প্রতিবেদন : ভারতীয় দণ্ডবিধির সংস্কারের নামে গেরুয়াকরণের পথ প্রশস্ত করতে নতুন বিল আনল কেন্দ্রীয় সরকার। তাই ভারতীয় দণ্ডবিধির নাম পাল্টে রাখতে চায় ভারতীয় ন্যায়সংহিতা। শুক্রবার বিল পেশের পরেই মোদি সরকারের ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দেশদ্রোহ আইন (Sedition Law) বাতিল করার কথা বলেও নতুন মোড়কে তা আরও কঠোর করতে চলেছে মোদি সরকার। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিপন্ন করার অভিযোগে প্রস্তাবিত ভারতীয় সংহিতা সুরক্ষা বিলের ১৫০ ধারায় দেশদ্রোহ আইনের বিধানগুলি কার্যকর করার প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমান দেশদ্রোহ আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি জেলের মেয়াদ ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে। নয়া বিল অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। দেশদ্রোহ আইনের (Sedition Law) মতো ব্রিটিশ জমানার আইন বজায় রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। অথচ সেই আইন বাতিলের কথা বলেও কার্যত আইনকে আরও কড়া করতে চায় বিজেপি সরকার।
সংসদে বিল উত্থাপনের সময় এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার আছে। আমরা সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বাতিল করছি।’’ এছাড়াও অমিত শাহ ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন বদল করতে এবং গণপিটুনি, নাবালিকাদের উপর যৌন নিপীড়নের জন্য মৃত্যুদণ্ড, গণধর্ষণের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করার জন্য বিল পেশ করেছেন। শাহের পেশ করা বিল অনুযায়ী, ভারতীয় দণ্ডবিধির বদলে এবার সেটা হতে চলেছে ন্যায়সংহিতা। ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এবার হতে চলেছে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা। নতুন বিলে ‘দেশদ্রোহ’ শব্দটি অপসারণ করা হয়েছে এবং কিছু পরিবর্তন সহ ১৫০ ধারায় বিধানটি বহাল রাখা হয়েছে।
নতুন বিধানে বলা হয়েছে, যে কেউ, ইচ্ছাকৃতভাবে বা জেনেশুনে, শব্দ দ্বারা, হয় কথিত বা লিখিত, বা চিহ্ন দ্বারা, বা দৃশ্যমান উপস্থাপনা দ্বারা, বা বৈদ্যুতিন যোগাযোগের মাধ্যমে বা আর্থিক উপায় ব্যবহার করে, বা অন্যথায়, উত্তেজিত বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করে, বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, বা বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের অনুভূতিকে উৎসাহিত করে বা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে; বা এই ধরনের কোনও কাজে লিপ্ত বা সংঘটিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং জরিমানাও দিতে হবে। সংশোধিত আইনে ‘ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনের মাধ্যমে, আর্থিক উপায় ব্যবহার করে’ যোগ করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে ‘উত্তেজিত করার চেষ্টা, বিচ্ছিন্নতা বা সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে বা ভারতের সার্বভৌমত্ব বা একতা ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে’ যোগ করা হয়েছে। তবে উত্তেজনাপূর্ণ বা ঘৃণা, অবমাননা বা অসন্তোষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা ছাড়া আইনানুগ উপায়ে সরকারের পদক্ষেপের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ এই ধারার অধীনে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না।