নিজেই ইতিহাস হয়ে রইলেন ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’-এর প্রণেতা ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, সৃষ্টিতাত্ত্বিক স্টিফেন হকিং।
অনেকেই ভাবেন, তিনি ছাত্রবেলায় হয়তো খুব মেধাবী ছিলেন, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তিনি নিজেই এক জায়গায় জানিয়েছেন, তাঁর আট বছর বয়স পর্যন্ত কোনও জিনিস ভাল করে পড়তে অসুবিধা হত।
সেন্ট আলবান্স স্কুলে তিনি কিন্তু ক্লাসে খুব মাঝারি ধরনের ফল করতেন। কিন্তু বিজ্ঞান খুব প্রিয়। সহপাঠীরা অনেকেই তাঁকে ছোটবেলাতেই ‘আইনস্টাইন’ বলে ডাকতেন।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন তিনি আইস স্কেটিং করতে গিয়ে খুব আহত হন। আর তখন থেকেই ডিজেনারেটিভ মোটর নিউরো রোগে (অ্যামিওট্রোফিক লেটারাল স্ক্লেরোসিস) আক্রান্ত হন। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তাঁর হাতে আর মাত্র ২ থেকে তিন বছর সময় রয়েছে এই পৃথিবীকে দেখার। কিন্তু, এই সংকট তাঁর কাছে আশীর্বাদের মতো কাজ করে। টের পান, হাত-পা অক্ষম হয়ে গেলেও, তাঁর মস্তিষ্ক মহাজাগতিক অনেক রহস্যকে তাঁর সামনে এনে দেয়।
আরও পড়ুন-মোদি জমানার অগণতান্ত্রিক গণতন্ত্র!
১৯৮৫ সালে জেনেভায় গিয়ে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এরপর তাঁর ট্রেকিওস্টমি অপারেশন করা হয়, যার জন্য তাঁর ঘাড়ের পাশ দিয়ে একটি আলাদা নল লাগাতে হয়, যার মাধ্যমে তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারবেন, কিন্তু তাঁর কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
শরীরে শক্তি না থাকলেও তাঁর মনের শক্তি যে অসীম। হকিং-এর সামনে সব সময় যে কম্পিউটার পরিচালিত যন্ত্রটি থাকত যেটা তাঁর মনের ভাবনা প্রকাশ করত, সেটা এক মার্কিন কোম্পানি তৈরি করে। প্রথমে যেটুকু আঙুল সঞ্চালন করতে পারতেন, সেটি দিয়ে তাঁর মনের ভাবনা অনুযায়ী শব্দ ক্লিক করতেন যেটা স্ক্রিনে ভেসে উঠত। পরবর্তীকালে সেটাও করতে না পারায় তাঁর চশমার কাচের সঙ্গে একটি ইনফ্রারেড সেন্সর থাকত যেটা তাঁর ভাবনা প্রকাশ করতে সাহায্য করত। ২০১২ সালে যে প্রযুক্তি তৈরি করতে সক্ষম হয় ইনটেল।
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ঈশ্বর বা মানব জন্মের পরবর্তী অবস্থান বলে কিছু নেই। অন্ধকার বা নিঃশেষ-এর প্রতি মানুষের ভয় থেকেই মানুষ এই বিশ্বাস করে থাকে।
হকিং জন্মেছিলেন গ্যালিলিওর ৩০০তম মৃত্যুদিনে, মারা গেলেন আইনস্টাইনের জন্মদিনে।
২০১১ সালে গুগলের একটি কনফারেন্সে তিনি জানান, দর্শন মৃত। দর্শনে যেটার উত্তর দিতে পারবে না, সেটা বিজ্ঞান সমাধান করে দেবে, জ্ঞানের সন্ধানের পথে আলো দেখাবে একমাত্র বিজ্ঞান।