সমস্যায় পড়লেই পথ দেখান মুখ্যমন্ত্রী। সেটা প্রশাসনিক কাজেই হোক, কিম্বা পুরবাসীর পরিষেবা প্রদানের প্রশ্নে, অথবা সরকারি সংস্থার আয় বাড়ানোর দরকার পড়লে তিনি ছুটে যান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ফিরাদ (ববি) হাকিম, সর্বশেষ বোর্ডের প্রশাসক মণ্ডলীর প্রধান। তাঁর তিন বছরের সময়কালে, মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথে, তিলোত্তমার অনেক উন্নতির কথা, লোকের মুখে মুখে ফিরছে। কিছু কাজ, সবসময়ই বাকি থাকে, যা পরের বোর্ড এসে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন-বাইপাসে দুর্ঘটনা এড়াতে পথচারীদের জন্য সতর্কতামূলক প্রচার করল তিলজলা ট্রাফিক গার্ড
পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ বাস করেন। মোট আয়তন প্রায় ২০৫ বর্গ কিলোমিটার। শহরের মানুষকে পানীয় জলের জোগান দেওয়া, জঞ্জাল সাফাই, নিকাশি, রাস্তা সারাই, পথবাতি জ্বালানো-সহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বস্তি ও সংখ্যালঘু উন্নয়নের মতো বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি রূপায়ণ করতে হয় পুরসভাকে। কি করেছেন, কি স্বপ্ন দেখেছেন, কি প্রতিশ্রুতি দিতে চান ইত্যাদি অনেক কিছুই উঠে এল আলাপচারিতায়। সবসময় মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা, আমরা শাসক নয়, সেবক। নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবেই পরিচিতি দিতে খুশি হওয়া ববি হাকিম, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের মুখে, রূপা মজুমদার-এর ৬ প্রশ্ন-এর মুখোমুখি।
আরও পড়ুন-গৃহলক্ষ্মী কার্ড প্রকাশ করে আনন্দিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জানালেন টুইটারে
প্রশ্ন ১: কর আদায়ে ওয়েভার স্কিম কেন করতে গেলেন?
উত্তর: ভেবে দেখুন, ২০২০-র অক্টোবর। কি কভিদ পরিস্থিতি! মানুষের হাতে টাকা কই? তার ওপর, কিছু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। কর বাকি পড়ছে। ফলে টাকা রোজগার না হলে, মানুষকে পরিষেবা কিভাবে দেব? আবার জোর করে বকেয়া আদায়ও করা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর কর, টাকা জমছে। কলকাতা পুরসভায় এখন প্রায় ১৭,০০০ চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তাদের বেতনের চাপ আছে। ছুটলাম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি, তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে, পথ দেখালেন, কলকাতা পুরসভার ওয়েভার স্কিম, করে মানুষকে আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক। আবার একলপ্তে অনেকটাই উপার্জন হোক। এটা করতেই হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানুষের হাতের অবস্থা একদমই ভালো ছিল না। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। সব দিক ভেবেই, এই সিদ্ধান্ত। ১ অক্টোবর, ২০২০। চালু হল এই স্কিম। গত ৩১ মে শেষ হল ওই স্কিম। ৭ মাসে কর আদায় ৫৫০ কোটিরও বেশি। যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, রাজস্ব আদায়ের শহরের ৮টি ইউনিটই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন-তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারে কলকাতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেওয়া হল প্রধান ১০টি প্রতিশ্রুতি
এই ওয়েভার স্কিমে প্রথমে সুদ ১০০ শতাংশ ছাড় ছিল। ১০০ শতাংশ সুদ ছাড় দেওয়া হয়েছিল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরে তা মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একশো শতাংশ সুদ ছাড় দিয়ে বকেয়া কর আদায় হয় ৩১৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৭৩ টাকার। এরপর এপ্রিল ও মে মাসে সুদ ছাড়ের পরিমাণ ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়। ওই ২ মাসে বকেয়া কর আদায় হয় ৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৬৯ টাকা। এগুলির পাশাপাশি সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে বকেয়া কর জমা হয় ২১১ কোটি ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার ৯১৪ টাকা। সব মিলিয়ে বকেয়া কর জমা দিয়েছেন মোট ৭০ হাজার নাগরিক।
আরও পড়ুন-সম্পাদনার সঙ্গে অটিজম নিয়ে সচেতনতায় সংগীতা
প্রশ্ন ২: শেষ বোর্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ছিল, স্বচ্ছতা এনে অনলাইন পরিষেবা। সেটা কতটা এগিয়েছে?
উত্তর: লক্ষ, স্বচ্ছ পুর প্রশাসন। উদ্দেশ্য, মানুষ দালালের খপ্পরে না পড়ে, উৎকোচ না দিয়ে, ঘরে বসে, সথিকভাবে পাক, এটাই দেখা। তাই, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নাগরিকদের জন্য একাধিক অনলাইন পরিষেবা চালু করল কলকাতা পুরসভা। নির্মাণ নকশার অনুমোদন থেকে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট, নিকাশি সংযোগ, জন্মের শংসাপত্র বা ট্রেড লাইসেন্স— সবের জন্যই এ বার অনলাইনে আবেদন করা যাবে। বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ পেতে বা জলের ট্যাঙ্ক বসানোর জন্যও শীঘ্রই অনলাইনে আবেদন জানানো যাবে। মানুষকে বোঝাতে পেরেছি, দালালের কাছে না গিয়ে অনলাইনে আবেদন করুন। আমাদের কাছে পরিষেবা পাওয়াটা আপনাদের অধিকার।
লাইসেন্স, সম্পত্তিকর পরিষেবার মতো বিনোদন বিভাগের ক্ষেত্রেও নাগরিকদের সুবিধায় সার্বিক অনলাইন পরিষেবা চালু হয়ে গেছে। বিনোদনমূলক নতুন ব্যবসা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলে এত দিন কলকাতা পুরসভায় এসে আবেদন করতে হত। এখন, এই পরিষেবা অনলাইনে। শহরবাসীরা বাড়িতে বসেই পুরসভার ওয়েবসাইটে গিয়ে ফর্ম ভরে এই আবেদন করতে পারবেন। কলকাতায় কোনও রেস্তরাঁ, হোটেল, প্রদর্শনী, সাইবার কাফে, পার্লার, ক্লাব ইত্যাদির ব্যবসা চালু করতে এত দিন পর্যন্ত কলকাতা পুরসভায় এসে আবেদন করতে হত। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বার বাড়িতে বসেই পুরসভার ওয়েবসাইটে গিয়ে এর জন্য ফর্ম মিলবে। কষ্ট করে পুরসভায় আসতে হবে না।
আরও পড়ুন-মোদির রাজ্যের ‘আমিষ’ কীর্তি, কে কী খাবে আপনারা ঠিক করার কে? কোর্ট
আরও কিছু কাজ করতে হবে। ১০০ শতাংশ অনলাইন করার লক্ষে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে, প্রায় ৪২ কোটি টাকার দরপত্র ডাকার কাজ করা, সেটি দ্রুত চালু করে, ছোট ছোট কাজেও পুর অফিসে ছুটে আসার হয়রানি বন্ধ করা- এগুলো বাকি রয়েছে, যা পরের বোর্ড করবে। এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে করোনাকালে মানুষ ঘরে বসেই আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন-Abhishek Banerjee: অভিষেকের প্রশ্নের উত্তরে পর্দাফাঁস সংসদে, টিকা জালিয়াতি মানল কেন্দ্র
প্রশ্ন ৩: প্রশাসনিক ভাবনায় হঠাৎ ‘টক টু মেয়র’ কেন?
উত্তর: (একটু হেসে) কিছু মানুষ হয়ত এখনও ভাবেন, সরাসরি পুরসভায় আসা যায়না। বা ইচ্ছে থাকলেও আসতেই পারেন না। মেয়রের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায় না। অনেক অভিযোগ, মানুষ, জানাতেও সঙ্কোচ বোধ করেন। কিন্তু, আমাদের কাজ কি? মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। মুখ্যমন্ত্রী যেমন বলেন, মানুষের কাছে যাও। সেই ভাবনা থেকেই, সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট নম্বরে সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলার ব্যাবস্থা চালু করলাম। সরাসরি মেয়র শুনবেন, তাঁর শহরের মানুষের কথা। চালু হল, টক টু কেএমসি। শুধু,মানুষ যে এখানে ফোন করে কাজ শেষ, তাতো নয়। অভিযোগের ফোনের পর কি কাজ হল, সেটাও ফোনেই সেই মানুষকে জানিয়ে দেওয়াও শুরু হয়েছে। এবং সেটি ফেলে রাখা নয়, তৎক্ষণাৎ কাজ শুরুর নির্দেশ ছিল। অনুষ্ঠান শুরু হতেই হিট, আসতে থাকে একের পর এক ফোন। দরকারে দফতরের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যানেজারেরা অভিযোগকারীর কাছে গিয়ে সমস্যা সমাধান করবেন, এমন নির্দেশই দেওয়া ছিল।
এই ভাবনাকে আগামীর বোর্ড আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। আসবে পুরসভার নতুন অ্যাপ, সঙ্গে হয়াটসআপ। নাম হতে পারে, কন্টাক্ট কে এম সি। যিনি মেয়র হবেন, তাঁর টেবিলের সামনে কম্পুতার স্ক্রিন থাকবে। সেখানে ভেসে উঠবে মানুষের কথা, অভিযোগ। চলে যাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। পাশাপাশি, কোন দিন আপনার এলাকায় জল বন্ধ থাকবে, পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কর্মীরা কখন আপনার পাড়ায় ময়লা তুলতে আসবেন, জেনে যাবেন সে সবও। এই লক্ষ্যে কলকাতা পুরসভা তৈরি করছে এই জিআইএস অ্যাপ। সুষ্ঠু ভাবে সে সব করার জন্য পুরসভার প্রতিটি বিভাগের ডিজিটাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। চালু হয়েছে অনলাইন সিস্টেম। তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতেই ওয়েব নির্ভর জিআইএস অ্যাপ চালু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।
আরও পড়ুন-বাউন্সি পিচের মহড়া শুরু করে দিলেন হিটম্যান
প্রশ্ন ৪: জল জমা অনেকটাই কমেছে, অবশ্যই। কিন্তু কিছু কিছু পকেট তো রয়েছে এখনও, যেখানে জল জমা একটা দুর্বিষহ অবস্থা। বিশেষ করে উত্তর কলকাতার কিছু জায়গা, যাদবপুর, বেহালার কিছু এলাকা। কিকি হয়েছে, আর এই এলাকাগুলোর সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি কি?
উত্তর: ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার সমস্যা সমাধানে নানা জটিলতা আছে। ভেবে দেখুন, শহরটা ব্রিটিশ আমলের। আমি আমার তিন বছরে, কলকাতায়, নতুন ১২ টি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করেছি। আসলে দেখবেন, কয়েক বছরে, নানা কারণে, বৃষ্টির চরিত্র বদলে গিয়েছে। আগে ৩ দিনে যা বর্ষণ হত, এখন, ঝুপ করে ৩ ঘণ্টায় সেই পরিমাণ বৃষ্টি হয়ে, জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। উত্তর কলকাতার যে জায়গার কথা বলছে, সেটা মুলত আমহারস্ত স্ট্রীট, ঠনঠনিয়া এলাকা। ৫০ বছর ধরে ওখানের নিকাশি নালায় পলি তোলার কাজ হয়নি। সেটা বিরাট কাজ, অনেক টাকার ব্যাপার। এবার সেটা করাতে হবে, ঠিক আছে। সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে, শহরের চারদিকের সব খাল কাটানর ব্যাবস্থা করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা চলছে, এই যে কয়েক ঘণ্টায় হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি, এটা সামলাতে, নিকাশিকে কিভাবে প্লানিং করা যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, শুধু খিদিরপুরের জন্য, আরও একটি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন করতেই হবে, ঠিক আছে। একটি হয়েছে কবিতিরথে। আর একটি হবে নবাব আলি পার্কে। ফলে ৭৭ ও ৭৮ ওয়ার্ডের মানুষের আরও উপকার হবে। টালিগঞ্জ ও বেহালার কিছু সংযোজিত এলাকায় মেট্রো রেলের সম্প্রসারনের কাজ চলার ফলে, খালগুলো বুজে আছে, পলি পড়ে। বেহালায় কে ই আই পি-র কাজ চলছে। এগুলো শেষ হলেই জল যন্ত্রণা আরও অনেকটাই কমবে। খালগুলো দ্রেজিং করাতে হবে আবার।
আরও পড়ুন-শিল্ডের শেষ চারে রেলওয়ে এফসি
আসলে নিকাশি সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পুরসভার নিজস্ব নতুন মানচিত্র থাকা দরকার। পুরনো পদ্ধতিতে রাস্তা খুঁড়ে নিকাশির পাইপলাইন চিহ্নিত করে তার পরে মেরামতি করা সময়সাপেক্ষ। সারা শহরের নিকাশি নালার মানচিত্র তৈরি করবেন পুর নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা। মানচিত্র আছে। কিন্তু সেটি তৈরির পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের নিকাশির বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। পুরনো সেইসব মানচিত্র এখন আর কাজে আসবে না। অন্য দিকে, পুরসভার সংযোজিত ৪৪টি ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে নিকাশি নালা সংক্রান্ত কোনও মানচিত্রই কখনও তৈরি করা হয়নি। এবার নতুন বোর্ড এই কাজগুলো করবে। বিভিন্ন বরো কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বরো এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিকাশির বর্তমান পরিকাঠামো কেমন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়াও ওই ওয়ার্ডে কত জমি রয়েছে এবং গত কয়েক বছর ধরে সেখানে সর্বাধিক বৃষ্টির পরিমাণ কত, তা-ও নথিভুক্ত করা হবে। এ ছাড়াও ওই ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় নিকাশি নালা রয়েছে, তা দেখা হবে। এই তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হবে ওই এলাকার নিকাশি-মানচিত্র। ওই ওয়ার্ডের নিকাশির পরিকাঠামো বর্তমানে কী রকম এবং বৃষ্টিতে জল জমলে তা ওই নিকাশি নালার মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারবে কি না, তা-ও দেখবেন পুর আধিকারিকেরা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জল কোন নিকাশি নালা ও পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে কোথায় গিয়ে পড়ছে, মানচিত্রে সেই তথ্যও ধরা থাকবে।
আরও পড়ুন-কলকাতার ভোট শেষ হলে হবে অন্য পুরসভার
প্রশ্ন ৫: পানীয় জলের সমস্যা যে অনেকটাই মিটিয়েছে এই পুরবোর্ড, সেটা যেমন ঠিক। আবার অন্যদিকে কলকাতা জুড়ে মাথা তুলছে একের পর এক বহুতল। এক বহুতলেই অনেক লোকের বাস এখন। অর্থাৎ জন্ঘনত্ত দ্রুত বাড়ছে। ভেবেছেন কিছু?
উত্তর: আমরা মমতা ব্যানার্জি- র সৈনিক। মানুষের জন্য ভাবনা সবসময় থাকে আমাদের। আমি আমার সময়, পানীয় জলের ২৮ টি বুস্তার পাম্পিং স্টেশন করেছি। আমার আগে, কলকাতায় রোজ ৪২০ মিলিয়ন গ্যালন বিশুদ্ধ পানীয় জল উতপাদন হত। সেটা বাড়িয়ে ৪৯০ মিলিয়ন গ্যালনে নিয়ে গিয়েছি। ফলে, লোকসংখ্যার হিসেবে, মাথাপিছু জলের চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখন, বাইপাস ধরে এবং বেহালা- যাদবপুরে কিছু পকেটে নিশ্চয় জলের সমস্যা রয়েছে। কোথাও শুধু নল্কুপ। কোথাও নল্কুপের সঙ্গে মিষ্টি জল, এভাবে মানুষ ব্যাবহার করছেন। নতুন বোর্ডের প্রথম ভাবনাই আছে, এই এলাকায় কাজ করা। বিশেষ করে, দক্ষিণ কলকাতার ঢালাই ব্রিজের কাছে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হবে। ধাপা পাম্পিং স্টেশনের ক্ষমতা, ৩০ থেকে ৫০ মিলিয়ন গ্যালনে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। ঢালাই ব্রিজের কাছে প্রকল্পটি হলে ওই এলাকা থেকে মাটির নিচের জল আর তুলতে হবে না। ভৌম স্তরে চাপ খুব কমে যাবে।
আরও পড়ুন-পরান যায় ভরিয়া রে…
প্রশ্ন ৬: সংস্কৃতির রাজধানী কলকাতা। আমাদের এই শহর, সত্যি কত্ত সুন্দর। দেখতেও, সংস্কৃতির দিক থেকেও। পুরনো সব স্থাপত্য ঘিরে আছে শহরকে। এই নান্দনিকতাকে টেনে নিয়ে যেতে, নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে আসতে তো মেয়রের ওপর অনেক দায়িত্বও বর্তে যায়। তাই না?
উত্তর: আপনাকে একটা উদাহরণ দিই। এই আম্ফানের সময়, কয়েক হাজার গাছ পড়ে যায়। এই বোর্ড-এই উদ্যোগ নিয়ে শহর জুড়ে ৫০ হাজার গাছের চারা পুঁতেছি। সামান্য বড় হয়েছে। সবুজের মেলা দেখতে আরও দু-এক বছর সময় লাগবে। আমাদের লক্ষ্য, কলকাতার দূষণ কমানো। কলকাতার অবস্থান যদি দেখেন, সমুদ্র থেকে অনেক দূরে। একই অবস্থা দিল্লির।
talk to Bobby Hakim
তুলনায় দেখুন, সমুদ্রের কাছে বলে চেন্নাই আর মুম্বাই এর দূষণের মাত্রা অনেক কম। আসলে সাগর অনেকটাই কার্বন কণা, দুষিত বায়ু টেনে নেয়। আর হ্যাঁ, আমার শহর দেশের সংস্কৃতির রাজধানী। এখানের ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের কাজ, দায়িত্ব। ভাবনা রয়েছে শহরের সাংস্কৃতিক পর্যটনকে আরও তুলে ধরা। শহরে নতুন কালচারাল হাব তৈরি করা। এ আমাদের লিভিং সিটি অব জয়। একে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করতেই হবে।