প্রতিবেদন : ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তা মাথায় রেখেই সরকারি অনুষ্ঠানে আচরণ করা উচিত বলে মনে করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দেশের সংবিধান গ্রহণের ৭৫তম বার্ষিকীর মুখে দাঁড়িয়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের কথাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা (Abhay S Oka)। তাঁর মন্তব্য, আদালতের অনুষ্ঠানের সময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ হোক। তাঁর পরামর্শ, ভারতের সংবিধানে পরিকল্পিত ধর্মনিরপেক্ষতাকেই আমাদের প্রচার করা উচিত এবং আদালত-সম্পর্কিত অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি তাই সংবিধানের প্রস্তাবনার একটি অনুলিপির কাছে মাথা নত করে শুরু করা যেতে পারে। দেশের সংবধানে যে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের কথা বলা হয়েছে তা মাথায় রেখে আদালতের কোনও অনুষ্ঠান কোনও ধর্মীয় আচার ও অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে পালন করা উচিত বলে মনে করিয়ে তিনি। বলেছেন, কখনও কখনও বিচারকদের অপ্রীতিকর কথা বলতে হয়। আমি সেই অপ্রীতিকর কথা বলে মূল বিষয়টা মনে করিয়ে দিতে চাই। বিচারপতি ওকার কথায়, আমার মনে হয় আদালতে অনুষ্ঠান চলাকালীন পূজা-অর্চনা বন্ধ করা উচিত। পরিবর্তে, আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রতিচ্ছবি রেখে তার সামনে মাথা নত করা উচিত। সংবিধানের ৭৫ বছর পূর্ণ হলে এর মর্যাদা বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের এই নতুন অনুশীলন শুরু করা উচিত।
আরও পড়ুন-রাশিয়ার চাপে যুদ্ধে গিয়ে দ্বিতীয় ভারতীয়র মৃত্যু
মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড়ে একটি নতুন আদালত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। তাঁর কথায়, সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. আম্বেদকর আমাদের একটি আদর্শ সংবিধান দিয়েছেন যাতে ধর্মনিরপেক্ষতার উল্লেখ পাওয়া যায়। আমাদের আদালত ব্যবস্থা ব্রিটিশরা তৈরি করলেও এটি আমাদের সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। দেশের সমস্ত আদালত ভারতের সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত। বিচারপতি ওকা (Abhay S Oka) উল্লেখ করেন, কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদকালে তিনি আদালত-প্রাঙ্গণে এই ধরনের ধর্মীয় অনুশীলন কমানোর চেষ্টা করলেও সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সফল হননি। তাঁর কথায়, সংবিধানের ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়া আমাদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাকে এগিয়ে নেওয়ার সেরা উপলক্ষ হতে পারে। প্রসঙ্গত, বর্তমান বিজেপি জমানায় যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে হিন্দুত্ববাদী ভাবনা থেকে যেসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয় তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনার উপরেই আঘাত।
দেশের আইনসভা নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনই হোক বা অন্য কোনও সরকারি অনুষ্ঠান, হিন্দুত্ববাদীদের দাপাদাপির প্রেক্ষাপটে শীর্ষ আদালতের বিচারপতির বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বদলে দেওয়ার যে চক্রান্ত শুরু করেছে মোদি সরকার, সেই সম্পর্কেই কার্যত সতর্ক করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।