প্রতিবেদন : থামার কোনও লক্ষণই নেই। সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির হার। এককথায় ডবল সেঞ্চুরি। আগেই সেঞ্চুরি পার করেছে পেট্রোলের দাম। এখন লিটার প্রতি ১০৭ টাকা ৭৮ পয়সা। পাল্লা দিচ্ছে ডিজেলের দামও। কোচবিহার-সহ রাজ্যের ছ’টি জেলায় সেঞ্চুরি পার করে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী ডিজেলের দাম। স্বাভাবিকভাবেই জনজীবনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বাড়ছে সবজির মূল্য। ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, বিনস এবং শিমের মতো সবজিতে হাত দেওয়াই মুশকিল। কেজিপ্রতি সেঞ্চুরি পার করে এগুলির দামও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। ক্যাপসিক্যাম ২০০ টাকা পার করেছে। টম্যাটো ১০০ টাকা। দুশ্চিন্তায় পরিবহণ মালিকরাও।
এ নিয়ে অভিনেতা বিধায়ক চিরঞ্জিৎ বলেন , “একটা আশ্চর্য সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। হু হু করে বেড়ে চলেছে তেলের দাম। শিল্পী এবং অবশ্যই জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে সমাজের সর্বস্তরে। সবজি, অন্যান্য নিত্য- প্রয়োজনীয় জিনিসেরও দাম বেড়ে চলেছে তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্যই। কেন্দ্রের মোদি সরকারের কোনও হুঁশ নেই। ভাবতে অবাক লাগে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এত আন্তরিকভাবে এগিয়ে চলেছেন, একের পর এক সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত করার চেষ্টা করছেন, তখন মোদির দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেই কেবলমাত্র এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।”শিবাজি চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “মোদি সরকারের থেকে নরেন্দ্র মোদি আরও ভয়ঙ্কর। যা খুশি তাই করছেন। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েই চলেছে, প্রধানমন্ত্রীর কোনও হেলদোল নেই। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার বদলে তা বাড়িয়েই চলেছেন তিনি। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানার কোনও চেষ্টাই করছেন না। শুধুই বড় বড় কথা। ”
আরও পড়ুন :হিমাচলে আটকে পড়া ৩ পরিবারকে উদ্ধার সেনার
ইন্দ্রাণী হালদার বলেন,” জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমি তো এখন কোথাও যাওয়ার আগে একটা রুট ম্যাপ করে নিই। যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত পথ বেছে নিই। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে জনজীবনের একটা সর্বাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের উপর তার প্রভাব তো পড়বেই। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের স্বার্থে অনেক কিছুই করছেন। রাজ্যের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। আমার অনুরোধ, কেন্দ্রীয় সরকারও সাধারণ মানুষের সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করুক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃৃদ্ধি রোখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।” রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছন তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানেই সাধারণ মানুষের উপরে ভীষণ চাপ সৃষ্টি করা। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আসলে যা কিছুই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, তা সাধারণ মানুুষের কথা ভেবেই নেওয়া উচিত। শুধু বড়লোকদের কথা ভাবলে চলবে না। গরিবদের কথা বেশি করে ভাবতে হবে। দাম বাড়লে তাঁদের চলবে কী করে। তেলের দাম কমানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এদিকে পেট্রোলের পর এবার রাজ্যে সেঞ্চুরি করলও ডিজেলও। শনিবারই রাজ্যের ছ’টি জেলায় ডিজেল লিটার প্রতি একশো ছাড়িয়েছে। যদিও শহর কলকাতায় ডিজেল প্রায় একশো ছুঁইছুঁই। এই অবস্থায় এবার ডাবল সেঞ্চুরি করল সবজিও। একে বৃষ্টি, তার ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের দৌলতে আকাশ ছোঁয়া পেট্রোপণ্যও। এই অবস্থায় বাজারে অধিকাংশ সবজির দামই উর্ধ্বমুখী। শনিবার কলকাতার আশপাশের বাজারগুলিতে ক্যাপসিকাম বিক্রি হয়েছে দুশো টাকার আশপাশে।
আরও পড়ুন :ভোট প্রচারে অভিষেক ঝড়
শুধু ক্যাপসিকামই নয় টম্যাটো, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি সব সবজির দামই কার্যত ধরাছোঁয়ার বাইরে। শহর থেকে শহরতলীর বাজারগুলোতে টম্যাটো মিলছে প্রায় একশো টাকায়। শিমের দামও প্রায় তারই কাছাকাছি। মোটামুটি ভালো সাইজের ফুলকপি কিনতে খসাতে হচ্ছে চল্লিশ বা পঞ্চাশ টাকার মতো। বাঁধাকপি মিলছে ৬০ টাকা প্রতি কেজি দরে। সব মিলিয়ে বাজারের গরীব ও মধ্যবিত্ত নাজেহাল। তবে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। শনিবার সকালেই সল্টলেক সহ একাধিক বাজারে নজরদারিতে নামেন এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা। কালোবাজারি হচ্ছে কিনা তা খুঁটিয়ে দেখেন তারা।
পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে পরিবহণ শিল্পে। বাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। কলকাতায় যেখানে আগে বাস, মিনিবাস মিলিয়ে চলত প্রায় ৭৫০০টি। এখন শহরে সেই সংখ্যাটাই ২০০০-এর কম। শুধুমাত্র শুক্রবার থেকে শনিবারেই বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে প্রায় ৫০০টির মতো। তাও লোকসানের দোহাই দিয়ে মালিকরা পথে নামাচ্ছেন না বাস। রাজ্য সরকার অবশ্য গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। মালিকদের দাবি, লোকসানের কারণেই বাস নামাতে পারছেন না তাঁরা। বেসরকারি বাস মালিকদের দাবি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। অফিস-স্কুল স্বাভাবিক নয়। এখনও অনেক অফিসেই চলছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। ফলে যাত্রী কম। লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ায় যাত্রীসংখ্যা আরও কম। পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে মধ্যবিত্তকে। শুধু তাই নয়, জ্বালানির অস্বাভাবিক দামে চরম সংকটের মুখে পরিবহণ শিল্প। খরচ সামাল দিতে না পেরে রাস্তা থেকে উঠে যাচ্ছে একের পর এক বেসরকারি বাস। পরিস্থিতি যে দিন দিন তাঁদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে তা জানাচ্ছেন বেসরকারি বাস মালিকরা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খবরে শোনা যায়, পেট্রোলের দাম ৩৪ পয়সা ও ডিজেলের দাম ৩৫ পয়সা ফের বাড়ল। যেন এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে প্রতিদিনই সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষগুলির মধ্যে এর প্রভাব পড়ছে বহুগুণ। প্রতিদিনই বাড়ছে সবজি, চাল, ডাল, মাছ, মাংস এমনকী প্রসাধনী সামগ্রীর দামও। একই পরিমাণ জিনিস কিনতে প্রতিদিনই অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বাজার সেরে কিছু মুখে দিয়ে এবার অফিসের পথে বেরিয়েও পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। হয়তো নির্দিষ্ট রুটের বাস পাওয়াই যাচ্ছে না কিংবা বাস মিললে ভাড়াবাবদ গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বাসের ভাড়া বাড়ানোতে সায় দেননি। তা সত্ত্বেও প্রতি স্টপেজে ৪ থেকে ৬ টাকা করে বাড়িয়ে নিয়েছে বাসগুলি। তার ওপর কমেছে বাসের সংখ্যা। ফলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ঠাসাঠাসি ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে বাসে। কিন্তু যাঁদের এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই প্রতিদিন অফিস যেতে হচ্ছে, তাঁরা পড়েছেন মহাফ্যাসাদে। দেরি হলে অফিসের বসের কথা শুনতে হবে, এদিকে বেশি টাকার ভাড়া দিতে রাজি হয়েও বাস না পেয়ে রাস্তাতেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।