গ্রীষ্মকাল মানেই ঘরে-বাইরে রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে একেবারে ল্যাজেগোবরে দশা। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই, খেয়ে সুখ নেই, সেজে আনন্দ নেই। বিয়ে বাড়ি, পৈতে বাড়ি, পার্টি, উৎসব— কোনও কিছুতেই মজা নেই। সব নেই-রা যেন একসঙ্গে। তীব্র হিট ওয়েভ সঙ্গে আর্দ্রতা, ভ্যাপসা দমবন্ধ করা গরম। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। দীর্ঘ দগ্ধ এই দিনগুলোয় ত্বক, চুল বেহাল হবে— এ আর নতুন কথা কী। কী কী সমস্যা হয় এই সময়, তার সমাধানই বা কী, একটু দেখে নেওয়া যাক।
সানবার্ন
গরমের সবচেয়ে চেনা সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল রোদে পোড়া বা সানবার্ন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণের ফলে ত্বক পুড়ে কালি। ঘরের ভিতরে থাকলেও কিন্তু এই ইউভি রশ্মি প্রভাব ফেলে। অনেকেরই এর ফলে ত্বক লাল হয়, ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। চাকা চাকা বা ছোপ ছোপ দাগ হয়। এই সানবার্ন থেকেই একটা সময় সান ট্যান হয়ে যায়। ট্যানিং গভীরে হলে তোলা দুষ্কর। বলিরেখা, অকালবার্ধক্য, মেচেতা, ত্বকের রঙে অসামঞ্জস্য— সবই হতে থাকে।
রোদে পোড়া থেকে ত্বক বাঁচাতে বাইরে বেরনোর আগে কমপক্ষে SPF ৩০ সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি। জায়গা অনুযায়ী SPF বেশিও লাগতে পারে। তবে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিলেই হল না, এর আলাদা একটা নিয়ম আছে। বেরনোর আধঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ম। তবে তা বেরনোর সময় কাজ করতে শুরু করে। অফিসে পৌঁছে মুখ ভাল করে ধুয়ে আর একবার সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। টুপি, সানগ্লাস মাস্ট। সেই সঙ্গে পাতলা সুতির কাপড়ে নাক, মুখ, চোখ, শরীর ঢেকে বেরলে সবচেয়ে ভাল। দিনের ১২টা থেকে ৩টে— এই সময়সীমা বাইরে থাকা এড়িয়ে চলুন।
সানস্পটস
সূর্যের দাগ, যা সোলার লেন্টিজিন নামেও পরিচিত। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির অতিরিক্ত সংস্পর্শে আসার কারণে ত্বকে এই ছোট ছোট কালো বা হালকা বাদামি বা কিছু ক্ষেত্রে গাঢ় বাদামি দাগ দেখা দেয়। সাধারণত ত্বকের যে অংশে সূর্যের আলো পড়ে, যেমন মুখ, হাত, বাহু এবং কাঁধ সেখানেই এটা বেশি হয়। ফর্সা ত্বকের লোকেদের মধ্যে রোদের দাগ বেশি দেখা যায় এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সানস্পট প্রতিরোধ করতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি। অনেকের ভারী সানস্ক্রিন ত্বক-সহায় হয় না, তারা পাউডার বা অয়েল ফ্রি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। খালি মুখে বেরবেন না, কোনও হালকা বেস যেন সবসময় থাকে। এতে ত্বক সুরক্ষিত থাকে।
আরও পড়ুন-এই গরমে কী খাবেন
ফুসকুড়ি বা ঘামাচি
প্রিকলি হিট, হিট র্যাশ বা মিলিয়ারিয়া রুব্রা নামেও পরিচিত। খুব গরম এবং আর্দ্রতায় ত্বকের ঘর্মগ্রন্থির মুখ ব্লক হয়ে গেলে এই ধরনের ফুসকুড়ি বা ঘামাচি হয়। এই ফুসকুড়ি চুলকোয়, জ্বালা করে। বেশি চুলকে ফেললে সংক্রমণ বাড়ে। প্রিকলি হিট যে কারও হতে পারে। সাধারণত শরীরের যেসব অংশ পোশাক দিয়ে ঢাকা থাকে, যেমন পিঠ, বুক, ঘাড় এবং ঊরুতে— সেখানে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। তাই ছোট হোন বা বড়, ত্বক এই সময় শুষ্ক রাখা খুব জরুরি। ঘাম যেন জমে না থাকে।
সুতির ঢিলেঢালা শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য কাপড় পরুন। স্নান করুন অন্তত দিনে তিনবার। অনেকে স্নান করে পাউডার মাখেন, এতে আরও বেশি ঘামাচি হয়। চুলকানির উপশমে ক্রিম লাগানো যেতে পারে তবে বরফ ঘষলেও ভাল কাজ দেবে। সংক্রমণ যদি বাড়ে তবে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নিন।
গরমে শুষ্ক ত্বক
গরমের পারদ যতই চড়ে ত্বকের তাপমাত্রাও তত বাড়তে থাকে। গ্রীষ্মে ত্বক শুষ্ক হয় বিভিন্ন কারণে, যেমন অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতা সহ্য করতে না পেরে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফাটতে শুরু করে। গরম জল খেলে ত্বক শুষ্ক হয় কারণ গরম জল ত্বকের স্বাভাবিক তেল নষ্ট করে। এছাড়া পর্যাপ্ত জল না খেলে জলশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক, খসখসে হয়ে যেতে থাকে। গ্রীষ্মে শুধু শুষ্ক ত্বক নয়, যে কোনও ত্বকের সমস্যা দূর করতে শিট মাস্ক খুব ভাল। সানবার্ন বা ট্যান দূর করতেও খুব কাজের এই শিট মাস্ক। এতে দ্রুত জেল্লা ফেরে। এখন বাজারে নানা ধরনের শিট মাস্ক রয়েছে।
এর সঙ্গে লাইট ওয়েট ময়শ্চারাইজার এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ব্যবহার করুন। চিনিযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, যা শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে দেয়।
শুষ্ক ত্বকের প্যাক
দু’ চামচ মুলতানি মাটি ও এক চামচ চন্দন বাটা এবং আধ চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে পনেরো মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন করলে ভাল।
গরমে তৈলাক্ত ত্বক
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা গরমে সবচেয়ে বেশি। একে তো তীব্র তাপপ্রবাহ তারপর বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা— দুয়ে মিলে এই ধরনের ত্বক আরও বেশি তেলতেলে হয়ে যায়। এর সঙ্গে একটানা জমতে থাকে ধুলো-বালি, রোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণ, র্যাশ হতে থাকে। মুখ অনেক বেশি কালচে লাগে। তাই মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখুন। ভিজে টিস্যু দিয়ে বারবার মুখ মুছে নিন। ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল, ময়লা এবং ঘাম দূর করতে দিনে দু’বার মাইল্ড ক্লিনজার ব্যবহার করুন। ক্লিন করার পর টোনার ব্যবহার করুন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগান। এটা পুরো পদ্ধতি নিয়মিত করলে তবেই ত্বক ভাল থাকবে।
বারবার কিন্তু জল দিয়ে মুখ ধোবেন না, এতে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয় এবং ত্বক আরও বেশি সিবাম তৈরি করে ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। কারণ হাত থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং তেল, ময়লা আপনার ত্বকে গিয়ে ব্রণ হতে পারে।
‘নন-কমেডোজেনিক’ অর্থাৎ প্রদাহ সৃষ্টি করবে না এমন প্রসাধনী ব্যবহার করুন। দিনে একবার অ্যালকালাইন ওয়াশ করুন অর্থাৎ ক্ষারযুক্ত সাবান মুখে দিন এতে অম্ল, ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষিত হবে, ব্রণ কমবে।
আরও পড়ুন-নীরজ দ্বিতীয় তবু লক্ষ্যভেদ
তৈলাক্ত ত্বকের প্যাক
১টি পাকা কলা, ২ চামচ লেবুর রস আর ১ চামচ মধু দিয়ে পেস্ট করে হাতে, মুখে ও গলায় মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। মিনিট পনেরো পর মুখ ভাল করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারলে খুব ভাল ফল পাওয়া যাবে।
ব্রণ রুখতে
ব্রণর জন্য টি ট্রি অয়েল বেশ কার্যকরী কারণ এতে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রিন টি-ও খুব ভাল। যা বলিরেখা দূর করতে, ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, সেবামের ক্ষরণও নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে যায় না।
ঈষদুষ্ণ জলে একটি গ্রিন টি-র ব্যাগ ভিজিয়ে রাখুন। চা ঠান্ডা হয়ে গেলে সেটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। ওর মধ্যে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিন। মিশ্রণটি ফ্রিজেও রেখে দিন। মুখে ঠান্ডা ঠান্ডা স্প্রে করুন বিশেষ করে রাস্তাঘাটে, রোদে এতে ব্রণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
দু’কাপ জলে এক মুঠো নিমপাতা ফুটিয়ে নিন। জল ঠান্ডা হলে ছেঁকে বোতলে ভরে রাখুন। এই নিম ফেস মিস্ট ব্রণ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। কারণ আয়ুর্বেদে নিমকে ঔষধি হিসাবে গণ্য করা হয়। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান।
তৈলাক্ত আঠালো ত্বক
গ্রীষ্মের আর্দ্রতা, তাপ এবং ঘামের কারণে তৈলাক্ত এবং আঠালো ত্বকের সমস্যা অনেকটাই বেশি হয়। এটি প্রতিরোধ করতে নিয়মিত স্নান করুন। এমন ত্বকের ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন যেন সম্পূর্ণ অয়েল-ফ্রি হয় খেয়াল রাখবেন। না হলে ত্বক আরো আঠালো হয়ে যেতে পারে। হাইড্রেটেড থাকুন। এইরকম তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভাল উপাদান হল স্যালিসিলিক অ্যাসিড এবং টি ট্রি অয়েল। এছাড়া আঠালো ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে হায়ালুরনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিনের মতো হিউমেক্ট্যান্ট-সহ জল-ভিত্তিক, তেল-মুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
আঠালো তৈলাক্ত ত্বকের প্যাক
মধু এক চা চামচ ও বেসন প্যাক দু’ চা চামচ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ
গ্রীষ্মকালে শরীরের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা। ঘাম সাধারণত গন্ধহীন হয় এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। আমাদের ত্বকে রয়েছে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ ঘর্মগ্রন্থি। এই গ্রন্থিগুলো ঘাম নিঃসরণ করে। আর এই ঘামের সঙ্গে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ব্যাকটেরিয়া জমে এবং সেই সঙ্গে ত্বকেও লেগে থাকে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া। এগুলোই ঘামের লবণ জলের সঙ্গে মিশে সৃষ্টি করে দুর্গন্ধ। আর যেহেতু গরমে ঘাম বেশি হয় ফলে শরীরে দুর্গন্ধও বেশি হয়।
প্রতিরোধ
এটি প্রতিরোধ করার জন্য খুব লুজ সুতির জামাকপড় পরুন। নিয়মিত দিনে দু’বার বা তার বেশি স্নান করুন এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান বা লিকুইড ব্যবহার করুন। জলে নিমপাতা সেদ্ধ দিয়ে স্নান করতে পারেন। বাথসল্টও খুব ভাল দুর্গন্ধনাশক। এটাও জলে ফেলে স্নান করতে পারেন। দেহের লোম নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। লোমের গোড়াতে খুব দ্রুত ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধে। আন্টিপার্সপিরেন্ট সঙ্গে রাখুন।
ব্লটিং পেপার সঙ্গে রাখুন
গরম বলে কী উৎসব অনুষ্ঠানে যাওয়া মানা? এইসময় মেক আপ করতেই পারেন তবে অবশ্যই লাইট বেস ম্যাটফিনিশড মেকআপ করতে হবে। কিন্তু এত গরমে মেকাপের পর যাতে মুখটা তেল-চকচকে হয়ে না যায় তাই ম্যাট ফিনিশ লুক বজায় রাখতে সারাদিন ব্লটিং পেপার হাতের কাছে রাখুন। টিস্যু বা ওয়াইপের পরিবর্তে ব্লটিং পেপারগুলি অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, এতে ন্যাচারাল যে আর্দ্রতা তা চলে যায় না, জ্বালাও করে না।
এক্সফোলিয়েশন
ত্বক যেমনই হোক বা ঋতু যেটাই হোক না কেন এক্সফোলিয়েশন জরুরি, কারণ এটা রোমকূপের মুখ বন্ধ হওয়া রোধ করে, মৃতকোষ তুলে দেয় ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায় সবসময়। কিন্তু খুব হার্ড এক্সফোলিয়েশন নয়, এই সময় চাই হালকা স্ক্রাবিং। হালকা রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্ট দিয়ে ত্বকের মৃত কোষ আলতো করে তুলে ফেলুন এতে অয়েল এমনিতেই নিয়ন্ত্রিত হবে।
ঘরোয়া স্ক্রাবার
ঘরোয়া উপাদান দিয়ে স্ক্রাবিং করতে চাইলে চালের গুঁড়ো, চিনি, মধু, নারকেল তেল, দুধের সর, লেবুর রস, ময়দা, ওটমিল, কফি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন কম্বিনেশন করে। যেমন চালের গুঁড়ো, মধু আর দুধের সর মিশিয়ে হালকা হাতে সার্কুলার মোশনে স্ক্রাবিং করুন। লেবুর রস এবং চিনি দিয়ে করা যেতে পারে। ওটমল আর মধু মিশিয়েও স্ক্রাব করা যেতে পারে। সি সল্ট, জলপাই তেল এবং এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়েও স্ক্রাব করতে পারেন। তিন থেকে চার মিনিট স্ক্রাবিং করে ধুয়ে ফেলুন। সিরাম লাগিয়ে নিন।
গ্রীষ্মেও যদি ত্বকে বসন্ত চান
প্রচণ্ড গরমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে টোনার ব্যবহার করুন রোজ। ত্বকে জমে থাকা তৈলাক্ত উপাদান সরিয়ে দিতে টোনার ভাল কাজ করে। গোলাপ জল, নিমপাতা ফোটানো জল, কমলা লেবুর রস খুব ভাল ঘরোয়া টোনার। এছাড়া বাজারে ত্বক অনুযায়ী টোনার পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে হাইড্রেটিং মাস্ক লাগান সপ্তাহে তিনদিন। ট্যান রিমুভ করতে একটা লিগান প্যাক অন্তত সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন। সঙ্গে সানস্ক্রিন এবং ময়েশ্চারাইজার মাস্ট।
ট্যান রিমুভাল প্যাক
টম্যাটোর রস এক বড় টেবিল চামচ, টক দই মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া শসার রস এবং ক্বাথ এক বড় চামচ আর অ্যালোভেরা এক চামচ নিয়ে প্যাক করে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দুটোতেই খুব ভাল ট্যান রিমুভ হবে।
গরমে চুলের সমস্যা
গরমে আর বর্ষায় সবচেয়ে খারাপ দশা হয় চুলের। চুলের গোড়ায় ঘাম বসে মুখ বন্ধ হয়ে যায়, পরিবেশের ধুলো ধোঁয়া জমে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসের জন্ম হয়, চুলে দুর্গন্ধ হয় এবং সংক্রমণের কারণে চুল উঠতে থাকে। অতিরিক্ত তাপ লেগে চুল আর্দ্রতা হারায়, নির্জীব দেখতে লাগে।
এই সময় চুলে নানা সংক্রমণ হয়, রুক্ষ হতে থাকে। চুলের গোড়া চুলকায়। কাজেই রোদ থেকে এসে চুল ভাল করে শুকিয়ে চেষ্টা করুন শ্যাম্পু করে নিতে। রোজ না পারলেও এই সময় অন্তত চারদিন শ্যাম্পু করুন। কন্ডিশনার লাগান। শ্যাম্পুর পর চুল টাওয়েল দিয়ে চেপে একটু শুকিয়ে নিয়ে শুধু লম্বা অংশে কন্ডিশনার দিন। স্ক্যাল্পে দেবেন না। দশমিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এবার চুল মুছে হেয়ার সিরাম লাগিয়ে নিন। এটাও চুলের গোড়ায় দেবেন না।
অয়েল ম্যাসাজ
গরমে চুলে অয়েল ম্যাসাজ নিয়ে অনেকেই ভাবেন বুঝি চিটচিটে হয়ে যাবে কিন্তু তা নয় তেল লাগানো সবসময় চুলের জন্য খুব ভাল। চুলে পুষ্টির জোগান দেয় তেল। কিছু তেল রয়েছে যেগুলো গরম-উপযোগী যেমন আমন্ড অয়েল। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই। যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের ডগা ফাটার সমস্যা দূর হয়, চুল দ্রুত বাড়ে। চুলের লালচে, রুক্ষ-শুষ্ক ভাব দুর হয়। জোজোবা অয়েল হেয়ার ফলিকলের গঠন শক্ত করে। ফলে সহজে চুল ঝরে যায় না। আভোকাডো অয়েলে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ডি, ই। এই তেল চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখে ডগা ফাটার সমস্যা দূর করে। রাতে তেল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে শুয়ে পড়ুন সকালে স্নান করে নিন।
গরমে খুশকি
গরম মানেই চুলে খুশকির বাড়বাড়ন্ত। অতিরিক্ত তাপে চুলের গোড়া ঘামে, মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, এর সঙ্গে ধুলো-ময়লা জমে আটকে যায় চুলের গোড়ায়। যা খুশকি সৃষ্টিকারী জীবাণু ম্যালাসেজিয়া গ্লোবোসার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এর সঙ্গে গরমে আর্দ্রতার ফলে মাথার ত্বকেও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় ফলে ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়। এর থেকেই খুশকি তৈরি হয়। সেই কারণে তৈলাক্ত ত্বক যাঁদের, গরমে তাঁদের খুশকি বেশি হয়। এর থেকে শুরু হয় চুলকানি। চুল পড়ে, চুল ড্যামেজ হয়ে যেতে থাকে।
গরমে বাইরে থেকে ঘরে ফিরে চুল খুলে দিয়ে ফ্যানের নিচে কিছুক্ষণ বসুন। এতে চুলের গোড়ায় জমা ঘাম শুকিয়ে যাবে। এরপর শ্যাম্পু করে করে নিন। খেয়াল রাখুন চুলের গোড়ায় যাতে শ্যাম্পু লেগে না থাকে এতে খুশকি বাড়ে।
খুশকি কমাতে
ঘুমানোর আগে রাতে নারকেল তেল, অল্প জল এবং সঙ্গে অর্ধেক পাতিলেবুর রস মিশিয়ে চুলে মেখে রাখুন। এটা চুলে ডিপ কন্ডিশনিংয়ের কাজ করবে খুশকির সমস্যা কমবে।
অ্যালোভেরার রস চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এগুলো সপ্তাহে দু’দিন করুন।
টক দই আধকাপ, মেহেন্দিপাতা বাটা দু’ টেবিল চামচ, মেথি গুঁড়া এক টেবিল চামচ ও অর্ধেক লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে আধঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলুন।
গরমকালে চুলে নারকেলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এটি মাথায় রক্ত চলাচল বাড়ায়। নারকেলের দুধে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ ও ফ্যাট যা ড্যামেজ কন্ট্রোল করে, চুল মজবুত করে। এটা খুশকি দূর করতেও সহায়ক।
খুশকি খুব বেশি হলে কিটোকোনোজল যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
সাধারণ হেয়ারপ্যাক
পনেরো দিনে একটা হেয়ারপ্যাক চুলে অবশ্যই দিন। শুষ্ক চুলের জন্য ত্রিফলার গুঁড়ো, মেথি গুঁড়ো নিন এক টেবিল চামচ করে সঙ্গে আধকাপ টক দই, অ্যালোভেরার নির্যাস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগিয়ে রাখুন ৪৫ মিনিট। এরপর চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন।
এই সময় অতিরিক্ত চুল পড়লে হেনা নিন দু’ টেবিল চামচ, টক দই, একটা আমলকী বাটা, এক চামচ মধু, একটা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগিয়ে নিন। ৪৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
গরমের পোশাক-আশাক
গরমকাল মানেই টপ টু বটম মিনিমালিস্টিক সাজপোশাক, লুক, মেকাপ হেয়ারস্টাইল, জুতো, অ্যাক্সেসরিজ সব। কারণ ঢিলেঢালা পোশাকই তাপ প্রতিরোধ করবে। যদিও গরমে স্লিভলেস পরতেই কমফোর্ট মনে করেন অনেকে কিন্তু যতটা শরীর ঢাকা পোশাক পরা যায় ততটাই ভাল। এতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব খানিক রোখা সম্ভব।
গরমের ফেব্রিক মানেই সুতি। কটন বাই কটন, লিনেন বাই কটন, খদ্দর বা খাদি কটন, পিওর হ্যান্ডুলম কটন এবং পিওর লিনেন-এর কোনও বিকল্প নেই। ফ্যাক্স ফাইবার থেকে তৈরি লিনেন গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে। তাপ শোষিত হয় ফলে আরামাদায়ক এবং টেঁকসই। লিনেনের শাড়ি তো রয়েছেই এছাড়া লিনেনর ড্রেস, কুর্তি, কুর্তা, ওয়েস্টার্ন আউট ফিট, ইন্দো ওয়েস্টার্ন পোশাক, শার্ট, মিড লেংন্থ টপ, কাফতান টপ, লিনেন প্যান্টস গরমে বেশ কয়েকবছর ধরে ট্রেন্ডিং।
গরমে খাদি কটন খুব ব্রিদেবল ফেব্রিক এবং সবসময় ইন। খাদির কোনও বিকল্প নেই। খাদির কুর্তা, পাজামা, শর্ট শার্ট, শার্ট, রাউন্ড নেক টিজ, ড্রেস, কো-অর্ড সেট, ওভারসাইজড সাইড শার্ট, ব্লেজার, প্যান্টস ট্রেন্ডিং। খাদির নরম শাড়ি, হালকা সুতোর কাজে কম্বিনেশ ম্যাট কালারে বেশ স্টাইলিশ। গরমের পার্টি হোক বা বিয়ে বাড়ি, সব জায়গায় দারুণ মানানসই।
একধরনের রেয়ন ফাইবার খুব ট্রেন্ডে, সেটাকে ভিসকোসও বলে। কৃত্রিম সিল্কও বলে অনেকেই। এর তাপশোষণ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে। ঘাম অনেক কম হয়। খুব আরামদায়ক অফিস ওয়্যার, স্পোর্টস ওয়্যার হিসেবে খুব চলনসই।
হালকা পিওর ক্রেপ এবং শিফন গরমে স্টাইলিশ এবং আরামদায়ক। শিফন বা ক্রেপে লাইট প্রিন্ট খুব এলিগেন্ট লাগে দেখতে। এগুলোর একটা নিজস্ব টেক্সচারড ফিনিশ থাকে যা বেশ ইউনিক। এর ছোট্ট টিপ আর হালকা লিপস্টিকে গরমের লুক দারুণ হতে পারে।
লাইট ওয়েট ডেনিম সবসময় ইন। ডেনিম শার্ট, লুজ প্যান্ট, ওভার সাইজড জ্যাকেট, ক্রপ টপ, বোলেরো জ্যাকেট এগুলোর চাহিদা গরমে কমে না। এখন খুব ফাইন ফেব্রিকের ডেনিম পাওয়া যায়।
গরমকাল মানে ফ্লোরাল প্রিন্ট, স্ট্রাইপ। লাইট ফ্লোরাল প্রিন্ট উইথ টুইস্ট, জ্যামিতিক টেক্সচারড প্রিন্ট, অ্যানিমাল প্রিন্ট, পোলকা ডটস, স্ট্রাইপ, কাউ এবং লেপার্ড প্রিন্টও এই গরমে খুব ট্রেন্ডিং।
গরমের রং মানেই লাইট প্যাস্টেল টোন, ডুয়াল টোন, আর্দি শেড, সফট কুল আন্ডারটোন কালার প্যালেট। স্ট্রেট কালারে অবশ্যই হোয়াইট যে কোনও অবস্থায় গ্রহণযোগ্য। হালকা ধূসর, হালকা নীল, নীলচে ধূসর, নীলচে সবুজ, জলপাই সবুজ, হালকা সবুজ, হালকা ম্যাট ইয়েলো, মিন্ট গ্রিন, ব্লাশ পিঙ্ক, বেবি ব্লু, সি গ্রিন, ল্যাভেন্ডার, লাইট পিঙ্ক, ট্যান বেইজ, মাটির কালার, ডাস্টি রোজ, মিউটেড গ্রিন, লাইট টিল, লাইট গ্রে আন্ডারটোন, কুল ব্লু আন্ডার টোন, বেইজ বা ইয়েলো ওভারটোন ইত্যাদি গরমের ট্রেন্ডিং কালার প্যালেট।
গরমের সময় ফ্যাশন নিয়ে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন জেনারেশন ওয়াই। সুতির অথচ রংচঙে পোশাক পরতেই এই সময় সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তরুণীরা। ইনস্টা, ফেসবুক অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যাবে এই গরমে কেউ পরেছেন ক্রপ টপ আর লুজ ফিট লাইট ওয়েট ডেনিম। কেউ পরছেন শর্ট ড্রেস, ন্যুডুলস স্ট্র্যাপ শর্ট ড্রেস তো সাধারণ থেকে সেলিব্রিটি সবাইকে দেখা যায় পরতে।
ঢিলেঢালা প্যান্ট সঙ্গে ক্রুশের ব্রালেট উটরে হোয়াইট ট্রান্সপারেন্ট শার্ট বা লিনেন শার্ট এখন ভীষণ ট্রেন্ডিং। সঙ্গে কানে ছোট্ট টপ আর গলায় সরু সোনার চেন।
গরমে চিকনকারি খুব ইন। সাদা বা যে কোন প্যাস্টেল শেডের চিকনকারী শর্ট ড্রেস, শার্ট, ক্রপ টপ, সালোয়ার নজর কাড়বেই সবার।
ফুরফুরে হালকা পোশাক মানেই স্কার্ট এবং টপ বা শার্ট। গরমের জন্য উপযুক্ত। আজরাখ বা ভেজিটেবল ডাই প্রিন্টেড সুতির প্লিটেড লং স্কার্ট খুব চলনসই গরমে। হাঁটু পর্যন্ত প্লিটেড স্কার্টও খুব ইন। সুতির থেকে ভারী হলেও ডেনিম স্কার্টও বেশ আরামদায়ক। স্কার্টের দু-পাশে স্লিট এখন ট্রেন্ডে। সঙ্গে হালকা রঙের ক্রপ টপ বা শার্ট, বা টপ বা লুজ ফিট শর্ট শার্ট, পায়ে স্নিকার্স। ফর্মাল সাজের প্রয়োজনে সিল্কের স্ট্রেট ফিট কাটের স্কার্ট পরতে পারেন। ঢিলেঢালা টিশার্ট বা শার্টের নিচে টেনিস স্কার্ট গরমে ফ্যাশনপ্রেমীদের পছন্দের সাজ। এই ধরনের স্কার্ট মিনি এবং মিডি— দুই ধরনেরই হয়।
অ্যাসিমেট্রিকাল কাটসের ড্রেস এবং স্কার্ট, কুর্তি এ-গরমে ট্রেন্ডিং। সামনে, পিছনে, ডাইনে, বাঁয়ে কোনওদিকের সঙ্গে কোনওদিকের মিল নেই। এছাড়া প্যাস্টেল শেডের ম্যাক্সি ড্রেস বাওভার সাইজড শার্ট আর ঢিলেঢালা ডেনিম— এই গরমে পথে-ঘাটে আকছার চোখে পড়ে।