যুদ্ধে প্রাণ রক্ষা থেকে দাদা/ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় রাখি

Must read

সুপর্ণা দে: যুদ্ধে ক্ষতি রুখতে, সাম্প্রদায়িকতা মেটাতে, প্রাণ বাঁচাতে ‘রাখি’র (Rakhi) কৃতিত্ব রয়েছে। রাখি পূর্ণিমার দিনে বোন বা দিদিরা ভাই বা দাদার মঙ্গল কামনায় হাতের কবজিতে একটুকরো সুতো বাঁধেন রাখি হিসেবে। এটাই তো চলে আসছে। কিন্তু যুদ্ধে কারোর ক্ষতি রুখতে রাখিকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহারও করা হয়েছিল, এমনটা কি আগে কখনও শোনা গিয়েছিল? না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও চলছে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এই যুদ্ধের অবসান এখনও ঘটেনি। কিন্তু ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই একটি সুতোর কারণেই সম্রাট আলেকজান্ডারের প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল!

পুরু রাজার হাতে রাখি
‘রাখি’ (Rakhi) রক্ষা কবচ। এই রক্ষা কবচ ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাণ বাঁচিয়েছিল আলেকজান্ডারের। কীভাবে? ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট আলেকজান্ডার ভারতে পুরুর রাজ্য আক্রমণ করেন। পুরু কে ছিলেন? পুরুর নাম ছিল রাজা পুরুষোত্তম। পৌরব ও বিপাশা নদীর (আধুনিক পাঞ্জাব, পাকিস্তান এবং বিপাশা নদী) অববাহিকা পর্যন্ত রাজ্যের রাজা ছিলেন পুরু। তিনিই একমাত্র প্রাচীন ভারতীয় রাজা, যিনি গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। হিদিস্পাসের যুদ্ধে আলেকজান্ডার যখন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন তখন স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে পুরুষোত্তম রাজাকে রাখি পাঠিয়েছিলেন আলেকজান্ডারের স্ত্রী রানি রোকসানা। এরপর পুরু তাঁকে বোন হিসেবে স্বীকার করে রাখি পরেন। কথা দেন তিনি আলেকজান্ডারের কোনও ক্ষতি করবেন না। আলেকজান্ডারের মুখোমুখি হলে রাজা পুরু তাঁর দেওয়া কথা রেখেছিলেন। তবে সেই যুদ্ধে আলেকজান্ডারের কাছে হার হয়েছিল রাজা পুরুষোত্তমের।

মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি
চিতোরের রানি রাখি (Rakhi) পাঠিয়েছিলেন মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে। রানি কর্ণাবতী গুজরাতের সুলাত্ন বাহাদুর শাহের আক্রমণের খবর পেয়ে হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন বিধবা রানি। কিন্তু রাখি পেয়ে হুমায়ুন চিতোর পৌঁছনোর আগে সম্মান বাঁচাতে জওহর প্রথা অনুযায়ী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন রানি কর্নাবতী এবং তাঁর ১৩হাজার সঙ্গিনী।

আরও পড়ুন: মহাকাশ গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ইসরো প্রধানের

বিষ্ণুভক্ত বলিকে রাখি পরিয়েছিলেন লক্ষ্মী
হরিভক্ত প্রহ্লাদের পৌত্র ছিলেন দৈত্যরাজ বলি। দৈত্যরাজা বলি ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠ থেকে বলি নিজের রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী এতে দুঃখ প্রকাশ করেন। স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে দৈত্যরাজের কাছে যান। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামীকে ফিরে পান ততদিন যেন বলি তাঁকে আশ্রয় দেন। বলি ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে আশ্রয় দেন। এবং লক্ষ্মী যে ছদ্মবেশে তাঁর কাছে এসেছে তাও তিনি বুঝতে পারেন। এরপর শ্রাবণ পূর্ণিমার দিন লক্ষ্মী বলিরাজের হাতে একটি রাখি পরিয়ে দেন। দৈত্যরাজ বলি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষ্মী আত্মপরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজ মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। এরপর দৈত্যরাজ বলি বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন।

শ্রীকৃষ্ণের হাতে দ্রৌপদীর ‘রাখি’
মহাভারত অনুসারে, ভগবান কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষার ঘটনাকে রাখি বন্ধনের কারণ বলেও মনে করা হয়। শিশুপালকে বধ করার পর শ্রীকৃষ্ণের হাতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পঞ্চ পাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। এতে কৃষ্ণ অভিভূত হন। পরে ভগবান কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তিনি জানান উপকারের প্রতিদান দেবেন। পরবর্তীকালে কৌরবরা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করেন।

বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধে রাখি
ভারতীয়দের কাছে রাখি বন্ধনের আসল ইতিহাস হল, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পালন করেন রাখি বন্ধন উৎসব। কবিগুরু হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলেন। পাশাপাশি ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

Latest article