জয় জওয়ান

পরপর দুটো ব্লকবাস্টার। নিজের স্টারডমের পাশাপাশি বলিউডের মান রাখলেন শাহরুখ খান। রুখে দিলেন দক্ষিণী-ঝড়। অ্যাটলি পরিচালিত তাঁর ‘জওয়ান’ ভেঙে চলেছে একের পর এক রেকর্ড। চোখে আঙুল দিয়ে কিং খান দেখালেন এভাবেও ফিরে আসা যায়। অ্যাকশন প্যাক এই ছবিতে রয়েছে ভরপুর বিনোদনের রসদ। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

পর্দায় আগুন
নানারূপে তিনি। কখনও কাঁচাপাকা চুলদাড়ি। কখনও মুণ্ডিতমস্তক। কখনও অবতীর্ণ চিরচেনা লুকে। দুই বাহু আকাশের দিকে ভাসিয়ে, গালে টোল খেলানো হাসি ছড়িয়ে। তিনি ভক্তের ভগবান বলিউড-বাদশাহ শাহরুখ খান। আরও একবার পর্দায় লাগালেন আগুন। তাঁর ‘জওয়ান’-ঝড়ে (Jawan) এই মুহূর্তে তোলপাড় গোটা দেশ। সমালোচকদের বাঁ হাতে সরিয়ে এগিয়ে চলেছেন রাজার হালে। ভেঙে চলেছেন নিজেরই একটার পর একটা রেকর্ড।

দীর্ঘ নীরবতার পরে
২০১৮-য় ‘জিরো’ ডিজাস্টার। তারপর নেমেছিল দীর্ঘ নীরবতা। তিনি খতম, বলেছিলেন অনেকেই। বাদশাহ-ম্যাজিক হয়তো সত্যিই অস্তমিত, মনে করতে শুরু করেছিলেন অন্ধ ভক্তরাও। ক্রমশ গোটা দেশে প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছিল দক্ষিণী সিনেমা। ধীরে ধীরে পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছিল বলিউড।

দুর্দান্ত কামব্যাক
এর মধ্যেই ম্যাজিক। সমস্ত হিসেবনিকেশ ওলটপালট। তাঁর দুর্দান্ত কামব্যাক। ‘পাঠান’-এর মধ্যে দিয়ে। চোখে আঙুল দিয়ে শাহরুখ দেখালেন, এভাবেও‌ ফিরে আসা যায়। সম্প্রতি ‘জওয়ান’ তাঁর ফেরাকে আরও জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠা দিল। সিনেমা হলের বাইরে আবার মালা উঠল তাঁর ছবিতে, কাট আউটে। দেখা গেল ভক্তদের বাঁধভাঙা উন্মাদনা। হারতে হারতে আবার বিপুল জয়ের আনন্দ। সর্বত্র চলছে সাফল্যের মেগা-সেলিব্রেশন। সিঙ্গল স্ক্রিন হোক বা মাল্টিপ্লেক্স— তাঁর প্রতিটি হিট ডায়লগের পরিসমাপ্তি ঘটছে কানফাটা সিটি এবং হাততালিতে। অবিকল নয়ের দশকের মতো। একটি সাক্ষাৎকারে অনুপম খেরকে শাহরুখ বলেছেন, ‘আমিই বলিউডের শেষ তারকা।’ কথাটা যে নির্ভুল, আরও একবার প্রমাণিত। গত পাঁচ বছরে বলিউডে এসেছে অসংখ্য ছবি। বেশিরভাগই ব্যর্থ। তার মধ্যে করোনার থাবা। তলানিতে ঠেকেছিল হিন্দি ছবির ব্যবসা। শাহরুখ খানই আবার তুমুল জোয়ার আনলেন প্রায় মজে যাওয়া নদীতে। একক ক্ষমতায়। রুখে দিলেন দক্ষিণী-ঝড়। ব্যাক টু ব্যাক দুটো ব্লকবাস্টার দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, বক্স অফিসে আজও বেতাজ বাদশাহ তিনিই। কোনও বিকল্প নেই তাঁর। এইভাবেই নিজের স্টারডমের পাশাপাশি মান রক্ষা করলেন বলিউডের।

আরও পড়ুন- বাংলায় কারখানা তৈরির আগ্রহ, স্পেনীয় সংস্থার সঙ্গে বৈঠক, মুখ্যমন্ত্রীর পাশে আজ শিল্প সম্মেলনে থাকবেন সৌরভ

গরিবের অধিকারের গল্প
এই ছবি বলেছে গরিবের অধিকারের গল্প। ভুল সরকারি নিয়মে নষ্ট হয়ে যায় একজন জওয়ানের জীবন। পরবর্তী সময়ে তাঁর ছেলে সেই সরকারি নিয়মকে কাজে লাগিয়েই নিয়মের বদল ঘটান। শুধরে দেন সমাজের অসঙ্গতিগুলো। গল্পের বিষয়বস্তু মূলত এই। সেইসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে সামাজিক সমস্যার নানা দিক। যেমন কৃষক আত্মহত্যা, রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি ইত্যাদি। দেশে যে ‘আচ্ছে দিন’ আসেনি, পরতে পরতে দেখিয়ে দিয়েছে ছবিটি। সেই সঙ্গে এসেছে প্রেম, রোমান্স। রয়েছে একের পর এক ট্যুইস্ট। যা রীতিমতো দর্শকদের চমকে দেয়।

দুর্দান্ত অভিনয়
স্টার এবং অভিনেতাকে পৃথক বন্ধনীতে বসাতে পছন্দ করেন অতিবিজ্ঞ সমালোচকরা। যুক্তি, স্টার হলেন জনপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে শুধুমাত্র মাসের সম্পর্ক। ক্লাসের আভিজাত্যের সঙ্গে কোনওভাবেই যায় না। অভিনেতা হলেন ক্লাসের জন্য। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের। বিজ্ঞদের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন শাহরুখ খান। তিনি দেশের অন্যতম সেরা সুপারস্টার। পাশাপাশি অত্যন্ত উঁচু মাপের অভিনেতা। আগেও প্রমাণ করেছেন। এবারেও করলেন। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় ‘জওয়ান’-এর (Jawan) বড় সম্পদ। নিজেই ভেঙেছেন নিজের ইমেজ। বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখালেন ডবল রোলে। রোমান্সের পাশাপাশি ফাটিয়ে করলেন অ্যাকশন। জমিয়ে চাষ করলেন অনভ্যস্ত জমিতে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন বিজয় সেতুপতি। খলচরিত্রে তিনি এককথায় অনবদ্য। পর্দায় যতবার এসেছেন, ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন। নিজের চরিত্রে প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছেন নয়নতারা। তাঁকে দেখা গেছে স্পেশাল অফিসারের ভূমিকায়। হিন্দি ছবির দর্শকদের কাছে এই দক্ষিণী সুন্দরী নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেছেন। আছেন কিং খানের লাকি চার্ম দীপিকা পাড়ুকোনও। ছোট্ট একটি চরিত্রে তিনি উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে। পাশাপাশি লাহার খান, সানিয়া মালহোত্রা, প্রিয়মণি, ঋদ্ধি ডোগরাও, সুনীল গ্রোভাররা যথেষ্ট সাবলীল। বাকিদের অভিনয়ও ঠিকঠাক।

কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা
একেই বলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। শাহরুখ দক্ষিণী-ঝড় থমকে দিলেন দক্ষিণী পরিচালক অ্যাটলির হাত ধরে। বলিউডে এটাই অ্যাটলির প্রথম কাজ। বলা যায় এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। দক্ষ হাতে পরিচালনা করেছেন ছবিটি। শাহরুখের জন্য বেছেছেন উপযুক্ত চিত্রনাট্য। শ্যুটিং করেছেন হায়দরাবাদ, চেন্নাই, মুম্বই, রাজস্থান, পুনে, ঔরঙ্গাবাদের বিভিন্ন লোকেশনে। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে, সেকেন্ডে সেকেন্ডে ছিল তাঁর তীক্ষ্ণ নজর। তাই কোথাও টাল খায়নি। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো অতি যত্নে বুনেছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেখেছেন টানটান উত্তেজনা। সংযম এবং আবেগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন যথাযথভাবে। একশো শতাংশ মশালা মুভিতে যা যা প্রয়োজন, রাখার চেষ্টা করেছেন। সবমিলিয়ে উপহার দিয়েছেন ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের একটি পয়সা উসুল ছবি।

নতুন ইতিহাস
সিনেমার হাইপ এবং রেজাল্ট নিয়ে কনফিডেন্ট ছিলেন শাহরুখ। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল পজিটিভ। তাই ছবির সাফল্যে খুশি তিনি, অবাক নন। দেশে তো বটেই, বিদেশেও রমরমিয়ে চলছে ‘জওয়ান’ (Jawan)। ভরপুর বিনোদনের টানে হলমুখী হচ্ছেন দর্শকরা। প্রথম সাতদিনে দেশে কামিয়েছে ৩০০ কোটির বেশি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ৬৫০ কোটি। সামনে খোলা মাঠ। ব্যবসা আরও কয়েকগুণ বাড়বে। এরমধ্যে ছবির ওটিটি রাইটস কিনে নিয়েছে নেটফ্লিক্স। ২৫০ কোটিতে। রেড চিলিজের মুনাফার অঙ্ক শেষপর্যন্ত কোন উচ্চতা ছোঁবে, আন্দাজ করা মুশকিল। তবে এটুকু বলা যায়, এই ছবি লিখতে চলেছে নতুন ইতিহাস। তাই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইলে টিকিট কেটে হলে ঢুকে পড়ুন। শাহরুখ ভক্ত হন বা না হন, ‘জওয়ান’ (Jawan) আপনাকে আনন্দ দেবেই।

Latest article