সমরেশ চৌধুরী: সুভাষের পর সুরজিৎও (Surajit Sengupta) চলে গেল। আমার (Samaresh Chowdhury) একের পর এক সতীর্থ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমার (Samaresh Chowdhury) নেতৃত্বেই সুরজিৎ (Surajit Sengupta) ’৭৪ সালে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলে। তার আগে মোহনবাগানে দুটো মরশুম খেলায় ওর একটু নামডাকও হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলে এসে ও আমাদের ঘরের ছেলে হয়ে গেল। তবে ইস্টবেঙ্গলে সই করতে সুরজিৎকে তখন বেশ কাঠখড় পোড়াতেও হয়েছিল।
অসাধারণ ফুটবলবোধ আর স্কিল—এই দু’টো জিনিসই সুরজিৎকে সাফল্য এনে দিয়েছে। কৃশানু দে’র আগে সুরজিৎ ছিল শেষ বল প্লেয়ার। যেমন ছিল ড্রিবলিং, তেমন দুই পায়ে জোরালো শট। রাইট উইং থেকে উঠে কত যে গোল করেছে! আমার সঙ্গে ভাল বোঝাপড়া ছিল। ম্যাচের আগের দিন আমাকে সুরজিৎ বলত, কোথায় ওকে বল বাড়াতে হবে। কীভাবে বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে বোকা বানাতে হবে। ১৯৭৮ সালে ডুরান্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ৩-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। ডানদিক থেকে আমার পাস ধরে মোহনবাগান রক্ষণ ভেঙে সেদিন যে গোলটা করেছিল সুরজিৎ, এখনও আমার চোখে ভাসছে। মোহনবাগানে তখন বাবলু, শ্যামলের মতো ডিফেন্ডাররাও ওর নাগাল পায়নি। সম্ভবত ওই বছরই বরদলৈ ট্রফির ফাইনালে আরও একটা স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছিল সুরজিৎ। আমরা ব্যাংকক পোর্ট অথরিটিকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিলাম।
আরও পড়ুন: চিরকালের অজাতশত্রু
সুরজিৎ একাই দু’টো গোল করেছিল। মাঠের দুরূহ কোণ থেকে ও অনেক গোল করেছে। এমনকী কর্নার থেকেও বাঁক খাওয়ানো শটে গোল করতে দেখেছি। ১৯৭৯ সালে আইএফএ শিল্ড সেমিফাইনালে কোরিয়া একাদশের বিরুদ্ধে এমনই একটা গোল করে সুরজিৎ। ইস্টবেঙ্গল তখন ০-১ ব্যবধানে হারছে। হঠাৎ ডান প্রান্ত ধরে উঠে মাঠের দুরূহ কোণ থেকে বাঁক খাওয়ানো শটে গোল করে দেয়। কত স্মৃতি যে মনে পড়ছে। মানুষ হিসেবেও খুব ভদ্র ছিল সুরজিৎ। ফুটবলের বাইরে গানবাজনার প্রতিও ঝোঁক ছিল। তাই ওর সঙ্গে কথা বলতেও ভাল লাগত। এমন এক সতীর্থকে হারিয়ে মনটা বড় ভারাক্রান্ত। ফুটবলার সুরজিতের কীর্তি ভোলার নয়।