিড়লা-সহ পাঁচ স্কুল
পান্থপাদপ সম্পর্কে প্রকল্পের রূপকার শিল্পী রূপচাঁদ কুণ্ডুর বক্তব্য, আমি শিল্পী হিসেবে স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি তার থেকেও বেশি ভালবাসি স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। যে গুরুদায়িত্ব আমার উপর দেওয়া হয়েছে, আমি চেষ্টা করব পান্থপাদপ-এর মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে।
থাকছে প্রয়াত প্রত্নসংগ্রাহক সুশীলকুমার চট্টোপাধ্যায় ওরফে নকুবাবুর বিরাট সংগ্রহের একটি প্রদর্শশালা। তার মধ্যে বাঙালির নবজাগরণপর্ব থেকে আজ অবধি নানা ইতিহাসের সাক্ষ্য তো রয়েছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুভেন্দু মাইতির ব্যক্তিগত সংগ্রহের একটি গ্রামোফোন কালেকশন। এ-ছাড়াও থাকছে একটি পুতুলবাড়ি এবং লোকসংকৃতির একটি জাদুঘর। সেখানে ধামসা-মাদল থেকে শুরু করে নানা বাদ্যযন্ত্রের বিবর্তনকে ধরে রাখা হবে নিপুণভাবে। “আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত লোকসংস্কৃতির উপর কোনও সংগ্রহশালা তৈরি হয়নি। অথচ এখানেই তো আমাদের শিকড় নিমজ্জিত।” বলছিলেন শুভেন্দু মাইতি। আসলে বারবার বাঙালিকে তাঁর ইতিহাস মনে পড়িয়ে দিতে চান শুভেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “সপ্তাহে একদিন অন্তত নিজস্ব খাবার খাওয়া এবং বাড়িতে বাংলা ভাষায় কথা বলার রেওয়াজটুকু চলুক সারা পৃথিবীতে।” কাজটা সহজ নয়। কিন্তু অসম্ভবও নয়।