রিতিশা সরকার, শিলিগুড়ি: রাজ আমলের রীতি মেনে এখনও মৃন্ময়ী (Mrinmoyee- Siliguri) রূপে পালিত হয় পাহাড়ের শ্রীমন্দির নৃপেন্দ্রনারায়ণ বাঙালি পুজো। আজ থেকে প্রায় ১০৮ বছর আগে ব্রিটিশ আমল। সালটা ১৯১৪। দার্জিলিংয়ের চাঁদমারি রোডে গুটিকয়েক বাঙালি পরিবার মিলে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। তখনকার দার্জিলিং আর এখনকার দার্জিলিং-এর মধ্যে বিস্তর ফারাক। সে সময় কোচবিহারের রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের সহযোগিতাতেই পুজো শুরু হয়েছিল। পুজো উদ্যোক্তাদের মুখেই জানা গেছে, কাঠের ছাউনি করে প্রথম পুজো শুরু হয়েছিল। পুজোর জায়গা দিয়েছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রায়। কয়েকজন বাঙালি পরিবার ছিল পুজোর মূল উদ্যোক্তা। তাই পুজোর নাম হয়েছে শ্রীমন্দির নৃপেন্দ্রনারায়ণ বাঙালি। ১০৮ বছর ধরে মৃন্ময়ী রূপে (Mrinmoyee- Siliguri) পূজিতা হচ্ছেন মা দুর্গা। প্রথম কয়েক বছর কাঠের মন্দিরে পুজো হয়েছিল। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় ওই মন্দির আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছিল। পরে অবশ্য মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রায় উদ্যোগ নিয়ে পাকাপোক্তভাবে গড়ে তুলেছিলেন নতুন মন্দির। যার নাম দিয়েছিলেন শ্রীমন্দির। দার্জিলিং চকবাজার থেকে খুব কাছেই চাঁদমারি রোড। গেলেই দেখা যাবে সাদা রঙের বিশালাকৃতির মন্দির। এখনও এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা দার্জিলিংয়ের কয়েকটি বাঙালি পরিবার। কিন্তু শ্রীমন্দির নৃপেন্দ্রনারায়ণ বাঙালি পুজো কমিটির পক্ষ থেকে প্রতাপাদিত্য গুহ জানিয়েছেন, আমাদের পুজো পাহাড়ের প্রথম দুর্গাপুজো। বাবা-কাকাদের কাছে শুনেছি ব্রিটিশ আমলে পুজো শুরু হয়েছিল। সে সময় বর্ধমান রাজা সপরিবারে পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন। দার্জিলিংয়ের মাটিতে বর্ধমান রাজার রাজবাড়ি রয়েছে। তাঁরা বছরের বেশিরভাগ সময় দার্জিলিঙে কাটাতেন আর পুজোর সময় তো অবশ্যই। তাই তাঁদের কিছু রীতি মেনেই দেবী মায়ের পুজো শুরু হয়েছিল। এখনও সেই রীতির কিছু কিছু পালন হয়ে থাকে। আমাদের পরিবারের মা-কাকিমারাই পুজোর জোগাড়ে ব্যস্ত থাকে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত। মাঝে সন্ধিপুজোতেও কোনও ত্রুটি রাখে না তারা। সময়ের সাথে সবই পরিবর্তন হয়েছে। তাই দার্জিলিং শহর যেমন পরিবর্তন হয়েছে পরিবর্তন হয়েছে এই পুজোর আচার। পুজোর উদ্যোক্তা বাঙালি হলেও এখন কিন্তু পুজোতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাহাড়ের নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষেরাও শামিল হয়। অঞ্জলি দেওয়া থেকে ভোগ খাওয়া, বিসর্জনে সিঁদুরখেলা সবেতেই পাহাড়বাসী এখন একত্রিত। সময়ের সাথে খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে।