শহরে এলেই তার রসগোল্লা চাই

Must read

বিশ্বরূপ দে : ঢাকায় নামার পর থেকে রবি শাস্ত্রী খালি আমায় মনে করিয়ে দিতে থাকল, বিশ্বরূপ, যাব কিন্তু। তুমি সব ব্যবস্থা করো। তাই করলাম। তারপর সবাই মিলে গেলাম বঙ্গবন্ধু ভবনে। আমার সঙ্গে শাস্ত্রী তো ছিলই, ছিল বোলিং কোচ ভরত অরুণও। দেখলাম ভারতীয় দলের হেড কোচ খুব মন দিয়ে গাইডের কথা শুনছে। আর বঙ্গবন্ধু ভবন ঘুরে দেখছে। মুজিবুর রহমানের ছবির সামনে বারবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। খুব খুঁটিয়ে ছবিগুলো দেখে আমার কাছে এসে বলল— গ্রেট ম্যান। এখানে না এলে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু অজানা থাকত।

আরও পড়ুন :অনেক হয়েছে, সরকার নিয়ে বীতশ্রদ্ধ গোয়ার মানুষ, মুখ্যমন্ত্রীকে দিচ্ছেন বিশেষ ধন্যবাদ

এই হল শাস্ত্রী। ওর সঙ্গে বেশ কয়েকবার বিদেশ সফরে গিয়েছি। শাস্ত্রী কোচ, আমি ম্যানেজার। যেখানেই যাই না কেন, ও সবার আগে সেখানকার ইতিহাস সম্পর্কে পরিষ্কার জেনে নিত। তারপর সুযোগ পেলেই সেই সব জায়গায় একবার ঢুঁ মেরে আসত। আমি বুঝে পাইনি লোকটা মাঠে এত সময় কাটানোর পর এই উৎসাহ পেল কী করে। কিন্তু শাস্ত্রী এরকমই। কাছ থেকে দেখেছি ভয়ঙ্কর আড্ডাবাজ। গোটা দলের উপর অসম্ভব ভাল নিয়ন্ত্রণ। আসলে টিম ডিরেক্টর হিসাবে ওর প্রথম কাজ ছিল ম্যান ম্যানেজমেন্ট। আর এই কাজটা শাস্ত্রী কোচ হিসাবেও খুব ভাল পারত।
একবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলের ম্যানেজার হয়ে গিয়েছি। দেখতাম ছুটির দিনগুলো ভারতীয় কোচের জন্য বেশি চ্যালেঞ্জের হত। লম্বা সফরে ক্রিকেটাররা পরিবারকে ছেড়ে তিন-চার মাস বাইরে কাটাত। ওদের মোটিভেট করার দায়িত্ব নিত শাস্ত্রী। অস্ট্রেলিয়ায় মনে আছে একবার একদিনের সিরিজ শুরু হওয়ার আগে সবাইকে নিয়ে জঙ্গল-সাফারিতে নিয়ে গেল। সবার হাতে খেলনা বন্দুক। জঙ্গলে যে যাকে খুঁজে পাচ্ছে, খেলনা গুলিতে ঝাঁজরা করে দিচ্ছে! দিনভর এটাই চলল। তাতে একদিনে সবাই চাঙ্গা হয়ে গেল। পুরো ব্যাপারটা শাস্ত্রীর মাথা থেকে এসেছিল। কিন্তু আগে জানায়নি। আগের দিন শুধু টিম মিটিংয়ে বলেছিল, কাল তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আগেই বলেছি, আড্ডা মারতে খুব ভালবাসে শাস্ত্রী। সুযোগ পেলে চোখ রাখে বইয়ের পাতায়। তবে সফরে দেখেছি গোটা দলের সবরকম খোঁজ রাখার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় ধোনির মেয়ে হল। জিভা যখন হয়, ধোনি তখন অস্ট্রেলিয়ায়। শাস্ত্রীকে তখন দেখেছি যে বারবার ধোনিকে বলতে, তুমি দেশে ফিরে যাও। এখন তোমার স্ত্রীর পাশে থাকা উচিত। ধোনি ফিরে যায়নি সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু এই এক ঘটনাই প্রমাণ করে যে দলের সবার প্রতি কীরকম নজর থাকে হেড কোচের। শাস্ত্রীর আরও একটা জিনিস আছে। কলকাতার রসগোল্লা অসম্ভব ভালবাসত। যখনই কলকাতায় এসেছে, আমি ওর কাছে মিষ্টির হাঁড়ি পৌঁছে দিয়েছি। রসগোল্লা দেখলে অদ্ভুত একটা খুশির চেহারা দেখতে পেতাম শাস্ত্রীর মধ্যে।
বিরাটের সঙ্গে ওর রসায়ন ছিল অসাধারণ। ধোনির সঙ্গেও তাই। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই সুপারস্টারের সঙ্গে এই সম্পর্কই প্রমাণ করে যে, শাস্ত্রীর ম্যান ম্যানেজমেন্ট ছিল দুর্দান্ত। নিজে বড় ক্রিকেটার ছিল কিন্তু কখনও নিজের জ্ঞান বিরাটদের উপর চাপিয়ে দেয়নি। ঠিক যতটুকু দরকার, ততটুকুই বলেছে। তবে গোটা দলের উপর অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ ছিল এই সওয়া ছ’ফুটির। ভারতীয় দলে কিন্তু শাস্ত্রীর অভাব অনুভব করবে বিরাট-রোহিতরা।
( লেখক প্রাক্তন সিএবি সচিব ও বিদেশ সফরে ভারতীয় দলের ম্যানেজার )

Latest article