প্রতিবেদন : পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাঁদের সেই মনোয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জানাল তৃণমূল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তা, এরপরেও যাঁরা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে দাঁড়াবেন, চিরকালের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের দরজা তাঁদের জন্য বন্ধ। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই বার্তা শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়ে দেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-মুখোশ খুলে গেল আব্বাস-নওশাদদের
একইসঙ্গে দলের তরফে এদিন স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী সপ্তাহ থেকে প্রচারে ঝাঁপাবে দল। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই ভোট প্রচারের ময়দানে নামতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার বিকেলে কালীঘাটে নেত্রীর বাসভবনে দলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৫০ জন নেতা-নেত্রীদের একটি টিম রাজ্য জুড়ে টানা ১৫-২০ দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার করবে। এই ক’দিন দলীয় নেতৃত্বের সমস্ত ছুটি বাতিল।
আরও পড়ুন-যতবার কেন্দ্রীয় বাহিনী-ততবার জয়
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর হয়ে আমাদের আবেদন করে বলতে বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হতে পারেননি তাঁদের কষ্ট-যন্ত্রণা তিনি বোঝেন। তাঁদের বিষয়ে দল ভাববে। কিন্তু দলের নির্দেশ অমান্য করে মনোনয়ন জমা করে থাকলে তা প্রত্যাহার করে নিন। কিন্তু এর পরেও যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়াবেন আজীবন তাঁদের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েও দল স্পষ্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী এল কি এল না তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না। এর আগে ২০১১, ’১৩, ’১৬, ’১৯ এবং ২০২১ সালেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন হয়েছে তাতে বিপুল ভোট জয়ী হয়েছে দল। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বাংলার মানুষের আশীর্বাদ ও শক্তিতেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা জিতবে— এই আত্মবিশ্বাস দলের রয়েছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকির একটি ভিডিও চালিয়ে দেখান কুণাল ঘোষ। সেই ভিডিওতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আইএসএফ আসলে বিজেপির ভোট-কাটুয়া। বিজেপির দালাল আব্বাস সিদ্দিকি স্পষ্ট বলছেন, আমরা যারা বিজেপিকে ভালবাসি তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেব কেন! একইসঙ্গে নওশাদ সিদ্দিকির বিজেপি নেতাদের পাঠানো হোটসঅ্যাপ-চ্যাট নিয়েও গোপন আতাঁতের জবাব চেয়েছে দল। এর সঙ্গে রাজ্যপাল রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টের মতো আচরণ করছেন জানিয়ে গত দু’দিনে তাঁর কার্যকলাপের কড়া সমালোচনা করেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধায়-সহ সকলে। এদিন নবজোয়ারের অভিজ্ঞতা দলের নেতাদের সঙ্গে ভাগ করে নেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিষয়ে আরও বেশি করে মানুষের কাছে তথ্য ও পরিসংখ্যান-সহ তুলে ধরার সিদ্ধন্ত নিয়েছে দল।
আরও পড়ুন-বিএসএফের গুলিতে নিহত গ্রামবাসী, পরিবারের পাশে তৃণমূল
এদিকে এদিনই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এদিনের বৈঠকে জঙ্গলকন্যা মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে আদিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা ও কাজকর্মে আলাদা করে নজর দিতে বলেন। একইসঙ্গে ভাঙড়ের সাংগঠনিক বিষয়ে বিধায়ক শওকত মোল্লার পাশাপাশি সব্যসাচী দত্তকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বীরবাহা হাঁসদা।