প্রতিবেদন : পুতিনের আপত্তি উড়িয়ে ন্যাটোর সদস্যপদ চাওয়ার স্পর্ধা দেখানোয় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের মতোই রাশিয়ার হুমকি উড়িয়ে দিয়ে এবার ন্যাটো জোটের শামিল হওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্বের সুখী দেশ হিসাবে পরিচিত ফিনল্যান্ডও। ন্যাটো জোটে শামিল হওয়া নিয়ে ফিনল্যান্ডের দাবি সামনে আসতেই শুক্রবার বেআইনিভাবে সে দেশের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ল রুশ অ্যাটাক হেলিকপ্টার। কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, এবার ফিনল্যান্ডেও আক্রমণ চালাতে পারে রুশ বাহিনী। তবে ইউক্রেনের পর রাশিয়া যদি সত্যিই ফিনল্যান্ডের দিকে হাত বাড়ায় তবে ইউরোপের একাধিক দেশ, এমনকী আমেরিকাও সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামতে পারে। সেক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন-ফুসফুস থেকে মাদুলি বের করলেন ডাক্তাররা
এদিকে প্ররোচনা ছড়িয়ে রুশ কপ্টার ফিনল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার পর পাল্টা সে দেশের সেনাবাহিনীও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাশিয়া চায় না, ফিনল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য হোক। তাই ফিনল্যান্ড যদি ইউক্রেনের মতো বারবার ন্যাটোর সদস্য হওয়ার দাবি জানাতে থাকে সেক্ষেত্রে রাশিয়া তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ শুরু করতে পারে। অন্যদিকে রুশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় আমেরিকার সেনার সঙ্গে যৌথ মহড়া শুরু করেছে ফিনল্যান্ডের বাহিনী। এর ফলে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। এমনিতেই প্রায় আড়াই মাস যুদ্ধ চালিয়ে ইউক্রেনকে বাগে আনতে পারেনি রাশিয়া। সেই আক্রোশে ধ্বংসলীলা ও অসামরিক ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি বাড়িয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন-সাধারণ দর্শকদের জন্য খুলে গেল রাধা স্টুডিও
যত সময় গড়াচ্ছে ততই ধৈর্য হারিয়ে আরও নৃশংস আচরণ করছে পুতিন বাহিনী। ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের আজভস্টল ইস্পাত কারখানায় আটকে থাকা প্রায় হাজারখানেক সাধারণ মানুষ ও ইউক্রেনীয় সেনাকে উদ্ধার করার জন্য সামরিক যুদ্ধ বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিল রুশ সেনা। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা করেও তারা এদিনও নির্বিচারে ইস্পাত কারখানা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। এই ঘটনায় একজন ইউক্রেনীয় সেনার প্রাণ গিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভনডার লিয়েনকে উদ্দেশ্য করে ওরবান বলেছেন, আমাদের অবিলম্বে রাশিয়ার ওপর আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাতে রাশিয়ার তেল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সে বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এরই মধ্যে জি-৭ গোষ্ঠীর নেতারা রবিবার ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে একটি বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন-বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স দিবসের আঙিনায় দেশের মহিলা ক্রীড়াবিদরা
এদিকে ক্রমশই সামনে আসছে রুশ সেনার একের পর এক অমানবিক আচরণের কথা। নাবালিকা ও মহিলাদের উপর নৃশংস অত্যাচার কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এবার জানা গেল নাবালক ও যুবকদের উপরেও তারা চরম যৌন অত্যাচার চালাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকেও রুশ সেনার এই পাশবিকতার খবর স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি প্রামিলা প্যাটেন জানিয়েছেন, রুশ সেনার হাত থেকে শুধু নারী নয়, পুরুষ ও নাবালকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাঁদের উপরেও চলছে চরম শারীরিক অত্যাচার। এই ঘটনার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, রাশিয়াকে অবশ্যই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। অন্যদিকে শুক্রবার রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আলেক্সেই জাইতসেভ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলা চালানোর কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই।