কানপুর, ২৫ নভেম্বর : দশ বছর বয়সে প্রভিন আমরের নজরে পড়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। শিবাজি পার্কে ওরলির বালককে ব্যাট করতে দেখে আমরের মনে হয়েছিল ছেলেটার মধ্যে খেলা আছে। আমরে ঠিক বুঝেছিলেন। জীবনের প্রথম টেস্টে ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষে ৭৫ নট আউট। গ্রিন পার্কে ১৩৬ বলের ইনিংসে শ্রেয়সকে দেখে মনে হয়নি তিনি আগে কখনও টেস্ট খেলেননি।
২০১৪-তে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলে এসেছিলেন মুম্বইয়ের তরুণ। তারপর ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট। সেখানে ট্রেন্ট ব্রিগেড ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে তিন ম্যাচে ২৯৭ রান। স্বভাবতই দরজা খুলে গেল রঞ্জি ট্রফির। প্রথম বছর ৮০৯ রান। পরের বছর ১৩২১। ২০১৭-তে বিরাট কোহলি চোট পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ধর্মশালায় শেষ টেস্টে ডাক পেলেও খেলার সুযোগ হয়নি শ্রেয়সের। বৃহস্পতিবার কানপুরে প্রথম সুযোগে চার বছরের অপেক্ষার দাম সুদে-আসলে উসুল করে নিলেন। অভিষেকে ব্যাট করতে নেমে স্ট্রাইক রেট ৫৫.১৪। সাতটি চার, দুটি ছয়। দিনের শেষে ভারত যে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে ফেলতে পারল, তাতে বড় অবদান রেখে গেলেন গায়ে লিমিটেড ওভার প্লেয়ারের ছাপ পড়ে যাওয়া বছর ছাব্বিশের তরুণ। এদিন, গাভাসকর তাঁর হাতে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিলেন। তার আগে টেস্ট ক্রিকেট ঠিক কী, তা-ও পরিষ্কার করে দেন সানি।
আরও পড়ুন : এক বছর পার রাজপুত্রের প্রয়াণের ,শোক সাগরে ইতালি, আর্জেন্টিনা
রাহানে টসে জিতে আগে ব্যাট নেওয়ার পর মায়াঙ্ক (১৩) শুরুতেই ফিরে যান জেমিসনের বলে। তবে শুভমান (৫২) দাঁড়িয়ে যাওয়ায় চাপ বাড়েনি। কিন্তু পুজারা (২৬) আর রাহানে (৩৫) প্রায় সেট হয়ে গিয়েও উইকেট দিয়ে এলেন কিউয়ি বোলারদের হাতে। রাহানের উইকেট অবশ্য আরও আগে যেতে পারত তাঁর ক্যাচ কিউয়িরা ফেলে না দিলে। রাহানে সেট হয়েও আউট হওয়া অভ্যেস করে ফেলেছেন। এই দু’জনের ফর্ম নিয়ে প্রচুর চর্চা হচ্ছে। শ্রেয়স রান পেয়ে যাওয়ায় তাঁদের উপর চাপ আরও বেড়ে গেল। রাহুল, বিরাট, রোহিত, বুমরা, শামির মতো প্রথম দলের প্লেয়ারদের বিশ্রামে রেখে কানপুরে খেলছে ভারত। এখন মুম্বইতে দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়ক বিরাট ফিরলে শেষপর্যন্ত কাকে বসতে হবে সেটা বড় প্রশ্ন।
অসমাপ্ত পঞ্চম উইকেটে ১১৩ রান উঠে এল শ্রেয়স আর রবীন্দ্র জাদেজার জুটিতে। জাদেজা যখন এলেন, তখন ১৪৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ভারত চাপে। গ্রিন পার্কের এই উইকেটে জেমিসন তিন আর সাউদি একটি উইকেট নিয়েছেন। তবে কিউয়ি স্পিনারদের বল প্রথম দিনই ঘুরেছে। কিন্তু শ্রেয়স আর জাদেজা পাল্টা আক্রমণে যাওয়ায় সুবিধা হয়নি আজাজ, সমারভিলের। জাদেজা ৫০ রানে নট আউট রয়েছেন। তবে দিনের নায়ক সেই শ্রেয়স। প্রায় চার বছর লাল বলের ক্রিকেট খেলেননি। হনুমাকে বাইরে রেখে তিনি কী করে দলে, প্রশ্ন উঠেছিল। আর হয়তো এই প্রশ্ন উঠবে না।
আরও পড়ুন : ২৯শে বসছে তৃণমূল ওয়ার্কিং কমিটি
প্রথম টেস্টে প্রথম দিন ব্যাট করতে শ্রেয়শ অপরাজিত ৭৫ রানে। তাঁর গর্বিত বাবা সন্তোষ আইয়ার বললেন, ‘টেস্ট খেলতে হবে, এই কথাটা সবসময় ছেলেকে বলতেন। স্বপ্নটা সত্যি হল ২৫ নভেম্বর, ২০২১-এ এসে। দিনটা চিরকাল স্পেশ্যাল থাকবে আমাদের কাছে।’ সন্তোষ আরও বলেন, তিনি সব সময় ছেলেকে টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার কথা বলতেন। কারণ এটাই আসল লক্ষ্য। আর ছেলে জবাবে জানাত, হবে। একদিন হবে। তবে এই নিউজিল্যান্ড সিরিজেই যে শ্রেয়সের লক্ষ্য পূরণ হবে, এতটা ভাবেনি আইয়ার পরিবার। তবে শ্রেয়স সুযোগ পাওয়ার পর তাঁরা চেয়েছিলেন, ছেলে এই সুযোগ কাজে লাগাক। শ্রেয়স কিন্তু কথা রেখেছেন।
এদিকে ভালো খেলেও মন ভালো নেই শুভমনের। খারাপ লাগছে বড় ইনিংস খেলতে না পারার জন্য। দিনের শেষে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে শুভমানের দাবি, বল যে এত তাড়াতাড়ি রিভার্স সুইং করতে শুরু করবে, সেটা তিনি আন্দাজ করতে পারেননি। শুভমানের বক্তব্য, ‘‘উইকেটের চরিত্র ও পরিবেশ সঠিক ভাবে বোঝাও ব্যাটসম্যানদের একটা কাজ। লাঞ্চের পর থেকেই যে নতুন বল রিভার্স সুইং করতে শুরু করবে, সেটা আমি বুঝতে পারিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জেমিসন নতুন বলে প্রথম স্পেলটা দুর্দান্ত করল। আমাকে এবং মায়াঙ্ককে এমন জায়গায় বল রাখছিল যে, আমরা অস্বস্তিতে পড়ছিলাম। লাঞ্চের পরেও দারুণ বোলিং করল। এক কথায় দারুণ একটা বোলিং পারফরম্যান্স।’’ একই সঙ্গে সতীর্থ শ্রেয়স আইয়ারকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন শুভমন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শ্রেয়স অভিষেক টেস্টেই অনবদ্য ব্যাটিং করল। লাঞ্চের পর তিন উইকেট হারিয়ে আমরা চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শ্রেয়স ও জাদেজার দুর্দান্ত পার্টনারশিপ সেই চাপ কাটিয়ে দেয়।’’