সুমন তালুকদার, টাকি: প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্যকে আঙ্গিক করে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে পূজিত হচ্ছে বসিরহাটের ইছামতী পাড়ের টাকি রাজবাড়ির (Taki Rajbari) দুর্গাপূজা। পুরনো সব রীতি মেনেই মা-দুর্গার আরাধনা ও নিরঞ্জন আজও বহমান। নিয়মের বেড়াজালে প্রাণী বলিতে ছেদ পড়লেও আজও চলে আখ, কুমড়ো বলি। চলে পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ জন বেহারার কাঁধে চড়ে ইছামতী নদীতে মায়ের নিরঞ্জন। সীমান্তে কাঁটাতারের ছেদ পড়লেও অবিভক্ত বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে আজ পূজিত হয়ে চলেছে টাকি রাজবাড়ির এই দুর্গাপূজা।
বসিরহাটের টাকির পূর্বের রাজবাড়ি (Taki Rajbari) দুই বাংলার এখনও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। এই পুজোকে ঘিরে প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ইংরেজ আমলে সতীদাহ প্রথা রদ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। রামমোহন রায় সেই বিলে প্রথম সই করেছিলেন, দ্বিতীয় সইটি করেছিলেন এই জমিদার বাড়ির কালিনাথ মুন্সি। ইংরেজরা তাঁদের রায়চৌধুরী উপাধি দেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তাঁদের শামিল করেন। যেমন আজও ইতিহাসের সাক্ষী কলকাতা থেকে টাকি পর্যন্ত টাকি রোড, টাকি গভর্নমেন্ট কলেজ। ভারতবর্ষের উন্নয়ন প্রকল্পে তাঁদের অবদান ইতিহাসের পাতায়। এক সময় বন্দুকের টোটা ফাটিয়ে মহিষ বলি হত এই বাড়ির প্রাঙ্গণে নবমীর দিন। কালের নিয়মে আজ সেটা বন্ধ। অবিভক্ত বাংলা অর্থাৎ ওপার বাংলা থেকে বহু দর্শনার্থী ইছামতী নদী পেরিয়ে এই রাজবাড়িতে ভিড় জমাতেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত পুজোর দিনগুলিতে। এখানে সমস্ত ধর্মের মানুষ রাজবাড়ির পুজোর দালান কোঠায় এসে পুজোর ক’টা দিন ভূরিভোজে শামিল হত। আজও সেই পরম্পরা মেনে চলেছেন পরিবারের সদস্যরা। রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছর পেরিয়েছে, এখানকার বিসর্জনে এক ইতিহাস সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে। পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ বেহারার কাঁধে চড়ে ইছামতীর রাজবাড়ির ঘাটে নিয়ম-তিথি মেনে প্রথমে এই প্রতিমার বিসর্জন হবে। তারপর একে একে অন্যান্য বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হবে। তাই সব মিলিয়ে এবারেও টাকির রাজবাড়ির পুজো এক অন্য মাত্রা নেবে। প্রাচীন ইতিহাস সংস্কৃতি নিয়ম-তিথি উপচার মেনেই এবারেও এই পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবে মাতবে টাকিবাসী।