মহুয়া
আলিপুরদুয়ার জেলার মহুয়া। অফবিট পিকনিক স্পট। জায়গাটা হাসিমারার দলশিংপাড়ার ভারত-ভুটান সীমান্তের কাছেই। রয়েছে পাহাড়, চা-বাগান এবং বনাঞ্চল। সবুজের বুক চিরে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাওয়া যায় তোর্সা নদীর চরে। খরস্রোতা পাহাড়ি তোর্সার স্বচ্ছ শীতল জল কলকল শব্দে বয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যে মন মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। নদীর ঠান্ডা জল স্পর্শ মাত্রই শিউরে উঠবে দেহ, মন। কিছুটা দূরে রয়েছে ভুটান পাহাড়। পর্যটকদের হাতছানি দেয়। সব মিলিয়ে এক অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই অঞ্চলে আছে বেশকিছু খোলামেলা জায়গা। সেখানে অনেকেই বেড়াতে এসে সময় কাটান। প্রকৃতির মাঝে চড়ুইভাতির জন্য স্থানীয়রা গড়ে তুলেছেন ইন্দো-ভুটান গ্রিন ওসান পিকনিক স্পট। শীতকালে প্রচুর মানুষ পিকনিকের জন্য আসেন। কাছাকাছি দোকান-বাজার আছে। সেখান থেকে কেনা যায় জিনিসপত্র। রাঁধেন, বাড়েন, একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন। সারাদিন ঘুরে বেড়ান নদীর চরে।
কীভাবে যাবেন? আলিপুরদুয়ার শহর থেকে দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশন থেকে আলিপুরদুয়ার স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়। থাকা যায় আলিপুরদুয়ারের হোটেলে। আছে বেশকিছু হোমস্টে।
আরও পড়ুন-সম্মান সব ধর্মকে, নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী, কাল সংহতি মিছিল, বাংলায় প্রস্তুতি তুঙ্গে
জগজীবনপুর
মালদহে রয়েছে বেশকিছু পিকনিক স্পট। প্রায় প্রতিটি জায়গায় পিকনিক করার পাশাপাশি রয়েছে প্রাচীন বাংলার ভাস্কর্য দেখার সুযোগ। ফলে পিকনিকে এসে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যায়। জগজীবপুরও তেমন একটি জায়গা। প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। মালদহ শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে। হবিবপুর ব্লকের এই গ্রামে রয়েছে প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধবিহার। ইতিহাসবিদরা জানতে পারেন, এই বৌদ্ধবিহারটি পাল আমলের। তখন পাল রাজা মহেন্দ্রর রাজত্ব ছিল। জগজীবনপুরে মাটি খুঁড়ে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার হতেই এই রাজার উল্লেখ মেলে। ইতিহাসবিদের মতে, এটি ছিল বৌদ্ধমঠ। বর্তমানে এখানে ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নেই। বহু পর্যটক এখনও বৌদ্ধবিহারের টানে এই গ্রামে ছুটে আসেন। গড়ে উঠেছে পর্যটন স্থল। অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে এখানে পিকনিকের জন্য ভিড় করছেন। কারণ বৌদ্ধ বিহারের আশপাশে রয়েছে বিশাল ফাঁকা জায়গা। দিনভর সেখানে পিকনিক করা যায়। সুন্দর গ্রামীণ মনোরম পরিবেশ। খাওয়াদাওয়ার পর অনেকেই ঘুরে বেড়ান।
কীভাবে যাবেন? শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে মালদহ। মালদহ থেকে স্থানীয় গাড়িতে যাওয়া যায় জগজীবনপুরে। থাকতে হবে মালদহে। আছে প্রচুর হোটেল।
আরও পড়ুন-ধান কেনাতেও কেন্দ্রের বঞ্চনা, তবু স্বনির্ভর প্রকল্পে ৩০ হাজার কোটি
চুপির চর
চুপ থেকেই সম্ভবত চুপি নাম। নদীর চরে অবস্থান। তাই চুপির চর। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ও পিকনিক স্পট। নবদ্বীপ থেকে সামান্য দূরে। পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দল ভিড় জমায়। নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায় তাদের আনাগোনা। ভাগীরথীর অন্যতম একটি শাখা যা অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ হয়ে গঙ্গাবক্ষে মিশেছে। সেই হ্রদই এখন পর্যটন কেন্দ্র। শান্ত নদী, একেবারে স্রোতহীন মনোরম পরিবেশ। স্বচ্ছ হ্রদের জলে সবুজ জলজ উদ্ভিদের দেখা মেলে নৌকা থেকেই। পাখিদের কলতান আর মাঝির দাঁড় টানার শব্দই জায়গাটির মূল আকর্ষণ। গঙ্গার এক প্রান্তে কুয়াশায় ঢাকা মায়াপুর মন্দির, অপর প্রান্তে সবুজ কচুরিপানায় মোড়া এই হ্রদ। প্রকাণ্ড আমবাগান, চারটি কটেজ, দু’টি গেস্ট হাউস রয়েছে। বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। খাওয়াদাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়া যায়। হাতে একটু সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, মায়াপুর। ফেরার পথে কালনার ১০৮ শিবমন্দির আর হংসেশ্বরী মন্দিরেও ঢুঁ মারতে পারেন।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া কিংবা শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লাইনের ট্রেনে চড়ে পূর্বস্থলী স্টেশন। সেখান থেকে চুপি কাষ্টশালী পাখিরালয় যাওয়া যায় টোটোতে।
আরও পড়ুন-সমস্যা সমাধান ও জনসংযোগ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া
বাথানবাড়ি
পশ্চিম বর্ধমান জেলার বাথানবাড়ি। আসানসোলের মাইথনে অবস্থিত। দুর্গাপুর থেকে দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। পিকনিক স্পট হিসেবে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। দামোদর নদীর পাড়ে, বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় রয়েছে এই পর্যটনস্থল। মাইথন ড্যামের জলে তৈরি লেকও এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। সারা বছর বহু মানুষ আসেন। শীতের মরশুমে বসে পিকনিকের জমজমাট আসর। জলাধার, পাহাড়, জঙ্গল নিয়ে অন্য রকমের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে ডিজে বাজানো নিয়ে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পিকনিকে আসা মানুষদের সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়। মাইথন ড্যামের নৌকাবিহারে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া চাপতে দেওয়া হয় না। শীতের পিকনিক এবং পর্যটনের মরশুমে মাইথনে ঘুরতে আসা প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত হয়ে একযোগে বৈঠক করেছে ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন ও মাইথন জলাধারের নৌকা চালকেরা। প্রতিটি সিদ্ধান্ত মেনে চলেন পর্যটকরা। তাঁরা পিকনিক এবং ভ্রমণের আনন্দ নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে ট্রেনে আসানসোল। আসানসোল থেকে বাসে মাইথন। ভাড়া গাড়িতেও যাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-এগিয়ে এসেছে পরীক্ষার সময়, ভোর থেকেই মিলবে বাস ট্রেন অটো মেট্রো
গনগনি
শীতকালে পিকনিকের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে অবস্থিত গনগনি খুবই জনপ্রিয় একটি পিকনিক স্পট। দূর থেকে বহু মানুষ এখানে আসেন। লালমাটির আঁকাবাঁকা পথ ধরে দু’দিকে কাজুবাদামের ঘন জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছতে হয় বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে। এটি একটি নদী উপকূল। শিলাবতী নদীর ভূমিক্ষয়ের ফলে প্রাকৃতিক নিয়মে বছরের পর বছর ধরে অভূতপূর্ব ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। খাদের গায়ে এই অভূতপূর্ব ভাস্কর্য দেখে মনে হবে যেন কোনও শিল্পী তাঁর নিজস্ব হাতে ছেনি আর হাতুড়ি দিয়ে খোদাই করেছেন। একদম নিচে নামার জন্য রয়েছে আঁকাবাঁকা সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে নদীর তটে পৌঁছে যাওয়া যায়। ইতিউতি ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যাওয়া যায় এই গিরিখাতের বিভিন্ন গুহায়। জনবিরল স্থান। পিকনিকের সময়ে এবং বিশেষ কিছু দিনে গনগনিতে ভিড় জমে। সরকারি উদ্যোগে এই জায়গাটিকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। পিকনিকের জন্য রয়েছে আলাদা স্পট। পরিবেশ সচেতনার জন্য এখানে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং পিকনিকের সময় তারস্বরে মাইক-ডিজে বাজানোও নিষিদ্ধ। পিকনিক ছাড়াও যেকোনও সময় এখানে ঘুরতে আসা যায়। তবে দলবেঁধে এলেই ভাল। গনগনির কাছে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন মন্দর। টোটো রিজার্ভ করে ঘুরে দেখা যায়।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে সকালে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে বা শালিমার থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেসে গড়বেতা স্টেশনে নেমে টোটোয় প্রায় ২ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সবুজ দ্বীপ
কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে বেহুলা ও হুগলি নদীর সংযোগস্থলে রয়েছে এক চর, সবুজ দ্বীপ। হুগলি জেলা পরিষদ ও মৎস্য দফতরের উদ্যোগে স্বপ্নের মতো সুন্দর এই জায়গার সংস্কার হয়েছে।
ঝাউ, পাম, ইউক্যালিপটাস, অর্জুন, শাল, সেগুন, মেহগনি, সুপারি, নারকেল ও দেবদারুর মহীরুহে এই দ্বীপের নাম ‘সবুজ দ্বীপ’ সার্থকতা পেয়েছে। মৃদুমন্দ ছন্দে বয়ে চলা নদীর মাঝে ছবির মতো সুন্দর একটি জায়গা। শীতের মরশুমে সবুজের সমারোহে পিকনিকে মেতে ওঠেন বহু মানুষ। নির্জন নিরিবিলির মধ্যে প্রিয়জন বা পরিবারের সকলের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর এক আদর্শ জায়গা। দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে বেড়িয়ে পড়া যায়। কাছেপিঠে আছে বেশকিছু প্রাচীন মন্দির। সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে ৪০ কিলোমিটার দুরের ব্যান্ডেল হয়ে ব্যাক লুপ লাইনে ত্রিবেণী, বলাগড়, সোমড়াবাজার রেল স্টেশন থেকে যাওয়া যায় সবুজ দ্বীপ। সরাসরি ট্রেনও রয়েছে। সোমড়াবাজার রেল স্টেশন থেকে রিকশা নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন-নাসার ডাকে সাড়া বিক্রমের
গোকুলপুর
পিকনিকের জন্য একটু অফবিট জায়গা খুঁজতে বসলে বসিরহাটের পাশে টাকির কথা মাথায় আসে। কিন্তু বসিরহাট থেকেই জাস্ট ১৫ কিলোমিটার দূরে ইছামতীর বুকে রয়েছে ছোট সবুজে ঘেরা গ্রাম গোকুলপুর। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। পিকনিকের জন্য আদর্শ জায়গা। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এই গ্রামে একটা সময় পর্যন্ত স্থানীয়রাই পিকনিক করতেন৷ এখন বাইরের লোকজন যাচ্ছেন। পিকনিকের কোনও স্পট ভাড়া দিতে হয় না। একটাই শর্ত, পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নদীর ভেড়ির উপর স্পট নিজেদের সুবিধামতো বেছে নেওয়া যায়। ইলেক্ট্রিসিটি নেই, রান্নার বাসনপত্র, গ্যাস ওভেন, সবই নিয়ে যেতে হবে। অথবা একটু সকাল সকাল গিয়ে এলাকায় ডেকরেটরের থেকে ভাড়া করে নেওয়া যায়। জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করুন এবং সবুজ প্রকৃতির বুকে ঘুরে বেড়ান।
কীভাবে যাবেন? কলকাতা থেকে টাকি রোড হয়ে বসিরহাট। বসিরহাট থেকে গোকুলপুর। রয়েছে স্থানীয় যানবাহন। টানা গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। সমস্যা হল ভেড়ির উপর গাড়ি নিয়ে ওঠা যাবে না। রাখতে হবে অনেকটা দূরে।
আরও পড়ুন-রাজ্যপাল-নিযুক্ত উপাচার্যেরা শিক্ষাক্ষেত্রে গেরুয়াকরণ চান
কৈখালি
শীতের পিকনিক স্পটের মধ্যে অন্যতম সুন্দরবন। জঙ্গল নদী ভরা এই বাদাবন অঞ্চল সকলের মন কাড়ে। সুন্দরবনে আছে বেশকিছু পিকনিক স্পট। তার মধ্যে অন্যতম কৈখালি। কুলতলি ব্লকের গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে জায়গাটা। এই সময়ে মাতলা নদীর পাড়ে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত কৈখালি পর্যটন কেন্দ্রে বসছে পিকনিকের দেদার আসর। মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। চলছে জোরদার খাওয়াদাওয়া, ঘোরাঘুরি। পুলিশ ও কুলতলি ব্লক প্রশাসনের তৎপরতা তুঙ্গে। মাতলা নদীর পাড়ে পিকনিক দলের ভিড় শুরু হয় মোটামুটি ডিসেম্বর থেকে। চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কাছাকাছি দোকানবাজার আছে। জিনিসপত্র কিনে নেওয়া যায়। সহযোগিতায় করেন স্থানীয়রা। কৈখালি পর্যটন কেন্দ্রে রাত্রিবাস করে বহু পর্যটক খেয়াঘাটে চলে আসেন। বেরিয়ে পড়েন সুন্দরবনের বনি ক্যাম্প, কলস ক্যাম্প, সজনেখালি, সুধন্যখালি দেখার উদ্দেশ্যে। বোট বা লঞ্চে নদীবক্ষে ভেসে বেড়ানোর সময় একবার বাঘের দেখা পাওয়া গেলে বাড়তি আনন্দ।
কীভাবে যাবেন? শিয়ালদহ থেকে নামখানা লোকাল। জয়নগর-মজিলপুর স্টেশনে নেমে ট্রেকার জাতীয় গাড়িবা অটোয় যাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-উদ্বোধনই হল না অনলাইনে মিলছে রামলালার প্রসাদ? অ্যামাজনকে কেন্দ্রের নোটিশ
গড়চুমুক
হাওড়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র গড়চুমুক। হুগলি নদী ও দামোদর নদের সংযোগস্থলে অবস্থিত। উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোডের পূর্বদিকে নদীর ধারে চড়ুইভাতির ব্যবস্থা হয়। মনোরম পরিবেশ। শীতের মরশুমে বহু মানুষ বেড়াতে আসেন। পিকনিকে মেতে ওঠেন। দিনকয়েক আগেই গড়চুমুকে খুলেছে মিনি জু। উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়। পিকনিকে আসা মানুষদের পাশাপাশি বেড়াতে আসা মানুষরাও ভিড় জমাচ্ছেন। মিনি জুয়ের মধ্যে পাখির পাশাপাশি রক পাইথন, ইমু, সজারু, কুমির, বাঘরোল দেখার আনন্দে মেতে উঠছেন ছোট থেকে বড় সকলেই। গড়চুমুক জমজমাট জায়গা। রয়েছে অনেক দোকানপাট। পিকনিকে আসা মানুষরা অনেকেই সেখান থেকে কেনাকাটা করেন। অনেকেই পিকনিকের জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে যান। সারাদিন হইহই করে কাটান। একাধিক পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে বহু মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসেন।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে উলুবেড়িয়া রেল স্টেশনে নেমে শ্যামপুরের বাসে গড়চুমুক যাওয়া যায়। পাশাপাশি স্টেশন থেকে পাওয়া যায় ছোট যানবাহন।
আরও পড়ুন-হিন্দুধর্মে চার শঙ্করাচার্য একনজরে তাঁদের ভূমিকা
বালুঘাটা
শীত-পিকনিকের নতুন ঠিকানা বালুঘাটার পাখি চড়া। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার রেঞ্জের অধীন বালুঘাটা অরণ্য খাতায়-কলমে ১৮০ হেক্টরের কাছাকাছি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। হলদি নদীর পাশে এখানে রয়েছে কয়েক লক্ষ ঝাউ আর ম্যানগ্রোভ গাছ। পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, শীতের মরশুমে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও হাজার হাজার পর্যটক আসেন। সন্ধে নামলেই এলাকার গাছগাছালিতে হাজার হাজার পাখি বাসায় ফেরে। সেই দৃশ্য এবং পাখিদের কলকাকলি উপভোগ করতে ভিড় জমান বহু মানুষ। বর্তমানে এই পাখি চড়াতেই নতুন করে বনসৃজন করছে বন দফতর। বালুঘাটায় পর্যটকরা এতদিন ভিড় জমাতেন সানসেট ভিউ পয়েন্টে। পাশাপাশি পাখি চড়া দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শীতের মরশুমে এলাকাটি হয়ে উঠেছে পিকনিকের নতুন ঠিকানা। জায়গাটি তার দিয়ে ঘেরা। কড়া পাহারাও রয়েছে। বেড়াতে আসা মানুষেরা বাসায় ফেরা পাখিদের যাতে বিরক্ত না করেন, সেই জন্য ওই ব্যবস্থা। পিকনিকের পরে থার্মোকলের থালা, প্লাস্টিক ছড়িয়ে যাতে এলাকা নোংরা না করে সেই দিকেও প্রশাসনের নজর রয়েছে।
কীভাবে যাবেন? জায়গাটা হলদিয়ার খুব কাছেই। ধর্মতলা, হাওড়া বা মেচেদা থেকে বাসে যাওয়া যায়। যাওয়া যায় ট্রেনেও। আছে হলদিয়া লোকাল।
আরও পড়ুন-কোচবিহারে সভায় ছবি-মোদিকে বিঁধলেন চন্দ্রিমা
ব্যান্ডেল
হুগলির ব্যান্ডেল। প্রাচীন এই শহরটি ফরাসি উপনিবেশের ইতিহাস আজও বহন করে চলেছে। পর্তুগিজরা বাণিজ্য করতে এসে এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিল ব্যান্ডেল চার্চ। সারা বছর বহু মানুষ আসেন। তবে বেশি ভিড় দেখা যায় শীতের মরশুমে। ব্যান্ডেল চার্চের কাছে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে পিকনিক স্পট। নদীর ধারেই। ব্রেকফাস্ট সেরে ব্যাডমিন্টনে ঘাম ঝরিয়ে নেওয়া যায়। তারপর দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। এ-ছাড়াও আছে আরও কয়েকটি পিকনিক স্পট। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমার বাংলা পিকনিক স্পট, উল্লাস পিকনিক স্পট, মাতৃনিবাস পিকনিক গার্ডেন, রাজহাট পিকনিক গার্ডেন, বাড়ি বাগান পিকনিক স্পট, অমরকুঞ্জ পিকনিক গার্ডেন। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। প্রতিটি জায়গা সুসজ্জিত। রয়েছে বাগান, ছোটদের বিনোদনের ব্যবস্থা। মন ভাল হয়ে যাবে। কাছেপিঠে আছে বেশ কয়েকটি দেখার মতো জায়গা। ঘুরে আসতে পারেন ইমামবাড়া ও দেবানন্দপুরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। সবমিলিয়ে কয়েক ঘণ্টা মন্দ কাটবে না।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে ট্রেনে ব্যান্ডেল। সেখান থেকে রিকশা, টোটো। টানা গাড়িতেও যেতে পারেন। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে ফেরা যায় সন্ধেবেলায়।
আরও পড়ুন-পাকুয়াহাট কলেজে চালু সাঁওতালি অনার্স
ফলতা
কলকাতার অদূরে বিখ্যাত পিকনিক স্পট ফলতা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই অঞ্চলটি এককালে ছিল বন্দর। বহু পুরনো জায়গা। এখনও ছোটখাটো জাহাজ দাঁড়াতে দেখা যায় নদীর তীরে। তবে অধিকাংশ সময়ে মাছ ধরার নৌকা দেখতে পাওয়া যায়। একটু দূরেই রয়েছে প্রায় দুশো বছরের পুরনো কেল্লা, ওয়াচটাওয়ার। কয়েক পা এগোলে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর বাগানবাড়ি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। শীতের মরশুমে সকালের অনেকটা সময় পর্যন্ত মুড়ে থাকে কুয়াশার চাদরে। সিজন চলছে। দলে দলে মানুষ এখানে আসছেন পিকনিক করতে। নদীর তীরে ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষজন নানারকম ভাবে সহযোগিতা করেন। আছে দোকান-বাজার। সহজেই পাওয়া যায় রন্ধনসামগ্রী। জলখাবার খেয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় নদীর ধারে। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে যাওয়া যায় আর একটু দূরে। সেই তালিকায় থাকতে পারে ডায়মন্ড হারবার, নৈনান। ফলতায় ট্যুরিস্টদের জন্য বোটিংয়ের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে গঙ্গাবক্ষে কাটিয়ে দেওয়া যায় বেশকিছুটা সময়।
কীভাবে যাবেন? ধর্মতলা থেকে ডায়মন্ড হারবারগামী বাসে ফলতা যাওয়া যায়। যাওয়া যায় নিজস্ব গাড়িতেও।