“মেয়েমানুষের আবার মন! মেয়েরা হল গিয়ে জলের মতো। যে পাত্রে রাখা হবে তেমনটি আকার নেবে। এমনটাই ধারা!” ষাট বা সত্তর দশকের সাহিত্য-সিনেমায় এমন সংলাপ হামেশাই শোনা যেত। এরপর যখন এল পাত্রী বিএ পাশ, গৌরবর্ণা, গৃহকর্ম নিপুণা ইত্যাদি দিয়ে বিজ্ঞাপনের যুগ, তখনও চুলচেরা বিচার শেষে বাড়ির বউ করে আনার সময়ে ক’জন খোঁজ করত মুখ নামিয়ে থাকা মেয়েটির মনও পাল্টা জানতে চায় কি না পাত্রের খুঁটিনাটি, উনকোটি! সময় যখন আরেকটু আধুনিকতা বয়ে আনল, তখন ফাজিল কিছু মেয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল বটে, মেয়েদের মন? সেটা কী? খায় না মাথায় মাখে? কিন্তু সমস্যা তাতে মিটল না। কারণ, সমস্যাটা তো কেউ বুঝলই না। বুঝতে হয়, তাই যে জানল না! এমনকী মেয়েরা নিজেরাও। তাই ভাব প্রকাশে বৈচিত্র এলেও মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া কিংবা তাচ্ছিল্য করাতেই বিষয়টা থমকে থাকল। আজও! যদিও মনের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে বসলে পুরুষ-মহিলা উভয়েই কেউ থমকায়, কেউ ভাবতে বসে আর অনেকে মুখ খুলতেই চায় না। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা যে আজও সামাজিক স্টিগমা। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হল গিয়ে, মেয়েদের শরীর যতটা আলোচিত হয়, মন নিয়ে তার সিকিটুকুও নয়!
আরও পড়ুন-মাধবীলতা’য় মনের কথা বলেছি : মানসী
শিক্ষার বিকাশ, প্রচার, চিকিৎসার পরিকাঠামো ও সুযোগ বৃদ্ধি ইদানীং সামান্য পরিবর্তন আনলেও তা সমাজের নির্দিষ্ট অংশেই সীমাবদ্ধ বলা যেতে পারে। যদিও কোভিড-কাল সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্যে থাবা বসানোয় এ নিয়ে কথাবার্তা হালফিলে কিঞ্চিৎ বেশি হয় কিন্তু তা কতটা সমাজের প্রতি স্তরে বা প্রতি ঘরে পৌঁছয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে প্রতিকার কী? স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রবাদেই আছে, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর!’ যেভাবে ঘরের দেওয়ালে ঝুল হতে থাকলে বা আসবাবে ময়লা জমতে দেখলে আমরা ব্যস্ত হই তা পরিষ্কারের জন্য ততটাই ব্যস্ত হতে হবে মনে ধুলো-বালি জমছে বুঝলেই। আত্মসচেতনতাই হল প্রথম ধাপ। আর পরের প্রতিটি ধাপ প্রতিকারের। শুরুতেই শেষটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। শুরুটা হোক। আর তা নিজের জন্য, নিজের দ্বারাই। একতরফা তো অনেক হল, এবার গুরুত্ব দিলে গুরুত্ব পাবে থিওরি চালু করে দেখুন দেখি। একটা আগাম নিশ্চয়তা দিতে পারি, আপনি নিজে যতটা ভাল থাকবেন, অন্যদের তার থেকেও বেশি ভাল রাখতে পারবেন কারণ এখন আপনার মন ভাল আছে! এ ব্যাপারে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কিছু কৃতী মহিলাদের মতামত রইল পাঠকদের জন্য। উদ্দেশ্য একটাই, আপনাদের ভাল থাকা।
আরও পড়ুন-মস্কো থেকে আমদানি বন্ধ করুক ভারত
পায়েল ঘোষ
পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট
মহিলাদের মন নিয়ে কেউ ভাবেন না আর কেউ ভাবেন না বলেই তাঁরা নিজেরাও ভাবনাটাকে প্রশ্রয় দেন না। এর রুট খুঁজতে গিয়ে দেখেছি, বেশিরভাগ মেয়েরই স্বতন্ত্র কোনও জীবন নেই। তাই যে কাজটা তাঁরা রোজকার জীবনে বাধ্যতামূলক অন্যদের জন্য করেন দিনের শেষে তার জন্য ক্লান্তি অনুভব করেন। এই ক্লান্তি থেকেই একসময় হতাশাগ্রস্ত হন, খিটখিটে হয়ে যান, শেষে হয় অবসাদগ্রস্ত অথবা অ্যাগ্রেসিভ হয়ে পড়েন। নিজের খারাপলাগার ব্যাপারটা নিজেকেই ট্রিগার করতে হবে, কে কী ভাবছে, বুঝছে তা না ভেবেই। মহিলারা সেভাবে জানেনই না, নিজের মনের যত্ন নিলে অর্ধেক প্রবলেম সলভ হয়ে যায়। পাশ্চাত্যে মহিলারা কিন্তু এ ব্যাপারে অনেক সচেতন। তাঁরা নিজেদের সত্তাকে ভীষণ গুরুত্ব দেন।
আমাদের এখানে মেয়েদের অনেকরকম রোল প্লে করতে হয়। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে নিজের জন্য কী রোল প্লে করছি এটাও সমান গুরুত্ব দিয়ে নিজেরই ভাবা উচিত। প্রোঅ্যাক্টিভলি এ নিয়ে খুব কিছু কাজ এখনও হয় না। মেয়েরা অন্য অনেককিছুর মতো এ ব্যাপারেও ডিপ্রাইভডই হয়। আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও এটা হয়। নিজের অর্জিত অর্থ দিয়েও নিজের জন্য কিছু কিনলে বাঁকা কথা শুনতে হয়। এ জায়গা থেকে বেরনোর জন্য প্রাথমিক ভাবে নিজের জন্য একটা স্পেস তৈরি করতে হবে। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। যত কনফ্লিক্টই হোক এর জন্য, নিজেকে রিজিড থাকতে হবে। খুব কম পার্সেন্টেজে হলেও অনেক মেয়েই যদিও সচেতন হচ্ছেন।
আমার ওয়ার্ক লাইফ যেহেতু খুবই হেক্টিক, অনেক মানুষের অনেক সমস্যা নিয়ে ভাবতে হয় রোজ আর তা বেশ নেতিবাচকই, তাই নিজেকে পজিটিভ রাখার জন্য সব সময় সচেতন থাকতে হয়। দিনের শুরুর এক ঘণ্টা আমি নিয়ম করে সম্পূর্ণ নিজের সঙ্গে কাটাই। সেই সময়টা কী করব তা আমার চয়েস। বই পড়তে পারি, গান শুনতে পারি, ওয়াকে যেতে পারি, যা খুশি। এছাড়া নিয়মিত মেডিটেশন, এক্সারসাইজ করি। আরও একটা করি— আমার মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাই। সব মিলিয়ে এসব থেকে যে পজিটিভ ভাইভ অর্জন করি, সেটাই সারাদিন অন্যদের ট্রান্সমিট করার চেষ্টা করি।
আরও পড়ুন-প্রতিকি আত্মহত্যা
সুদেষ্ণা রায়
চিত্র পরিচালক, সাংবাদিক
নিজেদের জেনারেল হেলথ নিয়েই মহিলারা কোনওকালে সচেতন নন তো মেন্টাল হেলথ! আসলে মেয়েদের মানুষ হিসেবে গণ্য করাটা আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনেই করা হয় না। এই ভাবনা নিয়েই মেয়েরা নিজেরাও বেড়ে ওঠে। দুইয়ে মিলে যা হয়, মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য, অসুস্থতা এসব নিয়ে সমাজের বেশি অংশে ভাবাই হয় না কারণ এখনও আমাদের দেশে মেয়েদের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন বলেই মনে করা হয়। শিক্ষার প্রসার বা সরকারি প্রকল্পের উদ্যোগে খুব ধীরে হলেও পাল্টাচ্ছে ছবিটা কিন্তু তা সামান্য।
আমি নিজের জীবনের একটা কথা বলি, ছোট থেকেই আমি খুব প্রতিযোগী মনোভাবাপন্ন ছিলাম কিন্তু ক্লাস টেন-এ পড়ার সময় একটা অ্যাক্সিডেন্টে আমার একটা হাত ও পায়ের কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। ধীরে ধীরে রিকভার করলেও ক্লাসে ভাল পারফর্ম করা নিয়ে আমি মানসিক সমস্যায় ভুগতাম, তা কিন্তু কেটেছে কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমেই। আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী হওয়ার কথা আমরা যতটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবি, ততটা গুরুত্ব দিয়েই কিন্তু মানসিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার পাঠ শুরু থেকেই মেয়েদের দিতে হবে। কেউ গুরুত্ব দিক বা না দিক নিজেকে নিজেই ইম্পর্টেন্স দিতে হবে। আমি যেটা করি, নিজেকে খুব ব্যস্ত রাখি। নিজের ভাল লাগার যে কোনও কাজ কে কী ভাবল তার তোয়াক্কা না করেই করে যাই। আর ছোটবেলার মতো মনোভাব আজ আর নেই। সর্বশ্রেষ্ঠ হতেই হবে তা না ভেবে আনন্দের সঙ্গে নিজের কাজ করে যাই। আর হ্যাঁ, মনের মধ্যে দুঃখ পুষে না রেখে তা ভাগ করে নেওয়া কিংবা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে নিজেই উদ্যোগী হই।
আরও পড়ুন-রেল স্টেশনে রুশ হামলা, হত ৩৫, বেশি শিশু-মহিলা
মিতা নাগ
সেতারবাদক, শিক্ষিকা
আমি মনে করি, উচ্চ, মধ্য বা নিম্নবিত্ত— সব স্তরেই মহিলারা নিজেদের জন্য স্পেস কম পান। কেউ পেতে চান, পান না। কেউ আবার সে ব্যাপারে সচেতনই নন। তাঁরা পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্য বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্য মহিলাদের দ্বারাও ডমিনেটেড হন। আপনজনদের পজেসিভ মনোভাব অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের জীবনের নিজস্ব সুর-তাল নষ্ট করে দেয়। মনোকষ্টে ভুগলেও মেয়েরা মন খুলে সে কথা কাউকে বলতে কুণ্ঠা বোধ করে। নিজের মধ্যে গুমরে থেকে যে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা আমরা বলছি অজান্তেই তার ক্ষতি করে। আর মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এমন পরিবার এখনও হাতে গোনা।
ইদানীং অনেক সংগঠন এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আবার অনেক সংগঠন মেয়েরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে তৈরি করেছেন যেখানে সমমনোভাবাপন্ন সঙ্গী খুঁজে মনের কথা বলে, সহমর্মী হয়ে, নিজেদের কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির চর্চা করে তাঁরা আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন। আমার মনে হয় এই স্পেসগুলো খুব কার্যকরী হয়। এ-ছাড়া কোনও ধর্মীয় মঠ বা মিশনে গিয়েও অনেকে মানসিক প্রশান্তি পান। অর্থাৎ যেটা বলতে চাইছি, নিজের পরিবারের বাইরেও নিজের জন্য একটা জায়গা খুঁজে নেওয়া। যেটা খুব জরুরি। আমি নিজে আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্ন। এ-ছাড়া প্রকৃতির মাঝে থেকে মন ভাল রাখি। তবে সবচেয়ে বড় যা, তা আমার সংগীতচর্চা, আমার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে থেকেই সবচেয়ে বেশি রসদ পাই।
পৌলমী চট্টোপাধ্যায়
নাট্যপরিচালক, অভিনেত্রী
মহিলারা আমাদের পরিবারের পিলার যেমন তেমন একটা পরিবার বিকশিত হয় মূলত মহিলাদের জন্যই। কিন্তু আমি দেখেছি, মহিলারা কেমন আছেন সেদিকে তেমন নজর দেওয়া হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। মা হোক, ঠাকুমা হোক, স্ত্রী হোক, বেশিরভাগই টেকেন ফর গ্রান্টেড হয়েই থাকেন। তাঁদের মনে কী চলছে, তাঁদের চাহিদা, দুঃখ-সুখ নিয়ে অল মোস্ট কেউই মাথা ঘামায় না। আর মেন্টাল হেলথ নিয়ে ট্যাবু তো আজও ভীষণ রকম আছে। আমরা হার্ট, কিডনি, চোখ, পেটের অসুখ নিয়ে স্বচ্ছন্দে কথা বলি, কিন্তু মনের অসুখকে লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করি। যে অসুখের গুরুত্বই নেই তার অযত্ন তো হবেই।
আরও পড়ুন-চিনের নিশানায় ভারত ও আমেরিকা
যদিও আজকাল আমার চারপাশে অনেককে দেখি যারা সহজভাবেই মনের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলে। নিশ্চয়ই সংখ্যায় কম। আমার মনে হয় যেমন আই চেক আপ ক্যাম্প হয় বা কিডনি বা হার্ট নিয়ে, তেমনই যদি মেন্টাল হেলথ নিয়েও অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্প হয় সাধারণ মানুষের জন্য তা হলে জড়তা কাটতে অনেকটা সাহায্য করবে। এ-ছাড়া আমাদের নিজেদেরও আরেকটু সংবেদনশীল হতে হবে।
আমি নিজে এ ব্যাপারে সচেতন বরাবরই। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, আমার ছেলের অ্যাক্সিডেন্টের পর ভয়ঙ্কর ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেছি। বাপি, মা ছিলেন, ওঁরা বরাবরই আমায় জীবনমুখী হওয়ার কথা বলতেন, সাহস জোগাতেন। কিন্তু বাপি, মা দুজনেই খুব কাছাকাছি সময়ে জীবন থেকে চলে যাওয়ায় ফের মারাত্মক ক্রাইসিসে পড়েছি। খুব সহজে ভেঙে পড়ছি। চেষ্টা চালাচ্ছি এ থেকে বেরিয়ে আসতে, নিজেকে রুটিনে ফেলতে আর এ ব্যাপারে আমায় মানসিক শক্তি জোগায় আমার ছেলেই। ওর লড়াই ওর মনের জোর আমাকে সাংঘাতিক সাহায্য করে। আর আছে মেয়ে। ওদের সঙ্গ আমাকে বাপি-মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয় যে, নেভার গিভ আপ।
স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায়
শিক্ষিকা
মেয়েরা সব পারে, তারা মহীয়সী, দশভুজা এই ভাবনা থেকেই সমস্যার শুরু বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। কারণ এই ধারণা যেমন অন্যেরা পোষণ করেন তেমনই এটা ছোট্টবেলা থেকে মেয়েদের মনের মধ্যেও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাই ওভাবেই সে ভাবতে শেখে। সব সহ্য করে নাও, এ শিক্ষা নিয়ে বড় হয়ে সংসার জীবন হোক বা কর্ম জীবন নিজের শরীর, মনের ক্ষমতাকে ছাপিয়ে গিয়ে সে দায়িত্ব পালন করতে থাকে। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে কেউ কেউ। ফলস্বরূপ ক্লান্ত সে হবেই। হতাশা আসবেই। মনের ক্লান্তি শরীরকে গ্রাস করবেই। কিন্তু তখন আর কেউ তাদের জন্য ভাবে না! সকলে তো তাকে সুপার উওম্যান ভেবেই বসে আছে। তারও যে কেয়ার, অ্যাটেনশন, সিমপ্যাথি এই রসদগুলো লাগে তা ভাবার প্রয়োজনই মনে করে না।
আমার মতে তাই মানসিক সমস্যার সমাধান করতে গেলে আমাদের সমাজের বদ্ধমূল কিছু ধারণা, গেড়ে বসে থাকা মনোভাব সবার আগে বদলানো প্রয়োজন। আমি স্কুল, পড়ানো, সাংসারিক দায়িত্ব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি, সত্যি বলতে কী মন ভাল আছে না খারাপ তা নিয়ে ভাবার অবকাশই পাই না। তবুও তারই মধ্যে মন ক্লান্ত হলে, বেড়াতে খুব ভালবাসি, তাই বেরিয়ে পড়ি। আর কোনও সময় সে সুযোগ না পেলে সব ছেড়ে পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাই।
ডাঃ পিয়া রায়
গাইনোকলজিস্ট
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সার্বিক সচেতনতা আমাদের দেশে একেবারেই নেই। এর বাস্তবতা নিয়েই অনেকের কোনও ধারণা নেই। আবার কোনও কোনও লক্ষণ দেখে কেউ বুঝবে যে পরিবারে কেউ মানসিক অসুস্থতার শিকার হচ্ছে সে সমন্ধেও কোনও সম্যক ধারণা নেই। যেমন, স্ট্রেস কথাটা খুব সাধারণভাবে আমরা ব্যবহার করি। স্ট্রেস যেমন কর্মজগতে হয় তেমন সাংসারিক ক্ষেত্রেও হয়। কিন্তু এর বাড়াবাড়ি যে কোনও মানুষকে অসুস্থতার কোন পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে তা বেশিরভাগই জানেন না। যত দেরি, ক্ষতি তত। মানসিক স্বাস্থের ক্ষেত্রে এটাই থিওরি। খিদে না হওয়া, ঘুম কম হওয়া, অকারণ কান্না পাওয়া, হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া বা ভীষণ অ্যাংজাইটি নিয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া— এগুলো সবই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণ। মেয়েরা এগুলোর কোনওটিকেই গুরুত্ব দেয় না। এ-ছাড়া প্রেগন্যান্সির সময়, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকলে, টিন এজ-এ হরমোনাল চেঞ্জের সময় অনেক রকম মানসিক সমস্যা হয় যা আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখি না। এ ব্যাপারে ফ্যামিলি সাপোর্ট ও সচেতনতা খুব দরকার। মনের অসুখকে অন্য অসুখের মতোই গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি। কারণ অন্য অসুখের মতোই চিকিৎসার মাধ্যমে মনের অসুখ বা সমস্যাকেও সারিয়ে তোলা যায়।