বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স দিবসের আঙিনায় দেশের মহিলা ক্রীড়াবিদরা

প্রতি বছর নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। আজ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স দিবসে দেশের মহিলা ক্রীড়াবিদদের সাফল্যকে ফিরে দেখলেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

Must read

বিশ্বের পালনীয় বিভিন্ন দিবসগুলি মধ্যে অন্যতম হল বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স দিবস। প্রতি বছর ৭ মে ‘বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। প্রথম পালিত হয় ১৯৯৬ সালে। ইন্টারন্যাশনাল আ্যমেচার অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন-এর পক্ষ থেকে আটলান্টায় আয়োজিত অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শতবর্ষ উপলক্ষে বিশ্ব আ্যথলেটিক্স দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অ্যাথলেটিক্সে যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ বাড়ানো ছিল মূল উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন-ছায়াছবির উৎসবে

আমরা আজ ফিরে দেখব দেশের একঝাঁক মহিলা ক্রীড়াবিদদের কৃতিত্ব, যাঁদের সাফল্য বিভিন্ন সময় দেশকে গৌরবান্বিত করেছে।
প্রাক্তন ভারতীয় অ্যাথলিট অঞ্জু ববি জর্জকে বিশেষ সম্মান দেয় বিশ্ব অ্যাথলেটিকস সংস্থা। ১৮ বছর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী অ্যাথলিটকে দেওয়া হয় ‘বছরের সেরা মহিলা’র খেতাব। ২০০৩ সাল। প্যারিসে আয়োজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন অঞ্জু ববি জর্জ । প্রথম এবং একমাত্র ভারতীয় অ্যাথিলট হিসেবে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস মিটের পোডিয়ামে ওঠার সম্মান অর্জন করেছিলেন। ৬.৬১ মিটার উচ্চতায় লাফিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন। শেষপর্যন্ত সেই মরশুমের সেরা ৬.৭০ মিটার লাফিয়ে ব্রোঞ্জ পদক পান। তারপর অলিম্পিকেও পদকের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ হাতছাড়া হয় তাঁর। অথচ, এই সব কিছুই তিনি করেন জটিল শারীরিক সমস্যা নিয়ে।

আরও পড়ুন-রায়চৌধুরী পরিবারের এক মুক্তমনা নারী

আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো দু’টি নয়, একটি কিডনি রয়েছে অঞ্জুর শরীরে। এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অলিম্পিকে তাঁর সাফল্য রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে। ভারতের বহু মহিলার কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১৬ সালে নিজস্ব অ্যাথলেটিকস অ্যাকাডেমি খোলেন অঞ্জু। অঞ্জুর অ্যাকাডেমি থেকে ইতিমধ্যেই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী অ্যাথলিট বেরিয়ে এসেছে। আজকের দিনে তাঁর প্রতি থাকল অনেক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
এবার টোকিও অলিম্পিক্সে জিমন্যাস্টিক্সে দেশের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন বাংলার প্রণতি নায়েক। অলিম্পিক্সে দল এবং ব্যক্তিগত বিভাগে নামেন প্রণতি। চারটি ইভেন্টে তাঁকে লড়াই করতে হয়।
২০১৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়। অলিম্পিক্স নিয়ে সুতীর্থা বলছেন, ‘ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে আমার। ভীষণ ভাল লাগছে।’

আরও পড়ুন-বাংলা ভাঙার পুরনো ছক

জুন মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠিত তীরন্দাজি বিশ্বকাপে ছাপ রাখেন দীপিকা কুমারী (বিশ্বের এক নম্বর)। দীপিকা ও তাঁর স্বামী অতনু জুটি বেঁধে সোনা জিতে ইতিহাস লেখেন।
ইচ্ছে ছিল পুলিশের চাকরি করার। পারিবারের বাধায় হয়ে উঠেনি। তবে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি নেশা তৈরি হয়েছিল বছর ৩৮-এর তনুশ্রী লালার। ৩৭তম পশ্চিমবঙ্গ মাস্টার অ্যাথলেটিকস মিটে তিনটি ইভেন্টে সোনা জিতে পরিবার তথা মালদহ জেলার মুখ উজ্জ্বল করেন। এরই পাশাপাশি, অনূর্ধ্ব-৩৫ বিভাগের ৮০০ মিটার দৌড়, ১৫০০ মিটার দৌড় ও ২ কিলোমিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন তনুশ্রী।
প্রথম ভারতীয় মহিলা অ্যাথলিট হিসাবে ২০১৮-তে যুব অলিম্পিকে সোনা জিতে ইতিহাস রচনা করেছিলেন মনু ভাকর। আজকের এই বিশেষ দিনে তাঁকেও অভিনন্দন জানাই আমরা।
ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার কথা আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না। টোকিও অলিম্পিকে টিমমেট অঙ্কিতা রাইনা ও সানিয়া মির্জা টেনিস বিভাগের জন্য দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ৩৪ বছরের টেনিস তারকা শুধু বয়সের বাধাকেই নয়, মা হওয়ার পরও তিনি সেই একই রকম সক্রিয়তা দেখিয়ে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন-বাংলা ভাঙার পুরনো ছক

সাইনা নেহওয়াল। ভারতীয় ব্যাডিন্টনকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করা ও একেবারে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাইনার অবদান অনস্বীকার্য। অলিম্পিক, কমনওয়েলথে পদক জয় থেকে শুরু করে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার, অর্জুন পুরস্কার, পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হওয়া, সাইনার জীবনে রয়েছে নানা কৃতিত্ব। তাঁর জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাও। ভারতীয় তারকা শাটলার ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জিতে ইতিহাস রচনা করেছিলেন।
ব্যাডমিন্টনে তিনি পুরুষ এবং মহিলা অলিম্পিক গ্রুপে পদক জেতা প্রথম ভারতীয়। কমনওয়েলথ গেমসেও সোনা জয়ের নজিরও গড়েছেন ভারতীয় তারকা শাটলার। অনেকেরই জানা নেই ভারতের ব্যাডমিন্টনের তারকা প্লেয়ার কিন্তু ক্যারাটেতেও ব্রাউন বেল্ট জিতেছেন।
পি ভি সিন্ধু পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী-জয়ী একমাত্র ভারতীয় মহিলা শাটলার এ-বছরও ব্যাডমিন্টন বিভাগের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২৬ বছর বয়সি এই শাটলারকে নিয়ে আজও স্বপ্ন দেখেন দেশের তামাম ক্রীড়াপ্রেমীরা।

আরও পড়ুন-শিক্ষাবিদদের মতামত নিয়ে হবে নয়া সিলেবাস

মীনা পাটেলের কেরিয়ারের শুরুতেই তাঁর পকেটে আপাতত ১০টি সোনা, ৫টি রুপো ও ১টি ব্রোঞ্জ-পদক জ্বলজ্বল করছে। ভারতের প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে টোকিও অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২১ বছর বয়সি এই উঠতি তারকাকে নিয়ে রীতিমতো আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন দেশবাসী।
রাজীব গান্ধী খেলরত্ন অ্যাওয়ার্ড-জয়ী ও দেশের এক নম্বর মহিলা টেবিল টেনিস প্লেয়ার মনিকা বাত্রা এ-বছর দেশের হয়ে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই নিয়ে দুটি অলিম্পিকে তিনি অংশ নিয়েছেন। টেবিল টেনিসে হাত ও চোখের দুরন্ত সক্রিয়তাই প্রতিযোগিতায় তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি।
ইউরোপে এক মাসের মধ্যে পাঁচটি সোনা জিতে চমকে দিয়ে ভারতের হয়ে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন অসমের স্প্রিন্টার হিমা দাস। ২০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে মোট পাঁচটি স্বর্ণপদক ছিনিয়ে আনেন হিমা।
ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মিতালি রাজ। মহিলাদের ক্রিকেটে ৬০০০-এর বেশি রান করে সর্বোচ্চ রান প্রাপকের তালিকায় এখন শীর্ষে। মিতালির দৌলতেই ভারতীয় ক্রিকেট দল ২০১৭ সালে মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

আরও পড়ুন-‘সুস্বাদু’ পাওভাজিতে মজেছেন কামিন্স

মেরি কম প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার যিনি ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ৫১ কেজি ফ্লাইট ওয়েট বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেন। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মণিপুরের মেয়ে তিন সন্তানের জননী মেরি কম এখন ভারতীয় মহিলাদের কাছে আদর্শ। অনুপ্রেরণা প্রতিটি ভারতীয় মহিলার কাছে।
বিশ্ব তীরন্দাজের তালিকায় বর্তমানে নবম স্থানে আছেন রাঁচির মেয়ে দীপিকা কুমারী। বেশ কয়েকটি স্বর্ণপদক-সহ তীরন্দাজে তাঁর একাধিক সাফল্য দেশকে গর্বিত করেছে। ২০১২ সালের অলিম্পিকে অষ্টম স্থানে শেষ করে সোনা জেতার যে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছিল দীপিকার, তা-ও পূরণ হয় পরবর্তীতে। পাশাপাশি অর্জুন পুরস্কারও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।

আরও পড়ুন-১৩০ মিটারের ছক্কা মারতে চান পাওয়েল

এবারের মেয়েদের বিশ্বকাপে একের পর এক রেকর্ড করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঝুলন গোস্বামী। যাঁর পরিচিতি এখন ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ নামে। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে অনন্য মাইলস্টোন স্থাপন করেন বাংলার মেয়ে। ৩৯ বছরের জোরে বোলার বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে কেরিয়ারের ২০০ নম্বর একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ঝুলন ছাড়া এই অনন্য ‘ডাবল সেঞ্চুরি’র নজির রয়েছে একমাত্র মিতালি রাজের।

Latest article