মণীশ কীর্তনিয়া: রেলের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এক বড়সড় র্যাকেটের যোগসাজশের বলি রেলেরই দাপুটে হেড টিটি। শিয়ালদহ ডিভিশনের ঘটনা। পণ্য পরিবহণনকে কেন্দ্র করে রেলের একশ্রেণির অফিসার ও কর্মীর সীমাহীন দুর্নীতিতে রেলের প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই র্যাকেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েই এখন কাজ থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে শিয়ালদহ ডিভিশনের দাপুটে টিটি অরুণাভ দত্তকে। বেশ কয়েকমাস ধরে তাঁর বেতন বন্ধ৷ সঙ্গে বাড়তি পাওনা সামাজিক অসম্মান।
আরোও পড়ুন-রেল নিয়োগে দুর্নীতি, মামলা
অথচ রেলের যে অফিসার, চেকিং স্টাফেদের বেআইনি কাজের জন্য অরুণাভ দত্তর এই অবস্থা তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি সুবিচার চেয়ে ক্যাটে আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আপস করতে রাজি নন। শিয়ালদহে বিভিন্ন জায়গা থেকে একাধিক ট্রেনে প্রতিদিন প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল-সহ যাবতীয় কাঁচামাল ছাড়াও অন্যান্য সামগ্রীও ঢোকে। তবে একশ্রেণির চেকিং স্টাফ ও অফিসারের সঙ্গে যোগসাজশে সেই মাল অবাধে বেরিয়ে যায় রেলের প্রাপ্যের থেকে অনেক কম টাকা দিয়ে। বাকিটা বুঝে নেন চেকিং স্টাফেদের একাংশ। অবশ্যই যথার্থ সেটিং-এর মাধ্যমে। পুরো লেনদেনই হয় নগদে। দিন-রাত মিলিয়ে শিয়ালদহে দূরপাল্লা-সহ ট্রেনের সংখ্যা অনেক। ওইসব ট্রেনেই চলে সেটিং করে বেআইনি পণ্য পরিবহণ। আয়ও প্রচুর।
আরোও পড়ুন-রেলের উচ্ছেদ রুখতে বিধায়ক
২০২১-এ আচমকা রেলের ভিজিল্যান্স অভিযান চালালে কয়েকজন টিটিকে হাতনাতে ক্যাশ সমেত ধরেন অফিসাররা। কিন্তু কোনও কিছুতে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় অরুণাভ দত্তকে। এরপরেই শুরু আসল খেলা। যারা বমাল ধরা পড়েছিল সাসপেন্ড হওয়া সত্ত্বেও অদ্ভুত ম্যাজিকে ৬ মাসের মধ্যে আবার চাকরিতে বহাল হয়ে যান। কিন্তু র্যাকেটের সঙ্গে আপস না করায় ফাঁপরে পড়েন অরুণাভ দত্ত। যিনি এক সময় বেআইনি ভাবে পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে হায়েস্ট কালেক্টর ছিলেন। অবৈধ কারবার দেখলেই ফাইন করতেন। অরুণাভ দত্তকে প্রথমে দোষ স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন কোনও বেআইনি কারবারে জড়িত না থাকায় ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। পরে তাঁকে বদলি করা হয় অন্যত্র। এবার তিনি প্রতিবাদ করেন।
আরোও পড়ুন-পূর্ব বর্ধমানে সফরে শিলান্যাস, সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর, ৫১২ কোটির প্রকল্প পেল জেলা
এরকম চলতে চলতেই আচমকা বেতন বন্ধ করে দেয় রেল। বাধ্য হয়েই এবার আদালতের দ্বারস্থ। ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস কংগ্রেসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপক কাঞ্জিলাল বলেন, এ বড় অদ্ভুত ঘটনা। অপরাধী জানলেন না তাঁর অপরাধ! অথচ সাজা হল৷ রেলের নিয়মে ভিজিল্যান্স কাউকে দোষী বলে জানালে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে হয়। এক্ষেত্রে সেসব কিছু হয়নি। আমরা ইউনিয়নের তরফে রেলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কোনও সদুত্তর পাইনি। আরও কত স্টাফের ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে কে জানে!