সুপ্রিম কোর্ট : দেশের কোনও নির্বাচনে স্থগিতাদেশ জারি বা হস্তক্ষেপের অধিকার নেই আদালতের

একদিকে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের নির্দেশ এবং উল্টোদিকে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ। দুটি পরস্পর বিরোধী। বিতর্ক তৈরি হয়েছে

Must read

প্রতিবেদন : শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের হিন্দি প্রচার সভার নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সূর্য কান্তর বেঞ্চ সেই মামলায় স্পষ্ট ভাষায় জানান, নির্বাচনে আসনে বণ্টন বা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস, কোনও ক্ষেত্রেই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত যদি কোনও অভিযোগ জানাতে হয় তাহলে নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করতে হবে। এই নির্দেশটি খুব প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তার কারণ, বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পর বিরোধীদের অভিযোগে মামলা হলে বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, হাইকোর্টের রায় বের না হওয়া পর্যন্ত এই ফলাফল চূড়ান্ত নয়।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

একদিকে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের নির্দেশ এবং উল্টোদিকে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ। দুটি পরস্পর বিরোধী। বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে। সাংবিধানিক এক্তিয়ার নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। অভিজ্ঞ আইনজীবীরা কী বলছেন? বিশিষ্ট আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব আইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন—
১. ৩২৯-এর ধারায় বলা আছে, নির্বাচনে আসনে বণ্টন বা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস, কোনও ক্ষেত্রেই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত যদি কোনও অভিযোগ জানাতে হয় তাহলে নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করতে হবে।

আরও পড়ুন-বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সম্মান আছে তৃণমূল কংগ্রেসের

২. প্রশ্ন হল, নির্বাচনী পিটিশন কী? নির্বাচনী পিটিশন অভিযোগকারীকে দাখিল করতে হবে। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী কোন কোর্টে সেই মামলার শুনানি হবে তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার। শুনানিতে ট্রায়াল হবে।
৩. ১৯৫১ সালে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে বলা আছে কোনও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। যদি না কোনও পিটিশন দাখিল হয়। এর বহুল ব্যবহৃত শব্দ হল ‘নো ইলেকশন’। যা সংবিধানের ২৪৩(ও) ধারায় নির্দিষ্টভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে বলা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে মহীন্দ্র সিংগিলের মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেই মামলাতেও একই কথা বলা হয়েছে।
৪. ২০১৮ সালে পঞ্চায়েতে ভোটের ফলাফলের পর বিরোধীরা ফলাফল বাতিল করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় বলেছিল, ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করতে। বিরোধীরা সে পথে হাঁটেনি। উল্লেখযোগ্য হল, নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করেছেন। যে মামলা চলছে।

আরও পড়ুন-সিপিএমের দুই ‘স্টার’ নিজেদের বুথেই হেরে ভূত

৫. দক্ষিণ ভারতের হিন্দি প্রচার সভার হয়ে মামলা লড়ছিলেন তুষার মেহতা। তাঁর দাবি ছিল, ভোটার তালিকা-সহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে গরমিল রয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হোক। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না। গণতন্ত্রে কি আপনি কোনও নির্বাচন আটকে দেবেন? সংবিধান গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের মাধ্যম করেছে ভোটাধিকারকে। সেই ভোটাধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

আরও পড়ুন-৪৫ বছর টানা জয় মৃণালকান্তির

ঠিক এই জায়গা থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একই ধরনের ঘটনায় দু’ধরনের সিদ্ধান্ত। কলকাতা হাইকোর্টে বলা হয়েছে যে সব প্রার্থীরা পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হয়েছেন তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের উপর। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, নির্বাচনের কোনও প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। একমাত্র নির্বাচনী পিটিশন করা যেতে পারে। বিচারপতিদের নিরপেক্ষতাই প্রশ্নচিহ্নের সামনে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ঠিক না হাইকোর্টের বেঞ্চ যথার্থ বলছে, জানতে চাইছেন আমজনতা|

Latest article