জমি বিক্রি করে তদন্তের মুখে সিটু নেতা

Must read

বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: বামফ্রন্ট রাজনীতির জমি হারিয়েছে অনেকদিন। এবার আক্ষরিক অর্থেই জমি হারাচ্ছে তারা। কারণ, সিপিএমেরই এক নেতার বিরুদ্ধে দলের জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ এমনই গুরুতর যে, সেই নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গড়েছে সিপিএম। যাঁর বিরুদ্ধে এই পুকুরচুরির অভিযোগ, তিনি একদা উত্তরবঙ্গের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা রবিন রাই।

বহু দুষ্কর্ম এবং অপরাধমূলক কাজ করার পরও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না রবিন। শুধু বলেছেন, ‘দল যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তার সামনে হাজির হয়ে আমার স্বপক্ষে তথ্যপ্রমাণ দাখিল করব।’ আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাটের কাঁঠালতলা ও ধানহাটি এলাকায় দুটি জমি কেনা ছিল সিপিএমের দলীয় কার্যালয় তৈরির জন্য। দলের অভিযোগ, দলকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে কাঁঠালতলার ৩৩ শতক জমি ২৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন সিটুনেতা রবিন রাই। দল সিপিএমের দুই রাজ্য সম্পাদককে নিয়ে দুই সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সেই দুই সদস্য হলেন শিলিগুড়ির বাম নেতা জীবেশ সরকার ও জলপাইগুড়ির সলিল আচার্য। এই তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে রবিনকে।

আরও পড়ুন : কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে দেওয়া হবে উপযুক্ত শাস্তি, হুমকি বাইডেনের

জমিবিক্রি প্রসঙ্গে মুখ না খুললেও রবিন বলেন, ‘এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরে কিছু বলব না। সময়মত তদন্ত কমিটির সামনে অবশ্যই হাজির হব।’ তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে খোঁজ করে জানা গিয়েছে, জমিবিক্রির টাকা নিয়ে নাকি কোনও দুর্নীতি হয়নি, টাকা দলীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই জমা আছে! এমনিতেই ক্রমশ জনভিত্তি হারাচ্ছে বামেরা। তৃণমূল কংগ্রেসের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের সামনে দিশাহারা তারা। এই অবস্থায় এক সিটুনেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তাও আবার বিরোধীরা নয়, উঠেছে নিজের দলেরই পক্ষ থেকেই, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে ক্ষয়িষ্ণু বাম আদর্শকে আঁকড়ে ধরতে চাওয়া নবীন প্রজন্মকে।

কে এই রবিন রাই বীরপাড়ার বাসিন্দা রবিন রাইয়ের বাবা ছিলেন চা-বাগানের কর্মচারী। চা-বাগানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। বড় হয়ে চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে যুক্ত হন। বাম রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন সর্বক্ষণের কর্মী। তাঁর স্ত্রী দলগাঁও চা-বাগানের হেড ক্লার্ক। বাম আমলে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন রবিন। তাঁর অঙ্গুলিহেলনে চলত চা-সাম্রাজ্যের সমস্ত কিছু। ২০০৯-এ বীরপাড়ার দলগাঁও চা-বাগানে যে শ্রমিক বিক্ষোভ ঘটেছিল, তাতে বন্ধ ঘরে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ১৯ জন শ্রমিককে। সে ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশের খাতায় রবিনের নামও ছিল। বছর ৫৬-র রবিন দলের বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে সিটুর রাজ্য কমিটির সদস্য এবং কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার চা-মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।

Latest article