মনে পড়ে ২ অক্টোবর, ২০১৪-এর কথা। ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেদিন তিনি বলেন, একটি স্বচ্ছ ভারতই হতে পারে তাঁর সার্ধশতবার্ষিকীতে মহাত্মা গান্ধীর জন্য সর্বোত্তম শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাই ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ সফল করার জন্য মোদি সর্বোচ্চ সময়সীমা বেঁধে দেন ২০১৯-এর ২ অক্টোবর। ‘ক্লিন ইন্ডিয়া’ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী এটিকে ‘ন্যাশনাল মুভমেন্ট’-এর আকার দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। আন্দোলনটিকে নিছক ঝাড়ু দিয়ে জঞ্জাল সাফাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা তিনি বলেননি।
আরও পড়ুন-বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা জবাবে তুলোধোনা করে বিধায়কের চ্যালেঞ্জ
তাঁর বক্তব্য ছিল, স্বচ্ছতার এই অভিযানের ভিতর দিয়ে সারা দেশ সবদিক থেকেই কলুষমুক্ত হয়ে উঠবে। গঙ্গার মতো পবিত্র নদী, বায়ু প্রভৃতি যেমন নির্মল হবে, তেমনি দেশ থেকে নির্মূল হবে সমস্ত ধরনের দুর্নীতিও। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আধার সংযোগ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেমেন্ট এবং ২০১৬- তে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকেও এই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ বলে প্রচার করা হয়েছিল। মোদি সরকারের এক দশক পূর্তির বাকি আর কয়েকমাস মাত্র। আর এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সারা দেশে কালো ও জাল টাকার রমরমা। সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম সাইবার ক্রাইম। এই অপরাধচক্রের লক্ষ্য একজন দিনমজুর থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তি— সকলেই। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়নই আজকের ভারতের গণতন্ত্রের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একাধিক প্রাদেশিক সরকারের আয়ু এই নয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতিই ঠিক করে দেয়। এরকমই পরিস্থিতিতে গত ১৯ মে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’হাজারি গোলাপি নোট বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার এক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন-জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে কুর্মিদের ছদ্মবেশে হামলা, কড়া বার্তা অভিষেকের
আরবিআই কিংবা অর্থমন্ত্রক কেউই এই উদ্যোগটিকে ‘নোট বাতিল’ আখ্যা দিতে চায়নি। তবে, ২৩ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০০০ টাকার সমস্ত নোট বাজার থেকে গুটিয়ে নেওয়ার অনড় সিদ্ধান্তই জানিয়েছে কেন্দ্র। আমরা জানি, এই নোটগুলি ওই সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি ব্যাঙ্কে জমা করা কিংবা ব্যাঙ্ক থেকে ছোট অঙ্কের নোটে বদলে নেওয়া যাবে। সরকার জানিয়েছে, এটি তাদের ‘ক্লিন নোট’ পলিসির অঙ্গ। এর পাশাপাশি নানা সময়ে আরও একাধিক যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেছে আরবিআই, তবে সেগুলি নিতান্তই ‘দুর্বল’ বলেই মনে করেন ভুক্তভোগী নাগরিকেরা।
আরও পড়ুন-জঙ্গলমহলে জনপ্লাবন
দু’হাজারি নোট ব্যাঙ্কে বদল বা জমা করা নিয়ে নাগরিকের দুর্ভোগের অভিযোগও আমল দিতে নারাজ আরবিআই কর্তৃপক্ষ। তারা মানতেই চায় না যে, এই ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলির কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে নির্দেশই পৌঁছক না কেন, কয়েকটি ব্যাঙ্ক কিন্তু তাদের মর্জিমতো নিয়মকানুন চালু করেছে। তার ফলে টাকা জমা বা বদল— অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ঝক্কির ব্যাপার হয়ে উঠেছে। বুধবার খোদ রাজধানী নয়াদিল্লির একাধিক ব্যাঙ্কে গিয়ে নাগরিকদের অন্য ধরনের হয়রানিরও শিকার হতে হয়েছে। যত সংখ্যক দু’হাজারি নোট জমা পড়ছে সেই অনুপাতে ৫০০ বা তার নিচের অঙ্কের নোট কাউন্টারে ছিল না। সব মিলিয়ে, ‘ক্লিন নোট’ পলিসিটা ‘ক্লিন ইন্ডিয়া’ ঘোষণার মতো আর-একটা বাগাড়ম্বর মাত্র।