রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম
ভক্তেরা পথে লুটায়ে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে, ‘আমি দেব’, রথ ভাবে, ‘আমি’।
মূর্তি ভাবে, ‘আমি দেব’— হাসে অন্তর্যামী।
সেই পুরাণকালে শুরু হয়েছিল রথযাত্রা (Rath Yatra) । নানা দেবতার মূর্তিকে সুসজ্জিত রথে চড়িয়ে শোভাযাত্রা বের হত। অগণিত নরনারী দেবদর্শনে ভিড় জমাতেন। মহোৎসবে মেতে উঠতেন তাঁরা। এমনই সুপ্রসিদ্ধ রথযাত্রা অন্তত ন’শো বছর আগে জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তি নিয়ে শুরু হয় নীলাচলে। পুরীর প্রাচীনতম মন্দিরে অধিষ্ঠিত আছেন জগতের পালনকর্তা জগন্নাথ দেব, ভাই বলভদ্র আর বোন সুভদ্রা। তাঁদের রথযাত্রা তো ওড়িশা তথা ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পুরীর মন্দিরে সবার প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ থাকলেও রথের রশি টানতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। মন্দির তো দেবতার বাসগৃহ, আর রথ তাঁর বাহন। কিন্তু পথ যে সবার। তাই দেবতাই নেমে আসেন পথে, ভক্তজনের মাঝে। ভক্তের আকুতিতে সাড়া দিতে। সেখানে কোনও বাছবিচার, বাধার প্রাচীর থাকে না। ভক্তের আকুতি মানে জনগণের ইচ্ছা। এই ‘জনগণের ইচ্ছা’ বা Will of the People গণতন্ত্রেরও মূলমন্ত্র। ইংরেজ দার্শনিক জন লক্ তাঁর সামাজিক চুক্তির মতবাদে জনাদেশকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারও শতবছর আগে বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস লিখেছিলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ গণতন্ত্রের এটিই মূল নির্যাস। গণতন্ত্রে কোনও দেবতা সংসদে বা অট্টালিকায় বাস করেন না। কারণ, গণতন্ত্রে জনগণই স্বয়ম্ভু। জনতা-জনার্দনই এই তন্ত্রের স্রষ্টা ও রক্ষাকর্তা। এমনটা নয় যে, জনতার আশীর্বাদে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে সংসদের সিঁড়িতে মাথা ঠেকিয়ে ভেতরে সিংহাসনে বসে রাজধর্ম পালন না করে মানুষকেই তাদের নায্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা চলে । অথচ তাই ঘটছে। এ ঘোরতর অন্যায়, অবিচার ও মানুষের চরম অপমান।
আরও পড়ুন: বিধানচন্দ্র থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মোদিজি! আপনি দেবতা নন, এমনকী বিগ্রহও নন। ক্ষমতার রথে চড়ে দেশের সর্বস্ব যারা লুঠ করছে, আপনি তাদের সাথী। আর ওরা আপনার সারথি। মানুষকে প্রতারণা করে এগিয়ে যেতে চাইছেন। মানুষের বেঁচে থাকার, খেটে খাওয়ার ইচ্ছাকে প্রতিদিন পদদলিত করে চলেছেন। এ কোনওমতেই গণতন্ত্র হতে পারে না। এটি বিষময় এক কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা। তাই তারা আপনার রথের (Rath Yatra) রশি আর টানবে না। আজ জাগ্রত জনতার সমবেত সংগীতধ্বনি কি তোমরা শুনতে পাও না— ওই যে চাকা ঘুরছে ঝনঝনি/বুকের মাঝে শুনছ কি সেই ধ্বনি/রক্তে তোমার দুলছে না কি প্রাণ/গাইছে না মন মরণজয়ী গান/আকাঙ্ক্ষা তোর বন্যাবেগের মতো/ছুটছে না কি বিপুল ভবিষ্যতে/উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে/ ওই যে তিনি, ওই যে বাহির পথে…॥