সন্দেশখালি ঘুরে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানান, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এসেছি। এমনকী আমি কোথাও দোষী হলে আমার ক্ষেত্রেও আইন সমান হবে। আইন হাতে তুলে নেবেন না। আমরা দেখেছি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বেশ কিছু সম্পত্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে। প্রশাসন আইন অনুযায়ী এর ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেমন আমাদের কাছে খবর এসেছিল, একটি খেলার মাঠ নাকি জোর করে দখল করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আমরা এই ধরনের হলুদ সাংবাদিকতা বা পেইড নিউজের বিরোধী। প্রশাসন প্রত্যেকের অভিযোগ শুনবে। যদি দেখা যায় কোথাও জোর করে জমি দখল করা হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমরা কড়া পদক্ষেপ করব।
আরও পড়ুন-১ জুলাই থেকেই দেশে কার্যকর হবে ৩ সংহিতা আইন
* ইতিমধ্যে সরকার ৯ জনের জমি ফেরত দিয়েছে। অভিযোগ ছিল, জোর করে তাঁদের জমি দখল করা হয়েছিল। এটা প্রমাণ করে আমরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই না। কথা দিলে কথা রাখি।
8 সন্দেশখালির মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। যেমন, খেলার মাঠ হলফ করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ স্থানীয় বিধায়ককে নিয়ে সেই মাঠে যায়। এবং সেই মাঠে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ফুটবল খেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করছে।
* সরকার সক্রিয় নয়, বিজেপির এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যাচার। শিবু হাজরার গ্রেফতার তার প্রমাণ। শিবু এই মুহূর্তে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। শনিবার পর্যন্ত ১৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। একজন জামিন পেয়েছে। পাশাপাশি জানিয়ে রাখা ভাল, গত জানুয়ারিতে ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণের অভিযোগে ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে।
আরও পড়ুন-বিলকিস মামলার আরেক অপরাধীকে দশদিনের প্যারোল দিল গুজরাত হাইকোর্ট
* জমি দখল কিংবা জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলির দ্রুত সমাধান করার জন্য সন্দেশখালিতে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। কেউ যদি ক্যাম্পে যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে বিডিও গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ নিচ্ছে।
* ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যরা সন্দেশখালিতে আসেন এবং স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
8 রাজ্য সরকার ১০ সদস্যের একটি দল পাঠিয়েছিল সন্দেশখালিতে। যার নেতৃত্ব দেন ডিআইজি সিআইডি সোমা দাস। প্রতিনিধি দলটি স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত শুরু করেছে।
* বারাসতের ডিআইজি সাংবাদিকদের জানান, এসপি পদমর্যাদার মহিলা অফিসার সন্দেশখালিতে যান, মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা কেউই ঘটনার মধ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানির কথা বলেননি।
* সংবাদমাধ্যমের থেকে জানা যায়, একটি শিশুকে দুষ্কৃতীরা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। শিশু সুরক্ষা কমিশনের ৬ সদস্যের দল ঘটনাস্থলে যায়। দেখা করে শিশু ও তার মায়ের সঙ্গে। তাদের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়া এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে তারা। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে।
আরও পড়ুন-দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাত, গোয়ায় আপ- কংগ্রেস জোট চূড়ান্ত
* বিজেপি দুষ্কৃতীদের প্ররোচনা দিয়েছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারাই সন্দেশখালিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আবার তারাই প্রশ্ন তুলছে কেন দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেস যখন উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করল তখন বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূলের এক্তিয়ার নিয়ে। বাংলার রাজনীতিতে দাঁত ফোটাতে না পারার কারণে বিজেপি সবসময়ই রাজনৈতিক হীনমন্যতায় ভুগে চলেছে।
* ইচ্ছাকৃতভাবে এক শ্রেণির মিডিয়া প্রচার করল ধৃত উত্তম সর্দার ও বিকাশ সিংকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়নি। কিন্তু ঘটনা হল দু’জনের জন্যই পুলিশ ১০ দিনের হেফাজত চেয়েছিল। যদিও আদালত তা বাতিল করে দেয়।
আরও পড়ুন-প্রধান প্রবেশপথে বসেছে আন্ডার ভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম, নবান্নের নিরাপত্তায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
* বিজেপি নেতা বিকাশ সিংয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ উঠেছিল বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে। থানায় অভিযোগও হয়। এটা তো বাস্তব সত্য যে ধর্ষণকারী কিংবা নারী নির্যাতনকারীরাই তো আর একজন একই দোষে অভিযুক্তকে বাঁচাতে নামবে।
* বাম জমানার কথা কী আমরা ভুলে গিয়েছি? সে সময় কোনও ঘটনা ঘটলেই কাঁদানে গ্যাস আর জল কামানের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সন্দেশখালিতে এর কোনওটাই ব্যবহার করা হয়নি। একমাত্র বসিরহাট এসপি অফিসের ব্যারিকেড যখন বিজেপি কর্মীরা ভেঙে দিতে চেয়েছে, তখন পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। এভাবে কী ন্যায়বিচার চাইতে হয়?
* সেই ঘটনাতেও দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীরা পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়ছে। প্রশ্ন হল, হরিয়ানায় প্রতিবাদী জনতা পুলিশকে আক্রমণ করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় তা করা হচ্ছে না। বিজেপি শাসিত এবং বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির আইন কী আলাদা?
শেখ শআহজাহানের গ্রেফতার প্রসঙ্গে
* রাজ্যের পুলিশ শেখ শাহজাহানকে রক্ষা করছে— এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। যাঁরা এই দাবি করছেন তাঁদের জানা উচিত, পুলিশের এফআইআর-এর উপর কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রাজ্য প্রশাসনের হাত বেঁধেছে এবং শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে!
আরও পড়ুন-দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাত, গোয়ায় আপ- কংগ্রেস জোট চূড়ান্ত
* পার্টি যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো হেভিওয়েট মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করতে পারে, যদি পুলিশ উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরাকে সন্দেশখালিতে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করতে পারে, তাহলে মাত্র একজন অভিযুক্তের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের নম্রতা দেখানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন!
* কে কাশ্মীর থেকে সারদা কর্তাকে ধরেছিল? এটি ছিল রাজ্য পুলিশ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল বরাবরই জিরো টলারেন্স।
* সল্টলেক থেকে সন্দেশখালি মাত্র তিন ঘণ্টার পথ। কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে সেখানে সংবাদ মাধ্যম অনায়াসে পৌঁছতে পারে। ইডি কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানাতে পারলেও, স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে পারেন না! তাহলে ইডির উদ্দেশ্য কী ছিল?
* গদ্দার অধিকারীই শেখ শাহজাহানের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, তিনি তার ‘সঠিক অবস্থান’ সম্পর্কে জানেন। আমাদের জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে, সবার উচিত দলবদলু অধিকারীকে জিজ্ঞাসা করা যে, শেখ শাহজাহান ঠিক কোথায়!
* সুকান্ত মজুমদার এবং অন্যান্য বিজেপি নেতাদের আমাদের দিকে আঙুল তোলার আগে দু’বার ভাবা উচিত। তাঁরা একজন সিবিআই এফআইআর নেমড নেতাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন, যাঁকে আবার বিরোধী দলনেতা বানিয়েছেন। গদ্দার অধিকারীকে ডাকা উচিত দুর্নীতির নেতা বলে।