একে কী বলবেন? ভয়, আতঙ্ক, নাকি মমতা ম্যানিয়া? তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে ত্রিপুরায় বিজেপি যা করছে তার রেপ্লিকা এবার গোয়ায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভয়েই থরহরি কম্প গোয়ার বিজেপি নেতারা। নেত্রীর আসার পথে হাস্যকর জনা দশেকের বিক্ষোভ আর তৃণমূল কংগ্রেসের হোর্ডিংয়ের পাশে হঠাৎই জয় শ্রীরাম লেখা নয়া হোর্ডিংয়ের আবির্ভাব। পরিবেশটা বুঝিয়ে দিচ্ছিল আসলে ভয় পেয়েছে বিজেপি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমানবন্দর থেকে সবে বেরিয়েছেন, খানিকটা পথ এগোতেই বিজেপির যুব মোর্চার কয়েকজন সমর্থক জয় শ্রীরাম বলে চেঁচিয়ে রাস্তায় কালো পতাকা দেখানোর তোড়জোড় শুরু করে। যদিও বিক্ষোভ শুরুতেই শেষ। গোয়ায় বিজেপির এই হাস্যকর, ছেঁদো হইচই দেখে নেত্রী তাঁর ট্রেড মার্ক ভঙ্গিতে গাড়িতে যেতে যেতে প্রতি-নমস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। দৃশ্য দেখে বিক্ষোভকারীরাই হতভম্ব। বিজেপির যুব মোর্চার সদস্যরা থমকে গেলেন। যাঁর বিরোধিতা করতে পাঠানো হয়েছে তাদের, তিনিই কিনা জয় শ্রীরামের পাল্টা নমস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন! এ তো আগে দেখা যায়নি! আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় পা রেখেই বুঝিয়ে দিলেন তাঁর আসায় থরহরি কম্প গোয়ার বিজেপি।
আরও পড়ুন-বিতর্ক এড়াতে পদ ছেড়ে দিলেন সৌরভ
গোয়ার বিজেপির নেতারা তো আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নার্ভের সঙ্গে পরিচিত নন। না হলে তৃণমূলনেত্রীর গোয়া সফরের আগে বড় রাস্তার মোড়ে কেউ জয় শ্রীরামের বড় হোর্ডিং ঝোলায়! যাঁর নার্ভের পরীক্ষা নিতে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের ভাইদের পাঠিয়েছিলেন, সব দেখেশুনে গোয়া বিজেপির দাদারাই নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গোয়ার ভাস্কো বিমানবন্দরে নামার আগেই সেখানে তুমুল ভিড়। নেতা-কর্মী-সমর্থক তো বটেই, বিমানবন্দরে ঢোকা-বেরনোর মুখে যাঁরাই তাঁকে দেখলেন, বিস্ময়ের রেশ ছুঁয়ে গেল তাঁদেরও। বিমানবন্দরের ভিতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানান, গোয়ায় দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি লুইজিনহো ফালেরিও এবং ডেরেক ও ’ব্রায়েন। বাইরে অপেক্ষায় অসংখ্য কর্মী-সমর্থক। পঞ্জিম ছাড়িয়ে ডোনা পাওলায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে যখন তিনি ঢুকলেন তখন আরবসাগরের তীরে সন্ধ্যা নেমেছে। ফালেরিও সাংবাদিকদের বললেন, গোয়াকে বিজেপি শেষ করে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০২২-এ গোয়ায় সরকার গড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। এরা বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। সবকিছুতেই বাধা দিচ্ছে। এভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকানো যাবে না। গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে বুঝে নেবে। বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালো পতাকা দেখিয়েছে, এটা গোয়ার সংস্কৃতি নয়। গোয়ার নির্দল বিধায়ক প্রসাদ গাঁওকার এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। বেরনোর সময় বলে গেলেন গোয়ার বর্তমান সরকারের আমলে কোনও কাজই করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে গোয়ায় পরিবর্তনের দরকার।
আরও পড়ুন-সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ
শুক্রবার একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সকাল ১০টায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে গোয়ার তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি শুরু হবে। দিনভর রয়েছে একাধিক বৈঠক ও সংগঠনের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা। এর মাঝেই দুপুর একটায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় পা রাখার দিনেও কংগ্রেস থেকে অসংখ্য তরুণ-তরুণী বাংলার মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন। আগামী বছরের গোড়ায় গোয়ায় বিধানসভার নির্বাচন। কীসের ইঙ্গিত? সময়ই বলবে।
আজকের কর্মসূচি
* সকাল ১০টা : স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক, ডোনা পাওলা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে
* দুপুর ১২টা : মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মত আদান-প্রদান পাঞ্জিমের বেতিমে
* বেলা ১টা : সাংবাদিক সম্মেলন ডোনা পাওলা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে
* বিকেল ৩.৩০ : পন্ডাতে প্রিওল মুঙ্গেশি মন্দিরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী
* বিকেল ৪টে : পন্ডার মারদোলে মহালসা নারায়ণী মন্দিরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী।
* বিকেল ৪.৩০ : পন্ডার কুন্ডাইম তপোভূমি মন্দিরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী।
* বিকেল ৫.৪৫ : ডোনা পাওলা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক