সিঙ্গল উইমেন মানে স্বেচ্ছায় অবিবাহিত, সিঙ্গল উইমেন মানে স্বামী-পরিত্যক্তা, বিবাহবিচ্ছিন্না, বিধবা, সিঙ্গল উইমেন মানে যাঁরা ডিসএবেলড, অত্যাচারিত, পরিবার বিতাড়িত। সিঙ্গল উইমেন বা একা নারী। বড় ভয়ঙ্কর শব্দ। সমাজ যাঁদের সঙ্গে নিয়ে চলতে নারাজ, পরিবার যাঁদের গ্রহণ করে না সিঙ্গল তকমা তাঁদেরই। নিজের সিঙ্গলহুড নিয়ে গর্ব করেন এমন নারী খুব কমই আছেন। কারণ একা মেয়ে মানেই নানা প্রশ্ন, নানান কৌতূহল, বাঁকা চাহনি। একা মেয়েরা যেন ভাবার আগেই সম্মান খুইয়ে বসে থাকা, সর্বস্বান্ত হওয়া এক শ্রেণি। তাঁর জন্য এই দুনিয়ায় বাড়ি ভাড়া নেই। তাঁর এক কামরার ফ্ল্যাটে নানা কুপ্রস্তাব। তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনে অনঅভিপ্রেত উঁকিঝুঁকি। একা নারীর সন্তান সবার করুণার পাত্র। মেয়ে ডিভোর্সি বাবা-মায়ের বদনাম। তাঁকে বিয়ে দিতেই হবে। বিবাহবিচ্ছিন্না নারী তায় সন্তানবতী। তাই ডিভোর্সি পুরুষই চাই। গাই-বাছুরের দায়িত্ব কোনও আইবুড়ো ছেলে নেবে কি? তা হলে সমাজ আর সেই ছেলেটির পরিবার তাকে যে একঘরে করবে। সিঙ্গল উইমেন শব্দবন্ধটা আজকের প্রেক্ষিতে খুব স্মার্ট, খুব ক্যাচি, খুব সাহসী একটা শব্দবন্ধ। কিন্তু যেসব মেয়ে বিভিন্নভাবে সিঙ্গল বা সম্পূর্ণ একা তাঁরাই বোঝেন তাঁদের লড়াইটা। এই জগতের কোনও সাধারণ একাকিনী মহিলাই ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে লোক সমক্ষে নিজেকে নিয়ে আসেন না। তাঁরা থেকে যান অন্তরালে। তাই বারবার প্রশ্ন আসে কেমন আছেন আমাদের দেশের বা গোটা পৃথিবীর সিঙ্গল মেয়েরা, কেউ কোনওদিন ভেবেছে বা প্রশ্ন করেছে কি? তাঁদের জন্য এই সমাজ কেমনতর? তাঁরা কীভাবে জীবন কাটান? রাতবিরেতে বিপদে পড়লে কেউ তাঁদের সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয় কি? তাঁরা চলতে গিয়ে প্রতিপদে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হন? হয়তো এগুলো নিয়ে কেউ চিন্তাই না। জনস্রোতে মিশে থাকেন এক হয়ে থাকেন সিঙ্গল মহিলারা।
সিঙ্গল উইমেনের মোড়কে অনেক কষ্ট, যন্ত্রণার ইতিহাস লেখা হয় প্রতিদিন। এটা অনেকেই জানে না। অনেক সোশ্যাল স্টিগমা রয়েছে সেখানে। নিজের সিঙ্গল স্টেটাস নিয়ে নারীত্বের সেলিব্রেশন করতে পেরেছেন কজনই বা। নিজের সিঙ্গল স্টেটাস নিয়ে হাজার হাজার সিঙ্গল উইমেনদের কথা তুলে ধরতে পেরেছেনই বা ক’জন? সেক্সুয়ালিটি নিয়ে জেন্ডার নিয়ে অকপট হতে পেরেছেন ক’জন? আসলে মানুষ সবসময় তাঁর না পাওয়াগুলো নিয়ে কাতর হয়ে গোটা জীবন অতিক্রান্ত করে ফেলে কিন্তু নিজের দুর্বলতাকে সবলতায় পরিণত করতে পারেন ক’জন? যিনি পারেন তিনি অবশ্যই ইতিহাস রচনা করেন। এমনই এক নারী হলেন লেখিকা, উপন্যাসিক শ্রীময়ী পিউ কুণ্ডু। শৈশবে নিজের মাকে দেখেছিলেন প্রথম একজন সিঙ্গল উইমেন হিসেবে সমাজের কাছে বঞ্চনা পেতে। মায়ের বৈধব্য জীবনে কুসংস্কারের বেড়াজাল বুনেছিল তাঁর পরিবারের লোকজনই। হিন্দু পরিবারের বিধবা, তাঁর অনুমতি ছিল না পরিবারের কোনও শুভ অনুষ্ঠানে থাকবার। অনেক স্বপ্ন ছিল শ্রীময়ীরও কিন্তু সব কিছু সবার জন্য নয়। তাঁর জন্য বোধহয় ঈশ্বর অন্যপথ রচনা করে রেখেছিলেন। তিনি বিয়ে না করে নিজের সিঙ্গল হুডকে সেলিব্রেট করেছেন প্রতিমুহূর্ত। নিজের চল্লিশ বছরের জন্মদিনকে উৎসবের মতো করে পালন করেছেন। সম্মান দিয়েছেন নিজেকে। প্রথম জীবনে বহুবছর দেশের নামী মিডিয়া হাউসে সাংবাদিকতা করার পর স্বেচ্ছায় পেশা ছেড়ে শুধু মনের তাগিদে লেখালেখিকে নেশা এবং পেশা করে নিয়েছিলেন। তাঁর কলমের ক্ষুরধার লেখনী সমাজে মেয়েদের অবস্থান এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদল করতে কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছে। তার লেখা ‘সীতাস কার্স’ বইটি বেস্ট সেলার্স হয়। এই বইটির জন্য অ্যাওয়ার্ডও পান শ্রীময়ী। একজন গুজরাতি গৃহবধূর জার্নি ছিল এই বইটির উপজীব্য। এই বইটির মাধ্যমে তাঁর গায়ে ইন্ডিয়াস ফার্স্ট ফেমিনিস্ট ইরটিকা রাইটারের সিলমোহর লাগে। সুনাম আগেও কুড়িয়েছেন কিন্তু এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর আরও বেশি করে লাইমলাইটে আসেন তিনি। এরপর আমন্ত্রণে কলাম লিখতে শুরু করেন। বই লেখাও চলছিল পাশাপাশি। তবে সবসময়ই মনের কোথাও সিঙ্গল উইমেন নিয়ে একটা ভাবনাচিন্তার স্রোত বয়ে চলত। এখান থেকেই তাঁর প্রথম নন ফিকশন বই ‘স্টেটাস সিঙ্গল’-এর জন্ম। এই বইতে তিনি শুধু নিজের সিঙ্গলহুড নিয়েই কলম ধরলেন না সারা ভারতের প্রায় ৩৫০০ বিভিন্ন বয়সি মহিলার কথা তুলে ধরলেন। তাঁদের সাক্ষাৎকার নিলেন। এই মহিলারা কেউ তাঁর মতোই অবিবাহিত, কেউ বিধবা, কেউ বিবাহবিচ্ছিন্ন, কেউ স্বামী- পরিত্যক্তা। তাঁদের মনোজগতের দোলাচলতা, তাঁদের সমস্যা, চাওয়া-পাওয়া সবটুকু ছিল এই বইয়ের উপজীব্য। প্রথমবার এই বইটির মাধ্যমে ওই সব সিঙ্গল উইমেনসরা দ্বিধাদ্বন্দ্বহীনভাবে, সব লজ্জা, সংকোচ ত্যাগ করে সামনে এগিয়ে এসে তাঁদের মনের কথা বললেন। ভীষণভাবে প্রশংসিত এবং চর্চিত হল তাঁর বই ‘স্টেটাস সিঙ্গল’। বহু আলোচনা, যুক্তি-তর্ক, বহু নারীর ভাবনার প্রতিরূপ হিসেবে বইটির বিষয়বস্তু ধীরে ধীরে একটা আন্দোলনের আকার নিল। আন্তর্জাতিক ভাবেও স্বীকৃতি পেল। এখান থেকেই জন্ম হল আর এক স্টেটাস সিঙ্গলের। প্রথমবার একাকিনী মহিলাদের জন্য অনলাইন কমিউনিটি তৈরি হল যাঁর নামও ‘স্টেটাস সিঙ্গল’। সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রথমে শ্রীময়ী শুরু করলেন এই গ্রুপ বা কমিউনিটি। এই নতুন গ্রুপ বা ফোরামে বহু মহিলাকে পাশে পেলেন তিনি যাঁরা একা লড়াই করেন। এই গ্রুপের উদ্দেশ্য ছিল সিঙ্গল মহিলাদের সাপোর্ট দেওয়া এবং তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। সেই সাপোর্টের বৃত্তটা তখনও নির্দিষ্ট ছিল না। কী হতে চলেছে কেউ জানত না। এই গ্রুপটি শুধু দেশেরই নয় বিদেশেরও— আমেরিকা, সাউথ- ইস্ট এশিয়া, মিডল-ইস্ট, দুবাই— সর্বত্র যাঁরা সিঙ্গল উইমেন রয়েছেন তাঁদের সমস্যা শোনা তাঁদের বিভিন্ন অ্যাজেন্ডা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা, তাঁদের আইনি সহায়তা,চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দান করার কথা ভাবা শুরু করল। এখানেই শেষ নয়। কোনও আইনজ্ঞ যদি তাঁদের কোনও পরামর্শ দিতে চান, কেউ এগিয়ে এসে কোনওরকম নৈতিক সাহায্য করতে চান, কোনও চিকিৎসক যদি নিজে থেকে তাঁদের পাশে থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চান— সেই দিকগুলোর উপর কাজ শুরু হল এই গ্রুপে। যদিও তখন শ্রীময়ী ভাবেননি এটা কতদূর পর্যন্ত এগোবে কারণ এই কাজটা করতে গিয়ে কারও কাছ থেকে কোনও আর্থিক সহায়তা নেননি তিনি। নিজের সামর্থ্যর জোরেই নিয়েছিলেন এই সাহসী পদক্ষেপ। পুঁজি ছিল শুধু মেধা, বুদ্ধি, অনুভুতি আর নিজের সিঙ্গল স্টেটাস দিয়ে সব একাকিনীদের জীবনকে উপলব্ধি করার সামর্থ্য। (এরপর ১৮ পাতায়
এর পাশাপাশি এই গ্রুপে সদস্যরা ধীরে ধীরে নানা আলাপ আলোচনায় অংশ নিতে শুরু করল। তাঁরা যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় বা হয়ে আসছে সেইগুলোর সমাধান সূত্র খোঁজা শুরু হল। যেমন, সিঙ্গল মহিলাদের এবং তাঁদের সন্তানদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়। কীভাবে তাঁরা এই সুবিধা ভোগ করবেন কারণ একা মায়ের সন্তানের পাসপোর্ট পাওয়া একটি বড় সমস্যা ছিল। এইভাবে বাড়তে শুরু করল গ্রুপের সদস্য সংখ্যা। একটা সময় গিয়ে এই গ্রুপ একটা বড় পরিবারের আকার নিল।কলকাতা ছাড়াও মুম্বাই, পুনে, দিল্লী এনসিআর, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই এবং লক্ষৌতে শুরু হল এই কমিউনিটির এক একটা চ্যাপ্টার। একটা প্ল্যাটফর্ম পেলেন একাকিনীরা যা তাঁদের জীবনধারণকে সহজ করে দিল।
আরও পড়ুন-জগতের নাথ জয় জগন্নাথ
কিন্তু ঝড়তো আসে যায়। করোনাকালে একাকিনী মহিলাদের এই কমিউনিটি আবার একটা বড় সংকটের সম্মুখীন হল। এদের মধ্যেই অনেকের চাকরি থাকল না। বহু নতুন সদস্য যোগ দিল যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ কমবয়সী বিধবা যাঁরা করোনায় সদ্য স্বামীকে হারিয়েছেন এবং একইসঙ্গে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িতও হয়েছেন। এই অতিমারীকালে বহু মহিলাই নানা ধরনের বিপদে পড়ে এই ফোরামের সাহায্য চাইতেন। কথা বলতে চাইতেন তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে চাইতেন। এমতাবস্থায় তাঁরা যাতে নিজেদেরকে অরক্ষিত না ভাবেন তাই শ্রীময়ী শুরু করলেন অনলাইন মিটিং। প্রথম মিটিং হয় অতিমারীকালে ২০২০ তে। এটা ছিল একটা পরিষেবার মতো। কার কী সমস্যা রয়েছে তা দেখা, কারও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থাকলে সেটা থেকে তাকে বের করে আনা। করোনায় কারও ডিভোর্স কেস আটকে গেছে, কারও সন্তানের অনলাইন ক্লাস করতে যে পরিকাঠামো দরকার তা দেবার সামর্থ্য নেই, কোনও মহিলা যাঁর চাকরি নেই স্বামী ছেড়ে দিয়েছে অথচ সন্তান রয়েছে। স্বামী কোনও মেন্টেনেন্স দেয়না। এই যাবতীয় বিষয় সমাধান সূত্র খুঁজতে এই সময় একটা ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও শুরু হল। তখনও পর্যন্ত শ্রীময়ী একাই পরিচালনা করতেন সবটা। তারপর এক একটা শহরের গ্রুপের একজন করে টিম লিডার তৈরি করলেন। কিন্তু এইভাবে কোথাও যেন স্টেটাস সিঙ্গল গ্রুপের মিশন সম্পূর্ণ রূপ পাচ্ছিল না। তখন শুরু হল অফলাইনে গ্রুপমিট। প্রথম অফলাইন মিটিং হয় ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর ঠিক আগের দিন। তিনটে শহরে কলকাতা, মুম্বাই এবং ব্যাঙ্গালোরে। এতদিন যাঁরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন এবার সবাই একে অপরের সামনে এলেন। দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল এই সাপোর্ট গ্রুপ যেটা প্রতিটা শহরের সিঙ্গল মহিলারাই চেয়েছিলেন। তাঁদের ইচ্ছে ছিল প্রতিটা শহরে একটা করে সিঙ্গল উইমেনস সাপোর্ট গ্রুপ গড়ে উঠুক। এই সিক্স সিটি চ্যাপ্টার আরও বহুমুখী কর্মসূচী নিয়ে এগোতে শুরু করল। এই চ্যাপ্টারে প্রতি মাসে দুটো অনলাইন মিটিং এবং প্রত্যেক শহরে মাসে একটা অফলাইন মিটিং হয় । মিটিং এর নির্ধারিত দিনে প্রতি শহরের সদস্যরা দেখা করেন তাঁদের টিম লিডার সহ। যদিও শ্রীময়ী করোনা অতিমারির কারণে এখনও অন্য শহরে তাঁর গ্রুপের মেম্বারদের সঙ্গে দেখা করতে পৌছতে পারেননি কিন্তু অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিট করেছেন তাঁর সিঙ্গল বন্ধুদের সঙ্গে। প্রতিমাসের মিটিং এবং আলোচনায় একটা করে থিম থাকে। যে থিমকে কেন্দ্র মত বিনিময়, কী করণীয় সেইগুলো আলোচনা, পর্যালোচনা চলে। এই গ্রুপ চ্যাপ্টারে যখন সবাই সবার মুখোমুখি তখন উঠে এল আরও বড় সমস্যা। জানা গেল এদেশের অধিকাংশ মহিলা তাঁদের আর্থিক বিষয় একেবারেই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল নন। তাঁরা হয় সম্পূর্ণ একা, আর না হয় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে থাকার কারণে বাবার উপর নির্ভরশীল। কাজেই ব্যাঙ্ক, সেভিংস, ইনভেস্টমেন্ট, ব্যবসা ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁরা কিছুই বোঝেন না। পরিবারের লোক নিজের স্বার্থে তাঁদের চীর অন্ধকারে রেখে দেয়। এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিজের পিতৃ পরিবারে আপন ভাই,বোন,দাদা, বৌদি এমনকী বাবা মায়ের দ্বারাও অত্যাচারিত ফলে তাঁরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। সমীক্ষা বলছে নারী এবং অর্থ এই দুইয়ের সম্পর্ক খুব খারাপ। এই দুইয়ের মেলবন্ধন বিশেষ হয়না। সর্বস্তরের নারীই আর্থিক ভাবে বঞ্চিত হয়। তাই আজও অনেক পেশাতেই এক পদাধিকারি বা একইরকম শ্রম দেওয়া একজন পুরুষের এবং একজন নারীর পারিশ্রমিক আলাদা হয়। এইদিকগুলো নিয়েও কাজ করছেন স্টেটাস সিঙ্গল গ্রুপ। পরবতীর্তে এই কমিউনিটি বা চ্যাপ্টার আন্তর্জাতিক স্থরেও অধিষ্ঠিত হতে চলেছে। যাতে সারা পৃথিবীর ভারতীয় সিঙ্গল মহিলারাএকটা প্ল্যাটফর্ম পায় এটাই লক্ষ্য বিন্দু। এর পাশাপাশি এই গ্রুপকে একটা অর্গানাইজেশনের রূপ দেওয়া এবং সরকারি সাহায্য পাওয়ার স্বপ্নও দেখেন শ্রীময়ী। কারণ এই রকম একটা সেবামূলক কর্মসূচি শুধুমাত্র তাঁর একার পক্ষে বহু বছর ধরে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কিছুটা অসম্ভব। শ্রীময়ী চান যে সব একাকিনী মহিলা মাথা গোঁজার ঠাই পান না বা আর্থিক ভাবে দুর্বল তাঁরা এই অর্গানাইজেশনের থেকে দিকনির্দেশ পান, তাঁদের এই কঠিন সমস্যার সমাধান হয়। একটা লিগাল বা আইনি পরিকাঠামো তৈরি করা। শুধু শ্রীময়ী নয় গোটা সিঙ্গল উইমেনস কমিউনিটির কাছে সিঙ্গল উইমেন হিসেবে জলজ্যান্ত প্রতিকৃত হলেন পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে মানুষের জন্য সমর্পণ করেছেন। যিনি মানবসেবার প্রতীক। তিনি একমাত্র যিনি প্রতিটা স্থরের নারীদের কথা ভেবেছেন এবং তাঁদের সবল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সফল হয়েছেন। তার পরিতাপ এটাই যে এদেশের সর্বস্থরের সিঙ্গল মহিলারা কেউ খুশি হয়ে বা স্বেচ্ছায় সিঙ্গল থাকেননি কারণ আজও আমাদের সমাজে সিঙ্গল হয়ে থাকা মেয়েদের জন্য অভিশাপ। তা সেই মহিলা ডিভোর্সি হন, বিধবা হন, বা অবিবাহিত হন। মেয়েদের যত ভাল ঘর আর ভাল বর হয় ততই তাঁরা তাঁদের পরিবার জাতে ওঠেন। সিঁদূরখেলায় সিঙ্গলরা ভূমিকাহীন। সারাদেশে করোয়া চৌথের দিন পতিব্রতা নারীর জয়গান গাওয়া হয়, এর প্রচার যেন এক উৎসব। যে কোনও সম্প্রদায়ের মেয়েদের বিয়ে এক উৎসব। দেশের সিঙ্গল উইমেন পরিসংখ্যান গোটা দেশের জনসংখ্যার বিচারে ৭৪.১মিলিয়ন। অতএব একটা বড় অংশের মহিলা অরক্ষিত থাকলে সমাজের অগ্রগতী কতটা সম্ভব তা কে বলবে।