প্রতিবেদন : নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনে এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা ও তাঁর দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী বাংলা জুড়ে এই মুহূর্তে বিজয়া সম্মিলনীর সভা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সভাগুলিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় তৈরি হয়েছে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই এক ছবি। জেলায় জেলায় সভাগুলিতে উপচে পড়ছে ভিড়৷ বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি নজর কাড়ছে সব সভাতেই।
আরও পড়ুন-লজ্জা! বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে মোদির ভারত ১০৭ নম্বরে
স্থানীয় সাংসদ-বিধায়ক সহ জেলাস্তরের অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব একসঙ্গে উপস্থিত থেকে বিজেপি যেভাবে কুৎসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির বাতাবরণ তৈরি করেছে তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠছেন। আসলে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন। জেলার এই সভাগুলিতে রোজই যোগ দিচ্ছেন কোনও না কোনও রাজ্য নেতা বা নেত্রী। কেন্দ্রের বঞ্চনা, প্রতিহিংসা, রাজ্যের পাওনা আটকে রাখা বক্তৃতায় উঠে আসছে সব।
আরও পড়ুন-বউবাজারে মেয়র-মুখ্যসচিব, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিপূরণ, প্রথম লক্ষ্য পুনর্বাসন
পুজোর পর দলের এই বিজয়া সম্মিলনীর সভাগুলি হয়ে উঠেছে কার্যত মিলনতীর্থ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। মঞ্চে তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে৷ তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। সার্বিকভাবে বিষয়টি এরকম—
১. স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ চেহারাটা চোখে পড়ছে সব সভায়।
২. সভাগুলিতে রাজ্য কমিটির একজন অন্তত নেতা উপস্থিত থাকছেন।
৩. ১৯৯৮ সাল অর্থাৎ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার দিন থেকে যাঁরা দলের সঙ্গে ছিলেন সেই পুরনো নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।
৪. জেলায় দলের সর্বস্তরের সাংগঠনিক নেতৃত্ব থাকছেন মঞ্চে। সবমিলিয়ে দলের নতুনরা তো আছেনই, সঙ্গে পুরনো সিনিয়র নেতা-নেত্রীরাও বিজয়া সম্মিলনীর সভায়-মঞ্চে যথাযথ মর্যাদায় উপস্থিত থাকায় ও মাঠে নামায় সভাগুলির গুরুত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনই ধারে ও ভারে বিরোধীদের বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসই বাংলার মানুষের কাছে একমাত্র বিকল্প। অন্য কোনও দল নয়। সভাগুলি পরিণত হচ্ছে সমাবেশে।
আরও পড়ুন-বাংলা সাহিত্যে খাবার
শনিবার যেমন ভগবানপুর ২ ব্লকের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এদিনের সমাবেশ ঐতিহাসিক চেহারায় ধরা পড়ল। কুণাল ঘোষ বলেন, এখনও পর্যন্ত যে ক’টি সমাবেশে গিয়েছি নিঃসন্দেহে ভগবানপুর ২-এর সমাবেশ বৃহত্তম। মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। যত মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হতে পেরেছিলেন তার থেকে বেশি মানুষ বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, ভগবানপুর-২ এবং কাঁথিতে পরপর তিনটি সমাবেশে যোগ দেন কুণাল। আজ রবিবার তমলুক-নন্দীগ্রাম ও কলকাতার শ্যামপুকুরের সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি।
আরও পড়ুন-বাংলা সাহিত্যে খাবার
জেলায় বিজয়া সম্মিলনীর সভাগুলিতে দেখা যাচ্ছে মঞ্চের ব্যাকড্রপে দুটি ছবি। একদিকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যদিকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ দু’জনের কেউই উপস্থিত নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাজ সামলাচ্ছেন। আর অভিষেক চোখের চিকিৎসার জন্য বিদেশে৷ কিন্তু তাঁদের ছবিকে সামনে রেখেই লাখো মানুষের ভিড় হচ্ছে। সমাবেশে মুহুর্মুহু দিদি-দিদি স্লোগান উঠছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ শোনা যাচ্ছে। এদিন সমাবেশে যোগ দিয়ে মহিলাদের দিকে আঙুল তুলে কুণাল ঘোষ বলেন, ওই দিদিটার নাম মমতা, ওই বউদির নাম মমতা, ওই বোনের নামও মমতা। ফলে সশরীরে নেত্রী উপস্থিত না থাকলেও, অভিষেক না থাকলেও তাঁদের ছবিকে ঘিরেই উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে থাকছে।
আরও পড়ুন-আজ নন্দীগ্রাম যাচ্ছেন কুণাল, পতাকা ছিঁড়ে তৃণমূলকর্মীদের মেরে নন্দীগ্রামে গেরুয়া-সন্ত্রাস
এদিন ভগবানপুরের সভায় নতুন সভাপতি অম্বিকেশ মান্নাকে বিশেষ সংবর্ধনা জানান কুণাল ঘোষ। পুরনো দিনের নেতা মানব সাহাকেও সম্মান জানানো হয়। এছাড়াও বিজেপিতে চলে গিয়েও ফিরে আসা কয়েকজন দলীয় কর্মীকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমে ৫০০ সভার টার্গেট রাখলেও দেখা যাচ্ছে সভার সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে যাবে। ওয়ার্ডগুলিতেও বিজয়া সম্মিলনী শুরু হয়ে গিয়েছে। এভাবে এই পর্যায়ে একলপ্তে ৩০ লাখ সাংগঠনিক কর্মীকে মাঠে নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষের কাছে প্রত্যক্ষভাবে পৌঁছে যাচ্ছে দল।