কেপটাউন, ১৩ জানুয়ারি : শেষবেলায় আবার সেই ডিন এলগার বনাম ভারত (South Africa vs India)। কখনও ব্যাটের মাঝখানে খেললেন, কখনও ব্যাটের কানায়। কখনও দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি, কখনও কপালজোরে রক্ষা। কিন্তু বিস্তর টেনশন দিয়ে দিনের দেশে এলগার ফিরে গেলেন ৩০ রানে। আর তাতেই জো’বার্গের দুঃস্বপ্ন সাড়ম্বরে চেপে বসতে গিয়েও থমকে গেল বিরাট স্বস্তি দিয়ে (South Africa vs India)।
অশ্বিনের বলে এলবি-র সিদ্ধান্তটা কেটে গিয়েছিল হক-আই ক্যামেরায়। বল উইকেটের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল। সিদ্ধান্ত বদল করে নট আউট জানালেন আম্পায়ার। এলগার তখন ২৭। মাঠেই একরাশ ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করে ফেললেন বিরাট। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আগের টেস্টে জেতার পর বলেছিলেন, সামনে থেকে লড়াই করা তাঁর স্কুল জীবনের অভ্যাস। এদিনও সেটাই চলছিল। তবে নিউল্যান্ডসে শেষপর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে যেতে পারলেন না। এদিন পাশে পেয়েছিলেন কিগান পিটারসেনকে (৪৮ ব্যাটিং)। তবে বুমরা এলগারকে তুলে নেওয়ার পর তাঁর কাজটাও কঠিন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ভারত ১৯৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে টার্গেট ছিল ২১২ রানের। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে এখনও ১১১ রান করতে হবে তাদের। মার্করামকে (১৬) আগেই তুলে নিয়েছিলেন শামি। এলগার থাকলে বলতে হত অ্যাডভান্টেজ দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এখন সেটা বলা যাচ্ছে না।
তবে দিনের নায়ক ঋষভ পন্থ। তিনি ব্যাট করার সময় মার্ক নিকোলাস কমেন্ট্রি করতে গিয়ে বললেন, এভরি সিঙ্গল বল ইজ আ থিয়েটার! সত্যিই তাই। ঋষভ পন্থ তখন যা খুশি তাই করছেন। রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে গড়াগড়ি খেলেন। পয়েন্টে বল মারলেন, কিন্তু হাতের ব্যাট উড়ে গেল সোজা স্কোয়ার লেগে। তারমধ্যেই একটু একটু করে স্কোর বাড়িয়ে নিয়ে গেলেন। নিজের চার নম্বর সেঞ্চুরিটাও তুলে নিলেন এদিন। শেষমেশ ১০০ নট আউট। ভারত ১৯৮ করল তার জন্যই।
আরও পড়ুন: বিধ্বংসী বুমরায় উচ্ছ্বসিত, টেস্টেও ফ্রি-হিটের দাবি জানালেন স্টেইন
সকালের দ্বিতীয় বলে পূজারা ফিরে গেলেন আগের দিনের রানে। ১০ মিনিটের মধ্যে পূজারা ও রাহানে আউট হয়ে যাওয়ার পর ঋষভ যখন নামলেন, ভারত তখন বেশ চাপে। কিন্তু সেখান থেকে বিরাটের সঙ্গে টিকে থেকে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুললেন দিল্লির বাঁ হাতি। জোহানেসবার্গে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার পর দ্রাবিড় বলেছিলেন, তিনি ঋষভের সঙ্গে কথা বলবেন। তার ফল কী হয়েছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল খেলা যত গড়াল।
ঋষভ যখন ব্যাট করতে নামেন, ভারত ৫৮/৪। এখন থেকে পঞ্চম উইকেটে বিরাটের সঙ্গে ৯৪ রান জুড়ে দলকে মোটামুটি ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেন ঋষভ। হাঁকপাক করা ছেড়ে ঋষভ এদিন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করলেন। তারমধ্যেও ছ’টি চার, চারটি ছক্কা। শেষপর্যন্ত ১৩৯ বলে ১০০ নট আউট। সুনীল গাভাসকর বললেন, কী ইনিংস! অবিশ্বাস্য। ১০ মিনিটে দুটো উইকেট চলে গেল। অন্যরা যখন স্ট্রাগল করছে, তখন ঋষভ হাতে প্রচুর সময় নিয়ে খেলে গেল।
সকালে এনগিডি, রাবাডা আর জেনসেন মিলে চেপে ধরেছিলেন ভারতকে। পূজারাকে (৯) ফেরালেন জেনসেন। তারপর রাহানেকে (১) রাবাডা। আরও একটা টেস্ট ম্যাচে খালি হতে ফিরলেন রাহানে। পূজারাও এখানে বড় রান পেলেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নির্বাচকরা যদি শ্রেয়স আর হনুমার উপর ভরসা রাখেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিরাট কোহলি (২৯) ১৪৩ বল কাটিয়ে গিয়েছেন। পরের দিকে শেষ বলে সিঙ্গলস নেবেন বলে ঋষভকে বেশ কিছু রান ছাড়তে হয়েছে। না হলে ২১২ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও বড় টার্গেট দেওয়া যেত।