প্রতিবেদন : কলকাতা পুরভোটে মানুষের আশীর্বাদে বিপুল জয়ের পর এবার তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য আরও বেশি করে উন্নয়ন ও মানুষের কাজ করা। এবং পরবর্তী পর্যায়ের পুরভোটগুলিতে জয়লাভ। এখনও পর্যন্ত যা সূচি, তাতে হাওড়া, চন্দননগর, শিলিগুড়ি, বিধাননগর ও আসানসোল— এই পুরসভাগুলিতে ভোট ২২ জানুয়ারি। বাকি সবক’টি পুরসভার ভোট ২৭ ফেব্রুয়ারি।
আরও পড়ুন-দুই অধিনায়ক তত্ত্বে সায় দিয়ে শাস্ত্রী
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সবক’টি পুরসভাতেই জয়লাভ এবং বোর্ড গঠনের লক্ষ্য নিয়ে নামবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবরকম প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। নেতৃত্বের তরফ থেকে পুর এলাকাগুলিতে প্রাথমিক বার্তা পৌঁছে যেতে শুরু করেছে।
১. এখন থেকেই আরও নিবিড় জনসংযোগ চাই। যে পার্টগুলিতে তৃণমূলের লিড আছে এবং যে পার্টগুলিতে সর্বশেষ বিধানসভা ভোটে লিড কম বা লিড নেই— সর্বত্র জনসংযোগ বাড়াতে হবে।
২. তৃণমূল কংগ্রেস ও তার সবক’টি শাখা ও গণসংগঠনকে একসূত্রে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
৩. তৃণমূল যেখানে স্থানীয় উন্নয়ন করেছে, মানুষকে জানাতে হবে। যেখানে বিরোধীরা কাজ করেনি, তার প্রচার বাড়াতে হবে। তৃণমূল আরও ভাল কী কী করতে চায়, তা তুলে ধরতে হবে।
৪. মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যতরকম উন্নয়ন ও সামাজিক স্কিম চলছে, সেগুলি বারবার মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে। আবার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির বসছে। সুষ্ঠুভাবে সবাই যাতে সুযোগ পান, সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ না করেও মহল্লাগতভাবে নজর রাখতে হবে। কেউ সাহায্য চাইলে পাশে থাকতে হবে। অন্য দল বলে পরিচিত পরিবারগুলি যদি দ্বিধা বা সঙ্কোচে দূরে থাকেন, তাঁরাও যাতে এইসব সুবিধে পান তার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
আরও পড়ুন-আই লিগের শুরুতেই বিতর্ক, সই-জটে ৯ ফুটবলার নিয়ে মাঠে রাজস্থান
৫. স্থানীয় বা ওয়ার্ডের নেতারা ছাড়াও প্রতিটি পার্টে সেই বুথের বাসিন্দা— কর্মীদের সেই এলাকার বাড়ি বাড়ি প্রচারে সক্রিয়ভাবে রাখতে হবে। যাতে পরবর্তীকালে পার্ট স্ক্রুটিনির সময় কাজ অনেকটা মসৃণ হয়।
৬. দলের প্রার্থী নিয়ে এখন থেকে আলোচনার বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ ও জোড়াফুল প্রতীক সামনে রেখে প্রচার বাড়াতে হবে। দল যথাসময়ে যোগ্যতম প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন দেবে।
৭. তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিগুলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সরকারি কর্মসূচি যাতে যথাযথভাবে হয় দেখতে হবে। সেই সঙ্গে এই শীতের মরশুমে ক্লাব বা অরাজনৈতিক মঞ্চের ব্যানারে নানা কর্মসূচি, সামাজিক বা অন্য অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে শামিল হতে হবে। জনসংযোগ বাড়াতে হবে। তবে নজর রাখতে হবে কোনওভাবে যেন কোনও মানুষ বিরক্ত না হন।
৮. শীতের মরশুম। দরিদ্র মানুষদের মধ্যে যেখানে যেমন দরকার, শীতবস্ত্র বিতরণের কাজ যথাসম্ভব করতে হবে।
৯. যেসব এলাকায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীরা কিছু ভোট পেয়েছে, সেগুলিতে জোর দিতে হবে। যাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে অন্য দলকে ভোট দিয়েছিলেন, সেই ভোট ফিরিয়ে আনতে হবে। মহল্লা, পাড়া, পার্টের ভিত্তিতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তৃণমূলকে ভোট কেন দেওয়া দরকার, কী কী কাজ হচ্ছে, সবিনয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে। কেন প্রতিপক্ষ খারাপ, তাদের জনবিরোধী নীতি, গোষ্ঠীবাজি, জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি, বিশ্বাসঘাতক তৎকাল বিজেপিদের চরিত্র মানুষকে মনে করিয়ে দিন। বিরোধীদের কুৎসার জবাবে যুক্তিসম্মত প্রচার করুন।
১০. তৃণমূলের কোনও অংশ অভিমানে দূরে থাকলে তাদের একসঙ্গে দলের কাজে শামিল করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে মেটান।
আরও পড়ুন-আজ এমপি কাপের প্রথম সেমিফাইনাল
১১. বিরোধীরা যদি কোনও এলাকায় জুলুম করে, প্ররোচনা দেয়, তাতে পা দেওয়া চলবে না। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানান। তাঁদের নির্দেশমতো চলুন। তৃণমূলের লক্ষ্য, শান্তিতে বিপুল ভোটে জিতে আসা।
১২. তৃণমূল কর্মীরা এমনিতেই সারাবছর সক্রিয় থাকেন। যেসব জায়গায় দল বিপুলভাবে এগিয়ে, সেখানেও কোনওরকম আত্মসন্তুষ্টি যেন না থাকে। জনসংযোগ ও জনসেবা অব্যাহত রাখুন। যখন যেভাবে দরকার, মানুষের পাশে থাকুন।
ফলে এখন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস এমনভাবে কাজ শুরু করবে যাতে জেতা জায়গাগুলিতে লিড বাড়ে। এবং কিছু কিছু পিছিয়ে থাকা এলাকা আবার লিডে পরিণত হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে এই লড়াই আমরা আবার জিতব।
এবার পুরভোটগুলির তিনরকম গুরুত্ব।
আরও পড়ুন-জিএসটি : ট্যুইটে সরব অমিত মিত্র
এক. ওয়ার্ডগুলির উন্নয়ন।
দুই. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় রাজ্য সরকারের সব স্কিমের সুবিধে বাড়ি বাড়ি ব্যক্তিস্তরে পৌঁছে দেওয়া।
তিন. সর্বভারতীয় রাজনীতির বিশেষ তাৎপর্য। সারা ভারত বাংলার দিকে তাকিয়ে। বাংলা মডেলের দিকে তাকিয়ে। তৃণমূল গোটা দেশে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় স্তরে বিকল্প মুখ।
এই অবস্থায় পুরসভাগুলিতেও বিপুল জয় নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস।