প্রতিবেদন: প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে দু’দিন আগেই পদত্যাগ করেছিলেন শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। কিন্তু তাতে অশান্তি কমা তো দূরের কথা বরং গোটা দেশজুড়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন দেশের সেনাপ্রধান। বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রধান ও সেনা কমান্ডার জেনারেল শাভেন্দ্র সিলভা জানিয়েছেন, এই নির্দেশ এলেও সশস্ত্রবাহিনী তা পালন করবে না। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন দেশের ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। এদিকে ইতিমধ্যেই পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০০-রও বেশি মানুষ জখম হয়েছেন। অশান্ত শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত সে দেশে সেনা পাঠাবে না বলে এদিন স্পষ্ট জানিয়েছে কলম্বোর ভারতীয় দূতাবাস।
বুধবার শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান বলেছেন, দু’দিনের মধ্যে দেশে নতুন সরকার গড়ে না উঠলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একই কথা বলেছেন শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নরও। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর পি নন্দলাল ওয়্যারসিঙ্ঘে বলেন, যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে চলতি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয় তবে তিনি পদত্যাগ করবেন। দেশের এই সমস্যার দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান হওয়া দরকার। তা না হলে দেশের পুনরুজ্জীবনের যে কর্মসূচি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নিয়েছে তা কোনওভাবেই সফল হবে না। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শ্রীলঙ্কার ঘটনার নিন্দা করেছেন। গুতেরেস বলেছেন, শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা। পোপ ফ্রান্সিস শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষকে শান্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানী কলম্বো-সহ দেশের ছোট-বড় সব শহরে রাস্তার দখল নিয়েছিল সেনা। তবে সেনার দাবি, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা পথে নেমেছে। তবে এদিনও সেনার প্রহরাকে উপেক্ষা করেই দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই চলেছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। বহু জায়গাতেই গাড়ি ও দোকানপাটে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ঘটেছে অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
আরও পড়ুন: মৃত সাংবাদিক
পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারের সদস্য-সহ শাসক দলের সদস্যরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে জন্য মঙ্গলবার থেকেই বন্দরনায়েকে বিমানবন্দর অবরুদ্ধ করে রেখেছে প্রতিবাদকারীরা। তবে এদিন কলম্বোর আকাশে ঘন ঘন হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, হয়তো রাজাপক্ষের পরিবার এবং অন্যরা আকাশপথে দেশ ছাড়ছেন। এরই মধ্যে কলম্বোয় সেনা পাঠানোর খবরকে নেহাতই গুজব বলে জানাল শ্রীলঙ্কার ভারতীয় দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠানোর কোনও সম্ভাবনা নেই।
বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানানোর পাশাপাশি ঘোষণা করেছেন, চলতি সপ্তাহেই নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ করা হবে।