আজব গণতন্ত্র রে ভাই, আজব গণতন্ত্র
গণের জোরে গণকে ঠেকায় গণদ্বেষী মন্ত্র।
এই ছড়াটা আওড়ানোর কারণ একটাই। ২০১৪-এ ভোটে জিতে ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি ও পিএমশ্রী মোদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলেন। আর ঠিক তখন থেকেই গণতন্ত্রের দমবন্ধ করা পরিবেশের শুরু। তখন থেকেই ভারতীয় গণতন্ত্রের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল শুধু হিংসা, বিচ্ছিন্নতা আর মিথ্যার বেসাতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের খেলা। সঙ্গে যোগ হল বিপুল টাকার তহবিলের আত্মম্ভরিতা।
এরই জেরে বিপন্নতা বাড়ছে, রক্তাক্ত হচ্ছে গণতন্ত্র। বিশ্বজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে ভারতের বুকে কায়েম হওয়া একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা। সব দেশের রিপোর্টই বলছে, মোদিবাবুর আপন দেশে, গণতন্ত্র সর্বনেশে। মোদিরাজ আজ দেশের মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে খাদের কিনারে। এখন সামনে বিজেপি, পিছনে মৃত্যু। দু’টোই বোধহয় আজ সমার্থক ।
আরও পড়ুন-নারী জাগরণ ঘটিয়েছিলেন কমলাদেবী
ভারতের অহংকার তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র। আজ সেই দেশের অলঙ্কার হয়ে উঠেছে সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় মৌলবাদ। যখন ধর্মের মৌলবাদে দেশটাকে মুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তখন বোঝাই যায় এর পিছনে ওই জঞ্জাল পার্টির কোনও নিজস্ব অ্যাজেন্ডা আছে। ভারতাত্মার সুরের সঙ্গে সেই অ্যাজেন্ডা না মিললেও জোর করে তার প্রয়োগ করার চেষ্টা তাই শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে সেই প্রচেষ্টার নেতৃত্বে লোডশেডিং অধিকারী ওরফে কায়দা অধিকারী।
মোদি-শাহরা জানেন স্বৈরতন্ত্রের দুটো শর্তের কথা। এক, বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করে দাও, তাদের হেনস্থা কর। আর দুই, গোয়েবলসের মতো অহরহ মিথ্যা প্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দাও। হিটলারের সেই অলিখিত নিজস্ব কায়দাই আজ বিজেপির উত্থানের পথ। তার প্রক্রিয়া গোড়া থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিল। তখন তার স্বরূপ বোঝা যায়নি। আজ সেই ঝুটা গণতন্ত্রের নখ, দাঁত বেরিয়ে এসেছে। এই দেশে রাজভক্ত ছাড়া কেউ আর গলা তুলে কথা বলতে পারবেন না। বিরুদ্ধ স্বরকে স্তব্ধ করতে একের পর এক জেলের দরজা খুলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। লেলিয়ে দিচ্ছে এজেন্সিগুলোকে নানাভাবে।
আরও পড়ুন-কনের খোঁজে
শুধু সাংবিধানিক মূল্যবোধ নয়। ওরা বদলে দিচ্ছে দেশের ইতিহাসটাও। একদিন যাঁরা বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার লড়াই করেছিলেন, তাঁদের আজ প্রায় সকলেই পিছনের সারিতে। আর সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় ইংরেজদের কাছে ‘প্রভু, আর কোনওদিন করব না, আমাকে রেহাই দিন’ ধরনের ক্ষমাভিক্ষা চেয়ে পাঁচবার চিঠি লেখা নেতারা আজ বিরাট বড় দেশভক্ত হিসাবে স্বীকৃত হচ্ছেন! তাঁদের পার্টিই মানুষকে দেশভক্তি শেখাচ্ছে।
এহ বাহ্য! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় মানুষকে উত্তেজিত করে বলছেন, দেশ কি গদ্দারো কো…। সমবেত জনতা দেশাত্মবোধের বাষ্পে ফুঁসে উঠে বলে, গোলি মারো শালোকো। ভক্তদের উত্তেজিত করে গণতন্ত্রের পুজো করার এ কোন নোংরা খেলা, কোন ছিন্নমস্তা রাজনীতি? বিজেপির আর এক মহিলা সদস্য, তিনি শত্রু নিধনের জন্য ঘরে ঘরে ছুরি শানিয়ে রাখতে বলেছেন। চারিদিকে শুধু হেট স্পিচ, সেখানে ভালবাসার নিরুদ্ধ দ্বার। এই ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয়েছে শীর্ষ আদালতকেও। ঠিক এই মুহূর্ত থেকেই হিংসা ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অশুভ চক্রান্ত রুখে দিতে না পারলে সোনার ভারতকে একদিন এরা শ্মশান করে ছেড়ে দেবে, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
আরও পড়ুন-জি-২০ তে গুরুত্ব বাংলার কৃষ্টিকে
সত্যি বলতে কি, আমরা আজ গণতন্ত্রের এক অন্ধকার অধ্যায়ের সাক্ষী। এখানে নীরব মোদিদের মতো মার্কা মারা চোরেরা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে আর কেন্দ্রের সমালোচনাকারী বিরোধী নেতাদের জেলে পোরা হবে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন, বিশুদ্ধতার প্রতীক হতে চাওয়া বিজেপির মন্ত্রিসভা ও পরিষদীয় দলে কেন থাকবেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরা? বিজেপি নেতারা এসবের কোনও জবাব দেন না। তাঁরা শুধু বলেন, চুপ, গণতন্ত্র চলছে!
মোদিজিদের কি বাবুভাই বোখিরিয়ার নামটা মনে পড়ে? নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন বাবুভাই তাঁরই মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। খনি কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৫৪ কোটি টাকা চুরির অভিযোগে তাঁর তিন বছরের সাজা হয়। সাজা পাওয়ার পর সেদিন কিন্তু নরেন্দ্র মোদি তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেননি বা তাঁর সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, এ-রাজ্যে নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তাঁদের ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের পদক্ষেপের কথাটা ভেবে দেখবেন, প্লিজ।
আরও পড়ুন-‘মোদি হটাও, দেশ বাঁচাও’ পোস্টার এবার গুজরাতেই
মোদিবাবুদের আজ শুধু একটা কথাই মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। বিরোধী নেতাদের জেলবন্দি করলেই যদি সমস্যা মিটে যেত, তাহলে আর পৃথিবীর কোনও স্বৈরশাসকেরই পতন হত না। মধ্যযুগে স্বৈরশাসকরা সফল হয়নি, আধুনিক সময়েও তা হয়নি। হিটলাররা কিছুদিন দমন করতে পারে, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানাতে পারে, কিন্তু বিনাশ তাদের হবেই। ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি যেন কথাটা মনে রাখে।