প্রতিবেদন : উত্তাল দ্বীপরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। রাজাপক্ষে পরিবারের হাতে থাকা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমজনতার। জনগণের ক্ষোভ সামলাতে শুক্রবার গভীর রাতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু তারপরেও বিক্ষোভ থামার লক্ষণ নেই। পাল্টা ধরপাকড় চালাচ্ছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন-রেকর্ড গরম
দু’দিন আগেই শ্রীলঙ্কার মজুত ডিজেল সম্পূর্ণ নিঃশেষিত। ডিজেল না থাকায় থমকে গিয়েছে দেশের গণপরিবহণ ব্যবস্থা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে গোটা দেশ। রাজধানী কলম্বোয় দৈনিক গড়ে ১৮ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এবার প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল ভারত। শনিবার ত্রাণ নিয়ে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে ভারতের জাহাজ। কলম্বোয় ১০ কোটি ডলারের ক্রেডিট লাইনে ৪০ হাজার টন ডিজেল পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। শনিবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে ডিজেল বণ্টনের কাজ। এর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় বিপুল পরিমাণ চাল ও ওষুধ পাঠিয়েছে ভারত।
আরও পড়ুন-আজব দাবি
স্বাধীনতার পর থেকে কখনও এ ধরনের আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েনি শ্রীলঙ্কা। অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্য, ওষুধ, তেল, কাগজ, কালি কোনও কিছুই আমদানি করার মতো বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারে নেই। করোনাজনিত কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চরম মন্দা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দ্বীপরাষ্ট্রের পর্যটন শিল্প বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার উপর চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ মেটাতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-সুর নরম!
টমাস নামে কলম্বোর ৭০ বছরের এক প্রবীণ ব্যক্তি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশে পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস কিছুই মিলছে না। ওষুধ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দাম এতটাই বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। তাঁর ৭০ বছরের জীবনে তিনি কখনও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়েননি বলে টমাস জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। যাঁদের হাতে টাকা রয়েছে তাঁরাও জিনিস কিনতে পারছেন না। বড় শপিং মল থেকে শুরু করে ছোট দোকান, যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই শুনছেন, চাল, ডাল, রুটি, তেল কোনও কিছুই নেই। এক পাউন্ড পাউরুটির দাম হয়েছে শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় ১০০ টাকা। এক কাপ চায়ের দামও ১০০ টাকা। কীভাবে সাধারণ মানুষ এত দাম দিয়ে জিনিস কিনে বেঁচে থাকবে, বলে প্রশ্ন তোলেন টমাস।
আরও পড়ুন-প্রাক্তন স্বামীকে খোরপোশ, নির্দেশ শিক্ষিকাকে, বেনজির রায় হাইকোর্টের
ডিজেলের অভাবে দু’দিন ধরে শ্রীলঙ্কায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা প্রায় স্তব্ধ। বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালে অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধের সঙ্কট চলছে। চরম সঙ্কটের হাত থেকে উদ্ধার পেতে ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিল কলম্বো। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারত সরকার ডিজেল, চাল ও ওষুধ পাঠিয়েছে। চলতি পরিস্থিতিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কারণে গোটা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার ফলে দেশের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে গিয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। দেশের চলতি সঙ্কটের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তার জেরেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-”সরফরোশী কী তমন্না”
শুক্রবার রাতেও গল, কলম্বো, মরাতুয়া, মোতেরা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটন। করোনার কারণে পর্যটনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ও বিপুল পরিমাণ ঋণ দেশের আর্থিক মন্দাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ফাঁসে বন্দি দেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করারও ক্ষমতা নেই এখন। খাদ্যশস্যের দাম আকাশছোঁয়া। মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৮.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। চলতি আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যেই বেলআউট প্যাকেজ চেয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কাছে। ভারত-চিন-সহ কয়েকটি দেশের কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জিও জানিয়েছে।