নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : দিল্লির দূষণের জন্য কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের মধ্যে সমন্বয়নের অভাবই দায়ী৷ এমনটাই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের৷ বুধবার দূষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্নার বেঞ্চ বলে, পাঁচতরা হোটেলের এসি ঘরে বসে শুধু কৃষকদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে৷ কৃষকদের নিয়ে সমালোচনা করা সহজ। টেলিভিশনে দূষণ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরেও দূষণ কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে৷ বরং টিভি ও সংবাদমাধ্যম থেকেই আরও বেশি করে দূষণ ছড়াচ্ছে৷ দূষণের জন্য শুধু কৃষকদের ফসলের গোড়া পোড়ানোকে দায়ী করা হচ্ছে৷ কিন্তু দীপাবলির এবং তার পরেও যেভাবে বাজি পুড়িয়ে দূষণ ছড়ানো হয়েছে তার কথা কেউ বলছে না৷ যানবাহন এবং কলকারখানা থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে আসছে তা কমানোরও কোনও চেষ্টা চলছে না৷
আরও পড়ুন : একঝাঁক পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রীর
ফসলের গোড়া পোড়ানোর কৃষকদের দায়ী করা হচ্ছে৷ কিন্তু এর বিকল্প কী হতে পারে সে ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা নেই৷ কৃষকরা কী কারণে ফসলের গোড়া পোড়াচ্ছেন তা জানার কোনও চেষ্টা নেই৷ কৃষকদের শুধু আধুনিক মেশিন কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেই মেশিন কেনার মতো ক্ষমতা কৃষকদের আছে কিনা সেটা ভেবে দেখা হয়েছে কি? তাই অকারণে একে অন্যের ঘাড়ে দায় না চাপিয়ে কীভাবে দূষণ কমানো যায় সে-বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ভেবে দেখতে হবে৷ স্থায়ীভাবে যাতে দূষণ কমানো যায় সেই বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ বিচারপতির সূর্যকান্ত বলেন, কৃষকদের শাস্তি দিতে চাই না আমরা। দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে আগেই বলেছি৷ কিন্তু সরকার শুধুই কৃষকদের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে৷ সরকারের উচিত কৃষকদের বোঝানো, তাঁরা যাতে এক সপ্তাহের জন্য ফসলের গোড়া পোড়ানো থেকে নিজেদের বিরত থাকেন৷ এদিনের শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা জানিয়েছেন, ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো নিয়ে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ নিয়ে আমি নাকি আদালতকে বলে ভুল পথে পরিচালিত করতে চেয়েছি। এটা ঠিক নয়৷
প্রধান বিচারপতি এই কথার উত্তরে জানান, এই ধরনের অনেক কথা শুনতে হয়৷ এসব কথায় গুরুত্ব দিলে চলে না।
দিল্লি সরকারের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি জানান, কেন্দ্র প্রথমে বলেছিল দূষণের জন্য কৃষকদের ফসলের আগাছা পোড়ানো ৩৫- ৪০ শতাংশ দায়ী। যা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্র গোটা বছরের কথা বলছে। আমরা ২ মাসের কথা বলছি। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন, দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বায়ুর গুণমান বজায় রাখার জন্য কমিশন নির্দেশ দিয়েছে যে, কেবলমাত্র গ্যাস চালিত শিল্পগুলিকে চালু থাকবে৷ দিল্লির ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে ১১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৫টি চলবে, ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে ট্রাক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণকারী ট্রাকগুলি ছাড় দেওয়া হবে৷ পাশাপাশি ধুলো নিয়ন্ত্রণেও ব্যবস্থা নিতে হবে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় যেভাবে দেদার বাজি পোড়ানো হচ্ছে তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বেঞ্চ। শুনানিতে বেঞ্চ জানায়, দিল্লির দূষণের অন্যতম কারণ বাজি। কিন্তু আমরা এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাচ্ছি। সরকারকে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবকিছু আদালতের নির্দেশে করা সম্ভব নয়। দূষণ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী মঙ্গলবার।
অন্যদিকে, দূষণের হাত থেকে বাঁচতে মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট৷ ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে রাজধানী দিল্লি-সহ আশপাশের এলাকাগুলির সমস্ত স্কুল, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। বেসরকারি অফিসগুলির উদ্দেশ্যেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করতে হবে। গাড়িচালকদের কাছে অতি অবশ্যই দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট থাকতে হবে৷ পেট্রোল চালিত গাড়ির বয়স ১৫ এবং ডিজেল চালিত গাড়ির বয়স ১০ বছরের বেশি হলে সেগুলি রাস্তায় নামানো যাবে না।
দিল্লি ছাড়াও হারিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থান সরকারকেও এই নির্দেশিকা মানতে হবে। এই সমস্ত রাজ্যের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে আপাতত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কর্মীকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে দিতে হবে। সমস্ত রাজ্যগুলিকে ২২ নভেম্বরের মধ্যে দূষণের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।