লন্ডন : ব্রিটেনে ইতিহাস। দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন ঋষি সুনক (UK PM- Rishi Sunak)। ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের সন্ধিক্ষণে ব্রিটেনের মাটিতে তৈরি হল নতুন অধ্যায়। এই প্রথম সে দেশে কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ১০ নম্বর ডাউলিং স্ট্রিটের মালিক হতে চলেছেন। ২৮ অক্টোবর শপথ নেবেন ঋষি।
কিন্তু ব্রিটেনের কনজার্ভেটিভ দল টোরিতে ঋষির (UK PM- Rishi Sunak) নির্বাচন মসৃণ ছিল না। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন ঋষি। বরিস সরে যেতে বাধ্য হলে লিজ ট্রুস ও ঋষির মধ্যে শুরু হয় লড়াই। সে সময় শেষ হাসি হাসেন লিজই। কিন্তু লিজের দুর্ভাগ্য, প্রধানমন্ত্রী থাকার ৪৫ দিনের মাথায় তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ব্রিটেনের সবচেয়ে কমসময়ের প্রধানমন্ত্রী লিজ। এরপর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে নিয়ে জটিলতা বাড়তে থাকে।ফের লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েন বরিস জনসন, ঋষি এবং পেনি মরড্যান্ট। বরিস পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে যান ক্যারিবিয়ন দ্বীপপুঞ্জে। দিনকয়েক আগে ফিরে আসার পরেই ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসে চাকা ঘুরে যায়। বরিস জানিয়ে আসছিলেন তাঁর সমর্থনে প্রায় দেড়শোর বেশি এমপি রয়েছে। এরপর মাস্টারস্ট্রোক দেন ঋষি। বৈঠকে বসেন বরিসের সঙ্গে। দীর্ঘ বৈঠক শেষে বরিস জানিয়ে দেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের লড়াই থেকে সরে আসছেন। ঋষিকে আশ্বস্ত করে শোনান, তাঁর অনুগত এমপিরা সকলেই ঋষিকে ভোট দেবেন। সেইমতো মঙ্গলবার ভোটাভুটি শেষে দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পেনি মরড্যান্টকে নাস্তানাবুদ করে হারিয়েছেন ঋষি। ভোটের ফলাফল ঋষির পক্ষে ১৯৩-২৬।
আরও পড়ুন: বন্দুকবাজের হামলা
বিয়াল্লিশ বছরের ঋষি সুনক মাত্র ৭ বছর আগে ২০১৫ সালে রাজনীতিতে আসেন। ইনফোসিস সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাতা ঋষির বেড়ে ওঠা ব্রিটেনেই। ঋষির ঠাকুরদা ও ঠাকুমা ব্রিটেনে চলে আসে বহু বছর আগে। প্রথম চাকরি শুরু করেন ঠাকুমা। অক্সফোর্ড ও স্ট্যান্ডফোর্ডের কৃতী ছাত্র ঋষি তরুণ প্রজন্মের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ঋষির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, কনজার্ভেটিভ দলকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং দেশের অর্থনীতির ভিত সুদৃঢ় করা। ঋষির বাবা ও মা দু’জনেই ফার্মাসিস্ট ছিলেন। মেধাবী ঋষি অক্সফোর্ডে দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে এমবিএ পাশ করেন। প্রথমে চাকরি এবং তারপর ব্যবসা। এরপর ২০০৯ সালে পুরনো সহকর্মীদের নিয়ে হেজ ফার্ম তৈরি করেন। মূলধন প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাঝে তিনি ইনফোসিসের অধীনস্থ ক্যাটমারান ভেঞ্চার্সের এমডি হন। ২০১৪ সালে প্রথমবার এমপি ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড থেকে। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অর্থবিভাগের প্রধান সচিব হন, চ্যান্সেলরও হন তিনি। আর চ্যান্সেলর পদে ইস্তফা দিয়ে বরিসের বিরোধিতাতেও নেমেছিলেন। স্ত্রী অক্ষ্মতা ও দুই সন্তানকে নিয়ে বরিস এবার উঠে আসছেন ব্রিটেনের হাইপ্রোফাইল ১০ নম্বর ডাউলিং স্ট্রিটে।